চলতি বিশ্বকাপেই সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড গড়েছিল পাকিস্তান। সেদিন তারা শ্রীলঙ্কার দেওয়া ৩৪৫ রান টপকে গিয়েছিল। এবার তার চেয়ে আরও বড় লক্ষ্য পেরোনোর পথেই ছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু রাচিন রবীন্দ্র’র সেঞ্চুরি এবং ড্যারিল মিচেল ও জিমি নিশামের ফিফটির পরও জয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়েই হতাশায় পুড়তে হলো কিউইদের। ফলে অস্ট্রেলিয়ার নেওয়া ৩৮৯ রান তাদের নাগালের বাইরেই থেকে গেল। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে প্যাট কামিন্সের দল ৫ রানে জিতেছে।

শেষ ওভারে নিউজিল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৯ রান। মিচেল স্টার্কের প্রথম বলে সিঙ্গেল রানের পর, দ্বিতীয় ডেলিভারিতে ওয়াইড ও চার মিলিয়ে জয়ের স্বপ্ন চাঙা হয় কিউইদের। পরবর্তী দুই বলে নিশামের দুটি শটই ছিল চারের বাউন্ডারি পাওয়ার মতো। অজি ফিল্ডাররা দারুণ প্রচেষ্টায় দু’দফায় সেখানে দুটি করে রান ঠেকিয়েছেন। শেষ তিন বলে ৩ রান নিতেই এক উইকেট হারানোয় আর বিশ্বরেকর্ড গড়া হয়নি টম ল্যাথামের দলের।

জয় থেকে ৫ কদম দূরত্বে নিউজিল্যান্ড থেমেছে ৩৮৩ রানে। ধর্মশালায় এদিন অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড মিলে তোলে ৭৭১ রান। যা বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। চলতি আসরেই দিল্লিতে বিশ্বকাপ সর্বোচ্চ ৭৫৪ তুলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কা। তাদের সেই রেকর্ড আজ কামিন্স-রবীন্দ্ররা ছাড়িয়ে গেছেন।

টানা দুই হারে বিশ্বকাপ শুরু করা অস্ট্রেলিয়া এ নিয়ে পরবর্তী চার ম্যাচেই জিতে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ফলে শঙ্কা ছাপিয়ে তারাও সেমিফাইনালে ওঠার দৌড়ে ভালোভাবেই টিকে থাকলো। এদিন আগে ব্যাট করে কিউই বোলারদের ওপর রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছে অজি ব্যাটাররা। শুরু থেকেই বোলারদের চোখেমুখে অন্ধকার ছড়িয়ে তাদের দৌড়টি ছিল সাড়ে চারশ’র দিকে। ১০ ওভারে একশ এবং ২৩ ওভারে দুইশ রানের পর সেই লাগাম কিছুটা হলেও টেনে ধরেন গ্লেন ফিলিপস ও ট্রেন্ট বোল্টরা। শেষ পর্যন্ত ট্রেভিস হেডের সেঞ্চুরি ও ডেভিড ওয়ার্নারের ৮১ রানে ভর করে অস্ট্রেলিয়া বড় সংগ্রহ দাঁড় করায়।

রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ৩১ বলেই পঞ্চাশ তুলে ফেলেন দুই কিউই ওপেনার ডেভন কনওয়ে ও উইল ইয়ং। তবে জশ হ্যাজলউড পরপর দুই ওভারে দুজনকে বিদায় করে দিলে নিউজিল্যান্ডের রানের গতি কিছুটা কমে আসে। এরপর নিউজিল্যান্ডকে মূলত জয়ের পথে ধরে রাখেন রাচিন রবীন্দ্র। তিনে নামা এই বাঁ-হাতি ব্যাটার প্রথমে ড্যারিল মিচেল, এরপর অধিনায়ক টম ল্যাথামকে নিয়ে দুটি পঞ্চাশোর্ধ রানের জুটি গড়েন।

