বিশ্বকাপ যেন বাংলাদেশ ওপেনারদের দুঃস্বপ্ন। হান্নান সরকার, শাহরিয়ার নাফিস থেকে শুরু করে তামিম ইকবাল কিংবা হালের লিটন দাস-তানজিদ তামিম। বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি কেউই। এখন পর্যন্ত কখনোই বিশ্বকাপে নিজেদের কাজটা ঠিকভাবে করতে পারেননি টাইগার ওপেনাররা।  

পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ আসরে নিজেদের বিশ্বকাপ আসরের অন্যতম বাজে পারফর্ম্যান্স উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস এবং তানজিদ হাসান তামিম। ২৪ বছর আগে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ওপেনার ছিলেন মেহরাব হসেন অপি এবং শাহরিয়ার হোসাইন কিংবা খালেদ  মাসুদ পাইলট। রান তোলার দিক থেকে তাদের চেয়েও পিছিয়ে বর্তমান ওপেনাররা। 

১৯৯৯ আসরে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেওয়া বাংলাদেশ খেলেছিল মোট পাঁচ ম্যাচ। এর মাঝে কেবল একটি ইনিংসে কোন রান যোগ করার আগেই ভাঙে ওপেনিং জুটি। সেবার ৫ ম্যাচ থেকে ৯৩ রান করেছিলেন টাইগার ওপেনাররা। রান এসেছিল ১৮.৬ গড়ে। প্রতিপক্ষ এবং নিজেদের সামর্থ্যের বিচারে সেবার বেশ বড় রকমের আশাই দেখিয়েছিলেন বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি। 

প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি বিচারে ২০০৩ বিশ্বকাপটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বাজে অধ্যায় ছিল। ৬ ম্যাচের কোনটিতেই জয় আসেনি। হারতে হয়েছিল কানাডার কাছেও। সেবার এক ম্যাচে কোন রান না করেই ভেঙেছিল ওপেনিং জুটি। চামিন্দা ভাসের হ্যাটট্রিকের দিনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। ৬ ম্যাচে টাইগার ওপেনাররা করেছিলেন ৯০ রান। গড় ঠিক ঠিক ১৫। 

২০০৭ বিশ্বকাপে তারুণ্যনির্ভর এক দল নিয়ে হাজির হয়েছিল বাংলাদেশ। ক্রিকেটে তামিম ইকবালের উত্থানটাও হয় সেবার। তবে বিষ্ময়কর ব্যাপার, সেই বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের ওপেনারদের কাছ থেকে ভাল কিছু দেখা যায়নি। ৯ ম্যাচ খেলে মাত্র ১৯.১১ গড়ে রান তুলেছেন টাইগার ব্যাটাররা। রান উঠেছিল মাত্র ১৭২। তবে সেবার কোন ইনিংসে রানের খাতা খোলার আগে উইকেট পড়েনি। সর্বনিম্ন ১ রানে ঘটেছিল ওপেনিং জুটি ভাঙার ঘটনা। 

বাংলাদেশের সেরা ওপেনিং জুটি ধরা হয় ইমরুল কায়েস এবং তামিম ইকবালের জুটিকে। কেন এমন মন্তব্য, তার প্রমাণ ২০১১ বিশ্বকাপ। সেবারেই প্রথম ২০ এর বেশি গড়ে রান তুলেছিলেন তারা। দুইবার শুন্য রানে আউট হওয়ার ঘটনা থাকলেও গড় ছিল ২৪ এর বেশি। সেটাই অবশ্য ২০১৫ বিশ্বকাপে ১৫.৩৩ এ নেমে আসে। 

২০১৯ বিশ্বকাপেই  ব্যাট হাতে বাংলাদেশকে ভাল কিছু দিতে পেরেছেন দেশের ওপেনাররা। ৮ ম্যাচ খেলতে নেমে ২৭৬ রান উপহার দিয়েছিল তামিম-সৌম্য জুটি। সেবার ৩৪.৫ গড়ে রান তুলেছিলেন দুই ওপেনার। কোন ম্যাচেই শুন্য রানে ওপেনার আউট হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। 

এরপরেই ২০২৩ বিশ্বকাপ। যেখানে এখন পর্যন্ত একেবারেই ব্যর্থ বাংলাদেশের ওপেনাররা। ৭ ম্যাচে লিটন দাস এবং তানজিদ তামিম মিলে তুলেছেন ১৭৫ রান। ম্যাচপ্রতি এসেছে ২৫ রান। যদিও ভারতের বিপক্ষে ৯৩ রানের জুটি সরিয়ে নিলে তা অনেকটাই নিচে নেমে আসে। ৬ ম্যাচে গড় নেমে আসে ১৩.৬৬ এ। 

ওপেনারদের এমন ব্যর্থতায় খুব একটা ভাল অবস্থানে নেই বাংলাদেশও। এখন পর্যন্ত শেষ হওয়া ৬ ম্যাচের মধ্যে ৫টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। সেমিফাইনালের স্বপ্ন বাদ দিয়ে এখন খেলতে হচ্ছে ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশ নেওয়ার আশায়। তবে সেটাও যে খুব একটা সহজ হচ্ছেনা, তা বলাই বাহুল্য। 

জেএ