শিরোনাম দেখে প্রথমেই ভাবতে পারেন কমলা আবার কারা। একটু খোলাসা করাই যাক তাহলে, শনিবার বিশ্বকাপে নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের কাছে ৮৭ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ দল। আর নেদারল্যান্ডসের জার্সি কালার কমলার রঙে আবৃত রঙিন। সে কারণেই বলা কমলার লজ্জা। ম্যাচে হার-জিত তো থাকবেই। তবে সেটাকে কি লজ্জার বলা যায়!

অবশ্য লজ্জার না বলেও উপায় নেই। পরিসংখ্যান বলুন কিংবা র‍্যাঙ্কিং, নেদারল্যান্ডসের থেকে ঢের এগিয়ে টাইগাররা। তবুও ৮৭ রানের বড় পরাজয় বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে, যা ভক্ত-সমর্থকরাও মানতে পারছেন না। যে কারণে অনেকে বলছেন লজ্জার, কেউবা বলছেন শোচনীয়। দেশ থেকে হাজার হাজার ভক্তদের চোখের পানির জনসমুদ্র দেখল ইডেন গার্ডেন্স।

বিশ্বকাপের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগে আশার বেলুন ফুলিয়ে ঢাকা ছেড়েছিল সাকিব আল হাসানের দল। তবে প্রথম পাঁচ ম্যাচ পর সেই বেলুন যায় চুপসে, এরপর সবশেষ গতকাল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে পরাজয়ের মাধ্যমে ব্যর্থতার ষোড়োকলা যেন পূর্ণ করেছে টাইগাররা। এমন হারই কি প্রাপ্য ছিল সাকিবদের জন্য? মাঠের বাইরের নানা ইস্যু নিয়ে দায়টার বড় অংশ যাচ্ছে অধিনায়কের কাঁধে। দর্শকদের সিংহভাগ মানুষই এমনটা মনে করেন।

তবে বাংলাদেশ দল কি এতটাই খারাপ, যে নেদারল্যান্ডসের কাছে হার মানতে হবে। সারাদিন কাজ শেষে চায়ের দোকানে বসে খেলা দেখা ব্যক্তি, কিংবা সারাদিন ক্লান্ত শ্রান্ত শেষে বাসায় ফিরে টিভি সেটের সামনে বসা এক রাশ স্বপ্ন নিয়ে খেলা দেখতে বসা দর্শতদের জন্য এটা এক কালো রাতই ছিল। তবে কিছু দর্শকদের বাক্য আবার এমন, 'যাদের ভালো সময়ে ছিলাম, তাদের খারাপ সময়ে বা কি করে যাই ছেড়ে'।

এমন পরাজয়ের পর অবশ্য মুখ খুলেছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক ক্রিকেটাররাও। ঢাকা পোস্টকে সাবেক অধিনায়ক রাজিন সালেহ বলছিলেন, 'খেলায় হার জিত থাকতেই পারে। তবে এই হারটা আমরা কেউই আশা করিনি। ভালো ক্রিকেট খেলিনি, আমরা তাড়াহুড়ো করেছি শুধু। এটা আপসেট গেম আমার কাছে।'

তিন নম্বরে খেলা নাজমুল হোসেন শান্তও হয়েছেন ব্যর্থ, তাকে নিয়ে রাজিন বলেন, 'শান্তর সমস্যা আসলে তার প্লান অনুযায়ী বল করছে প্রতিপক্ষ। শান্তর সাথে আমার মনে হয় একটু কথা বলুক টিম ম্যানেজমেন্ট। শান্তকে মোটিভেট করলে হয়তো ফিরতে পারবে।'

সাকিবের দায় কি সব। এছাড়া এখান থেকে উত্তরণের উপায় কি এমন প্রশ্নে রাজিন বলেন, 'অধিনায়কের সব দোষ হবে এটা আসলে ঠিক না, কখনো মানতে পারি না। আর আজকে কি বা রান ছিল যে করা সম্ভব ছিল না। এটা অধিনায়কের দোষ না, সকলের দোষ। বাংলাদেশের ব্যাটিং বিশ্বকাপে কলাপ্স। এটার কারণ ঘরোয়া ক্রিকেটে রান নেই মাঠে, তিন দিনে শেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। ঘরোয়া নিয়ে অনেক কাজ করা উচিত। তাহলে রান করা শিখকে ক্রিকেটাররা। ঘরোয়াকে উন্নয়ন করা। আমাদের যদি উন্নতি করতে হয় ট্রু উইকেট করতে হবে। লাইক বগুড়া, রাজশাহী। সাথে আম্পায়ারিং ভালো করতে হবে। মাঠে ভুল আউটের শিকার হচ্ছে আবার কখনো আউট দিচ্ছে না। যে কারণে এই দুই জায়গায় উন্নতির প্রয়োজন।'