সতীর্থদের আসা–যাওয়া দেখলেও একপ্রান্তে রবীন্দ্র টিকেছিলেন ৪১তম ওভার পর্যন্ত। উদ্বোধনী ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলা এই বাঁ-হাতি এই দফায় থামেন ১১৬ রানে। প্যাট কামিন্সকে তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে মারনাস লাবুশেনের ক্যাচ হয়েছেন তিনি। তার আগে ৮৯ বলের ইনিংসটিতে মারেন ৯টি চার ও ৫টি ছয়। বিদায়ের আগে রবীন্দ্র কিউইদের হয়ে বিশ্বকাপে দ্রুততম (৭৭ বল) সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন।

রবীন্দ্র আউট হওয়ার পর নিউজিল্যান্ডকে শেষের রোমাঞ্চে নিয়ে যান নিশাম। রান আউট হওয়ার আগে ৩টি করে চার ও ছয়ে ৩৯ বলে ৫৮ রান করে যান এই বাঁ-হাতি ব্যাটার। এছাড়া ৫১ বলে ৫৪ রান করেছেন ড্যারিল মিচেল। অজিদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন অ্যাডাম জাম্পা, এছাড়া দুটি করে শিকার করে হ্যাজলউড ও কামিন্স।

এর আগে দিনের শুরুতে ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.২ ওভারে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ৩৮৮ রানে থামে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। শেষ দিকে এক ওভারে তিন উইকেট তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে থামিয়ে দেন মূলত ট্রেন্ট বোল্ট। এছাড়া গ্লেন ফিলিপস নেন তিনটি উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার চারশ’র আক্ষেপ থাকলেও তাদের ইনিংসটি ধর্মশালায় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছে। ওয়ানডেতে এই মাঠে আগের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি ছিল ইংল্যান্ডের, বাংলাদেশের বিপক্ষে কদিন আগে ৩৬৪ রান করেছিল জস বাটলাররা।

আজ ধর্মশালায় শুরুতে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার ওয়ার্নার ও হেডের বিধ্বংসী ব্যাটিং দেখে থাকলে আপনার মনে হতেই পারে ওয়ানডে নাকি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ! দুজনের উদ্বোধনী জুটি থামে ১৯ তম ওভার শেষে ১৭৫ রানে। বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক সেঞ্চুরির দিকেই এগোচ্ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ওয়ার্নার। শেষমেশ ৬৫ বলে ৮১ রানে থাকা অবস্থায় গ্লেন ফিলিপসের বলে তার হাতেই ক্যাচ তুলে ফিরতে হয় অজি এই ওপেনারকে।

ওয়ার্নারকে হারালেও ইনিংসের ২৩ ওভার শেষেই দুইশো ছাড়ায় অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন ট্রাভিস হেড। রাজসিক প্রত্যাবর্তন বোধহয় একেই বলে! হাতের ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপের আগের ম্যাচগুলো খেলতে পারেননি। আজ দলে ফিরেই মাত্র ২৫ বলে চলতি বিশ্বকাপের যৌথভাবে দ্রুততম ফিফটির পর ব্যক্তিগত সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে খেললেন ৫৯ বল। ওডিআই ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটারদের মধ্যে যা চতুর্থ দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড।

যদিও সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি হেড। ওয়ার্নারের পর ফিলিপসের দ্বিতীয় শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে করেছেন ৬৭ বলে ১০৯ রান। যেখানে ১০ টি চারের সঙ্গে ৭টি ছক্কার মার ছিল।

দুই ওপেনারকে হারিয়ে কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। আজও ব্যর্থ হন স্টিভ স্মিথ (১৮)। মার্শ ও লাবুশেনরাও ইনিংস বড় করতে পারেননি। শেষদিকে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও প্যাট কামিন্সের ছোটখাটো ক্যামিওতে বড় সংগ্রহ পায় তারা।

ডাচদের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা ম্যাক্সওয়েল ২৪ বলে ৪১ রান করে জিমি নিশামের ওভারে আউট হন। জস ইংলিসকে ৩৮ রানে আউট করেন বোল্ট। এছাড়া নিশামের এক ওভারে চার ছক্কা হাঁকিয়ে শেষ পর্যন্ত ১৪ বলে ৩৭ রান করে আউট হন কামিন্স। এক ওভারে স্টার্ক, ম্যাট হেনরি ও অ্যাডাম জাম্পাকে তুলে নিয়ে রাশ টানেন বোল্ট।

এএইচএস