বোলারদের ধারাবাহিক ব্যর্থতা
‘সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে?’
শিরোনামে উল্লেখ করা আইয়ুব বাচ্চুর এই বিখ্যাত গান শোনেননি কিংবা নিজেদের আড্ডায় গাননি এমন মানুষ বাংলাদেশে হয়ত পাওয়াই যাবে না। প্রিয় মানুষকে উৎসর্গ করে লেখা এই গান আজও মানুষের মুখে মুখে ঘোরে। সেই গানটাই এবার হয়ত বাংলাদেশ জাতীয় দলের জন্য আপনি চাইলে গাইতেই পারেন। যে বোলিং লাইনআপ নিয়ে বিশ্বকাপের আগে এত আশা-ভরসা, সেই বোলিংটা যে রীতিমত অচেনাই হয়ে গেল বাংলাদেশের জন্য।
বিশ্বকাপের আগে অগাস্ট মাসের এক পরিসংখ্যান বাংলাদেশের আশার পারদ চূড়ায় নিয়ে গিয়েছিল। যেখানে দেখা গিয়েছিল, ২০১৯ বিশ্বকাপের পর থেকে সারাবিশ্বে বোলিং বিভাগে বাংলাদেশ রীতিমত দাপট দেখিয়েছে। বোলিং লাইনআপের হিসেবে পেস বোলিং এর বিচারে টাইগার পেসাররা ছিলেন ২য় স্থানে। আর স্পিনে বিশ্বসেরার তকমাই জুটেছে বাংলাদেশের।
বিজ্ঞাপন
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৪ বছরে বিশ্বের সেরা পেস বোলিং লাইনআপ পাকিস্তানের। নাসিম শাহ, শাহিনশাহ আফ্রিদি, হারিস রউফদের নিয়ে গড়া পাকিস্তানের পেস ইউনিট ২০১৯ বিশ্বকাপের পর থেকে ২৯ ম্যাচে ২৭ গড়ে ১৬৩ উইকেট নিয়েছে। তালিকার পরের নামটাই বাংলাদেশের। ১৯ বিশ্বকাপ পরবর্তী ৪৫ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের পেসাররা নিয়েছেন ১৮৯ উইকেট। যেখানে ২৮.৩৩ গড় ও ৩১.৫৫ স্ট্রাইক রেটে উইকেট তুলেছেন তাসকিন-মুস্তাফিজ-হাসান মাহমুদরা।
কিন্তু এই বিশ্বকাপে সেই দৃশ্যটাই যেন আমূল বদলে গিয়েছে। প্রতিটা উইকেট পেতে রীতিমত সংগ্রাম করতে হয়েছে টাইগারদের। কী পেস, কী স্পিন। কোথায় যেন সুখবর নেই। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত হতাশই করেছে বারবার। ৬ ম্যাচের মধ্যে ২বার প্রতিপক্ষকে অলআউট করতে সক্ষম হয়েছে টাইগার বোলাররা।
উইকেটপ্রতি রান খরচের হিসেবে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল অবস্থানে আছেন শেখ মেহেদি। ৬ উইকেট পাওয়া শেখ মেহেদি প্রতিটি উইকেট পেতে খরচ করেছেন ১৮.৫০ রান। আছেন বিশ্বকাপের গড় তালিকার ৮ম স্থানে।
এরপরে মেহেদি মিরাজ। তার গড় ৩৪। গড়ের হিসেবে বিশ্বকাপে বোলারদের মধ্যে ৪১তম তিনি। এরপরেই সাকিব আল হাসান। সেটাও তালিকার ৪৫ নাম্বারে। প্রতি উইকেট পেতে খরচ করেছেন ৩৮.৮৫ রান।
তালিকায় এরপরেই হাসান মাহমুদ। তিনি আছেন ৫০ নম্বরে। তার গড় ৪৪। ৪৪.৭৫ গড় নিয়ে শরীফুল ইসলাম আছেন ৫১ নম্বরে। আবার ৫১ এর বেশি গড়ে তাসকিন আছেন ৫৬তম স্থানে। আর সবার পেছনে আছেন মুস্তাফিজ। বিশ্বকাপে ৪ উইকেট নিয়েছেন এই কাটার মাস্টার। প্রতি উইকেটের জন্য খরচ করেছেন ৮০.৫০ রান। তিনি আছেন তালিকার ৬৬তম স্থানে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার ভিড়ে বারবারই চাপা পড়ে যাচ্ছে বোলারদের ধারাবাহিক ব্যর্থতার আলাপ। যে পিচে বাংলাদেশের ব্যাটাররা রান করতেই হিমশিম খাচ্ছেন, সেই একই পিচে উদারতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন শরীফুল-তাসকিনরা। মুস্তাফিজ স্লো-পিচেও এখন অকার্যকর। বোলিং ইউনিটের সেই চিরচেনা ধার যেন এখন পুরোপুরি অচেনা।
জেএ