এদিকে সাবেক ক্রিকেটার অলক কাপালি এই হার নিয়ে বলেন, 'নেদারল্যান্ডসের সাথে হার আমাদের জন্য খারাপ বলব। এই যে ব্যাটিং কলাপ্স এর কারণ মনে হয় পজিশন গুলোই ঠিক নাই, কে কোথায় খেলবে। প্রতিটি দলের দিকে তাকান সবারই টপ তিন পজিশন কিন্তু ফিক্সড, শুধু আমাদের নেই। আমাদের সমস্যা হচ্ছে তিন পজিশন থেকে কোনো রান না আসা, কে ব্যাট করবে সেখানে সেটাই কনফার্ম না।'

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে উপরের খেলানোর বিষয় নিয়ে কাপালি বলেন, 'আমার কথা হলো যে ফর্মে আছে তাকে কেন উপরে ব্যাটে দিচ্ছি না। যেমন রিয়াদ রান করলো ৬ নম্বর পজিশনে পরে আবার নামাল ৭ নম্বরে। কেন তাকে উপরে খেলানো হলো না। যখন উইকেট পড়ছিল তখন তাকে পাঁচ নম্বরে আনতে পারতাম। হয়তো অন্য রকম কিছু হতে পারত, সেটেল ডাউন নেই কোনো।'

কলকাতার উইকেট নিয়ে কাপালি বলেন, 'গতকালে উইকেট কিন্তু একটু ডেমেজ ছিল। সেক্ষেত্রে দ্রুত যখন ৫ উইকেট পড়ে গেল তখন সবার মনে হলো টার্গেট ৩০০+। আমরা তো প্রথম থেকেই ভালো খেলিনি। প্রথম দশ ওভার গুরুত্বপূর্ণ, এসময় উইকেট পড়ে গেলেই দাঁড়ানো কঠিন হয়ে যায়। শুরুটা ভালো হলে এমন হতো না।'

অধিনায়কের দায় কেমন দেখছেন প্রশ্নে কাপালি বলেন, 'সব দায় সাকিবের না। ও চেষ্টা করছে পারছে না, তারমানে সব দায় তার এমন না। খেলোয়াড় তো আরো আছে। দায়িত্ব আছে তার তবে একা তো সব দায়িত্ব না। টিম হারলে সবার দোষ, জিতলে সবার জন্যই ভালো। একজনকে দোষারপ করলে তো সব ঠিক হয়ে যাবে না। সাকিব তো সেরা এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, কয়েকটি ম্যাচ খারাপ গেছে। সে কিন্তু পারফর্মার, যা এখন হচ্ছে না। আমরা এখনো খারাপ দল হয়ে যায় নি, সামনের তিনটা ম্যাচ জেতা দরকার। কে আছে না আছে সেটা না দেখে এগিয়ে যাওয়া উচিত।'

সাবেক অধিনায়ক পাইলট অবশ্য কথা বলেছেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে নিয়ে। দেশের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে উপস্থিত হয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন কোচের। কোচের নিয়োগকে তিনি বলছেন, এটা বিসিবির প্রেস্ক্রিপশন। 

‘আমি শুরু থেকেই বলে আসছিলাম, হাথুরুসিংহে যে কোচ শ্রীলঙ্কা থেকে বিতাড়িত হয়েছেন, তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে খুব খারাপভাবে বিদায় নিয়েছেন। তাকে ওভার টাকা দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। আর এত টাকা দিয়ে নিয়ে আসার মানেই বোঝা যায় যে, কেউ না কেউ পেছন থেকে প্রেসক্রিপশন বানিয়েছে। তোমাকে আমরা ডাবল টাকা দিব, পেছন থেকে আমরা যেভাবে বলব, সেই জিনিসটা তোমাকে করতে হবে।’ 

কোচের বেতন প্রসঙ্গও উঠে এসেছিল সাবেক অধিনায়ক পাইলটের কথায়, ‘আমি ওয়ার্ল্ডকাপের শুরু থেকেই বলছিলাম, এই কোচকে আনা ভাল হয়নি। এটা টিমের জন্য ভাল সাইন না। আমাদের এতবড় কোচের দরকারও নাই। ১০ টাকার কোচকে কেন ৩০ টাকা দিয়ে আনা হবে। আমার মতে এটা ভাল হয়নাই। অন্যান্য দলগুলোর দল ঘোষণার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের প্রস্তুতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সাবেক এই ক্রিকেটার। 

এসএইচ/জেএ