সমর্থকদের তোপের মুখে সাকিবরা
‘বাংলাদেশকে সাপোর্টের সময় আবেগ কাজ করেছিল, বিবেক নয়’
হায়রে হায় বাংলাদেশ…বাংলাদেশ…বাংলাদেশ— প্রয়াত পপসম্রাট আজম খানের বিখ্যাত একটা গানের লাইন। বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যেভাবে নাকানিচুবানি খাচ্ছে তাতে এই গানটা অনায়াসে দলের সঙ্গে চালিয়ে দেওয়া যায়। সীমিত সুযোগ আর সামর্থ্য নিয়েই যখন বিশ্বকাপ মাতাচ্ছে নেদারল্যান্ডস ও আফগানিস্তানের মতো দলগুলো, সেখানে সবচেয়ে বড় কোচিং বহর ও উন্নত সুবিধাভোগী হয়েও তলানিতে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বাজে পারফর্ম করা দলগুলোর তালিকা করলেও শুরুর দিকে থাকবেন সাকিব আল হাসানরা।
বিশ্বকাপে হারের হ্যাটট্রিকের পর আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা ছিল বাংলাদেশের। অবশ্য আশা ছিল সমর্থকদেরও। অন্তত বাংলাদেশ দলের দায়িত্বজ্ঞানহীন বোলিং-ব্যাটিংয়ে তেমন কিছু আপনার চোখে পড়েনি নিশ্চয়ই। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশি বোলারদের পিটিয়ে তুলোধুনো করে ৩৮২ রানের পাহাড় গড়ে ডি কক-ক্লাসেনরা। জবাবে খেলতে নেমে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। মূলত বড় হারের লজ্জার প্রহর গুনছে তারা।
বিজ্ঞাপন
টিম বাংলাদেশের এমন পারফরম্যান্সে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে সমর্থকদের। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ ঝারছেন অনেকেই। সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত একটি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া এক নারীর একটি মন্তব্য ভাইরাল হয়েছিল। যেখানে তিনি বলেছেন, এ কাজ করার সময় তার আবেগ কাজ করেছে। বিবেক কাজ করেনি। বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরাও ভাইরাল এই কথার সঙ্গে নিজেদের মিল খুঁজে পাচ্ছেন।
রফিকুল ইসলাম সবুজ নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী আজ বাংলাদেশের খেলা দেখে লিখেছেন, বাংলাদেশকে সাপোর্ট করার সময় আমার আবেগ কাজ করেছে, বিবেক কাজ করেনি।
বাংলাদেশের খেলা দেখে চরম হতাশ এক সমর্থক লিখেছেন, ক্রিকেটের নামে এই টর্চার বন্ধ করা হোক। তিনি আরও লিখেছেন, বিশ্বকাপের একমাত্র অসুন্দর বিষয় বাংলাদেশ। অবিলম্বে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হোক। আরেকজন লিখেছেন, ভাগ্যিস! বাংলাদেশকে বাছাইপর্ব খেলতে হয়নি। তাহলে ভারতে যাওয়া লাগতো না।
বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয় দেখে একজন মুম্বাইয়ের আবহাওয়ার খবর জানতে চেয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ওয়াংখেড়েতে বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা আছে? শুধু সমালোচনাতেই ক্ষান্ত হচ্ছেন না। শাহরিয়ার পলাশ নামের একজন বাংলাদেশের সামর্থ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘একটা দল হঠাৎ করে একটি ম্যাচ খারাপ খেলতে পারে, দুইটি ম্যাচ খারাপ খেলতে পারে। তখন আপনি বলতে পারেন দিনটি তাদের ছিল না। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে খারাপ খেললে এটাই আপনার স্কিল। আপনি শত চেষ্টা করেও এর থেকে বেশিদূর যেতে পারবেন না।’
একজন লিখেছেন, এই বাংলাদেশ দলকে নিয়ে আগে অনেক তর্ক করছি, অনেক গলা ফাটিয়েছি, খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে খেলা দেখতাম, স্কুল বাদ, কাজ-কাম বাদ দিয়ে তাদের নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম একটা সময়। তারা হারলে মনটা এতোটাই খারাপ হতো যে কাজে আর মন বসতো না। বার বার হারার পরও বলতাম হারলেও বাংলাদেশ জিতলেও বাংলাদেশ, তাদের নিয়ে অনেক আবেগ-ভালোবাসা ছিল। বিনিময়ে তারা শুধু আমাদের বলতো আমাদের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে ভালো করার কথা শুনাইতো, এখনো এটাই শুনায়। এখন হারলে আর কষ্ট হয় না।
আরও পড়ুন
অনেকে সুন্দর কিছু পরামর্শও দিচ্ছেন। সাবিকুল ইসলাম ইরাদ নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয় দলে চান্স পাওয়ার ক্ষেত্রে বিসিএস কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংকের এডির মতো ক্রিকেটীয় জ্ঞানের পরীক্ষা পদ্ধতি (প্রিলি, রিটেন, ভাইভা) চালু করা হোক। তারা কোনো প্রকার ক্রিকেটীয় গ্রামার/জ্ঞান ছাড়া খেলে, তাই বার বার ফেল মারে। আর তাদের বেতন স্কেল শুরু হবে নবম, দশম ও এগারো গ্রেড অনুযায়ী। ইনক্রিমেন্ট হবে পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে।’
ওয়ানডে সুপার লিগে দাপট দেখিয়ে বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা বাংলাদেশকে নিয়ে বড় স্বপ্ন বুনছিল সমর্থকরা। তবে ক্রিকেটারদের বাজে পারফরম্যান্সে এখন ’ছেড়ে দে মা-কেঁদে বাঁচি’ দশা। একজন লিখেছেন, ক্রিকেট থেকে বাংলাদেশকে নিষিদ্ধ করা উচিৎ। যে দেশে মানুষ তিনবেলা খেতে পারে না। সে দেশে কোটি টাকা গচ্চা দিয়ে এই ক....খেলা বিলাসিতা আমাদের জন্য।
এফআই/এএইচএস