২০১৫ বিশ্বকাপে প্রথমবার অংশগ্রহণ। নিজেদের অভিষেক আসরে মোটে একটি ম্যাচ জিতলেও ২০১৯ বিশ্বকাপ থেকে ফিরতে হয় খালি হাতেই। এবার ভারতে নিজেদের ইতিহাস নতুন করে লিখছে আফগানিস্তান। এরই মধ্যে হারিয়ে দিয়েছে দুই বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে অঘটনের পর ৯২’ বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তানের বিপক্ষে আট উইকেটের বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে আফগানরা।

গতকাল (সোমবার) চেন্নাইয়ের এম চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে টস হেরে শুরুতে ফিল্ডিংয়ে নেমে পাকিস্তানকে ২৮২ রানের বেশি স্কোর দাঁড় করাতে দেয়নি আফগানরা। বল হাতে বিশ্বকাপে অভিষিক্ত নুর আহেমেদের স্পিন ঘূর্ণির পর ব্যাট হাতে আরও সাবলীল ছিলেন আফগান ব্যাটাররা। ২৮৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় রহমানুল্লাহ গুরবাজকে সঙ্গে নিয়ে দারুণ উদ্বোধনী জুটি গড়েন ইব্রাহিম জাদরান। বাকি কাজটা সারেন রহমত শাহ ও অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদী।

নুর আহমেদ বাজি

আফগানিস্তানের সব সময়ের প্রধান শক্তি স্পিন আক্রমণ। আর পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি হয়েছে ভারতের স্পিনবান্ধব উইকেটগুলোর অন্যতম চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। এমন উইকেটে রশিদ খান, মুজিব উর রেহমান ও মোহাম্মদ নবিদের পাকিস্তানের ব্যাটাররা কীভাবে সামলাবে, এমন প্রশ্ন ছিল অনেকেরই। এর মধ্যেই আফগান একাদশে নেওয়া হয় আরও এক স্পিনারকে। পাকিস্তান ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ অভিষেক হয়েছে নুর আহমেদের। তাকে জায়গা দিতে বসাতে হয়েছে তারকা পেসার ফজল হক ফারুকীকে। 

আফগান টিম ম্যানেজমেন্টের নুর আহমেদ বাজি বেশ ভালোভাবেই কাজে লেগেছে। ১০ ওভারে ৪৯ রান দিয়ে তিন উইকেট শিকার করে অভিষেক রাঙিয়েছেন এই তরুণতুর্কি। নুরের তিন উইকেটের সবগুলোই ছিল গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। ইনিংসের ২৩ তম ওভারে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা পাক ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিককে  শিকার বানান নুর। ৭৫ বলে ৫৮ রানের ইনিংস খেলেছেন শফিক। পাকিস্তান ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ রিজওয়ানকেও থিতু হওয়ার সময় দেননি নুর। ৯২ বলে ৭৪ রান করা বাবর আজমের উইকেটটাও তুলে নিয়েছেন আফগান তরুণ এই স্পিনার। 

নির্ভুল ব্যাটিং

দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের পর ব্যাট হাতে নির্ভুল ক্রিকেট খেলেছে আফগান ব্যাটাররা। দুই ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরানের ব্যাটে দারুণ শুরু পায় আফগানরা। উদ্বোধনী জুটি ভাঙে দলীয় ১৩০ রানের মাথায়। তবে এমন পরিস্থিতি থেকেও অনেকবার ম্যাচ হেরে গেছে তারা। যদিও এদিন বলের মেরিট অনুযায়ী খেলে জয় হাতছাড়া হতে দেয়নি।

গুরবাজ ব্যক্তিগত ফিফটির পর ফিরলেও আরও কিছুক্ষণ টিকে ছিলেন ইব্রাহিম। রহমত শাহকে সঙ্গে নিয়ে আরেকটা জুটি গড়ার চেষ্টা চালান। ১১৩ বলে ১০ চারের মারে ব্যক্তিগত ৮৭ রানের মাথায় ইব্রাহিম জাদরান যখন ফেরেন, ততক্ষণে চেন্নাইতে আফগান খুশবু ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। দুই ওপেনারের বিদায়ের পর আর কোনো উইকেট পতন হতে না দিয়ে হাশমতউল্লাহ শহিদীকে নিয়ে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন রহমত শাহ। আফগান দলের কেউ শত রান করেননি। কিন্তু চার ব্যাটারই দলের হয়ে অবদান রেখেছেন।

ভুলেভরা পাকিস্তান

বিশ্বকাপে হারের হ্যাটট্রিক পাকিস্তানের। ভারত, অস্ট্রেলিয়ার পর আফগানিস্তানের কাছেও ধরাশায়ী বাবর আজমরা। কিন্তু এই হারকে কি অঘটন বলা যায়? ভারতের কাছে ৭ উইকেট এবং অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৬৭ রানে হেরে খেলতে নেমেছিল পাকিস্তান। মনোবল দুমড়েমুছড়ে থাকা দলটার বিপক্ষে আফগানিস্তান হাসতে হাসতে জিতল আট উইকেটে। পাকিস্তানের ফিল্ডিং দুর্বলতা পুরনো রোগ। কালকের ম্যাচে অন্তত তিনটি ক্যাচ ফেলেছেন দলটির ফিল্ডাররা। গুরবাজ, জাদরান, রহমত সবাই এক বার করে জীবন পেয়েছে। এ ছাড়া অসংখ্য ফিল্ডিং মিস তো রয়েছেই। সহজ বলও গলিয়েছেন হাসান আলি-শাহিন আফ্রিদিরা।

নাসিম শাহ’র অনুপস্থিতি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে পাকিস্তান। ম্যান ইন গ্রিনদের সবচেয়ে নির্ভরতার জায়গা তাদের পেস ইউনিট বিশ্বকাপে ফ্লপ। শাহিন আফ্রিদির সেই আগ্রাসন গতি দেখা যাচ্ছে না। হারিস রউফকে তো পাড়ার ক্রিকেটার বানিয়ে ছেড়েছেন প্রতিপক্ষ দলগুলো। ত্যক্ত বিরক্ত পাকিস্তানের সাবেকরাও বলতে বাধ্য হচ্ছেন, রউফকে ঘরোয়া ক্রিকেটে পাঠিয়ে দেওয়া হোক। অন্য দলগুলোর স্পিনাররা অ্যাডভান্টেজ পেলেও এখানেও ব্যর্থ পাকিস্তান। এক ম্যাচ বসিয়ে রেখে গতকাল একাদশে ফেরানো হয় শাদাব খানকে। ফিরতে ম্যাচেও আস্থার প্রতিদান দিতে ব্যর্থ হলেন। অধিনায়ক হিসেবে কৌশলী হতে পারছেন না বাবর আজমও। 

বিশ্বকাপের সূচি আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই পাকিস্তান আপত্তি তুলেছিল দু’টি ম্য়াচ নিয়ে। আফগানিস্তানের স্পিনারদের কথা ভেবে তারা এই ম্যাচটি খেলতে চেয়েছিল বেঙ্গালুরুতে। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ চেন্নাইয়ে চেয়েছিল তারা। হয়েছে উল্টোটাই। আইসিসি সূচিতে পরিবর্তন করেনি। ফলে বেঙ্গালুরুতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারের পর চেন্নাইয়ে আফগানিস্তানের কাছেও হারল পাকিস্তান।

এফআই