জাতীয় দলে উপেক্ষিত, নেটে সমাদর
বিশ্বকাপের রেকর্ড রানচেজের লক্ষ্যে তখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সমানতালেই লড়ছিল পাকিস্তান। বল হাতে এরপর আচমকা দৃশ্যপটে হাজির অ্যাডাম জাম্পা। ইখতিখার আহমেদ এবং মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নিজের স্পিন জাদুতে বিভ্রান্ত করেছেন। প্রায় ফসকে যাওয়া ম্যাচটাকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে এসেছিলেন এই লেগস্পিনার।
এ কেবল জাম্পার কথা। বিশ্বকাপে লেগস্পিনাররা বরাবরই আলো ছড়াচ্ছেন। ভারতের চায়নাম্যান বোলার কুলদীপ যাদব বাংলাদেশের বিপক্ষে রীতিমত ছড়ি ঘুরিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডে আদিল রাশিদ, আফগানিস্তানের রশিদ খান নিজেদের দলে অবিচ্ছেদ্য অংশ। পাকিস্তানে শাদাব খান এবং উসামা মীর জায়গা বদলে খেলেছেন। আর এসব দেশের বিপরীতে আছে বাংলাদেশ। যেখানে লেগস্পিনার বেশ আগে থেকেই অবহেলার শিকার।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু বিশ্বকাপ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে লেগস্পিনের বিপক্ষে অনুশীলন দরকার টাইগারদের। দলের সঙ্গে তাই নেট বোলার হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে দুই কিশোর লেগিকে। একজন ওয়াসি সিদ্দিকী ও আরেকজন শেখ ইমতিয়াজ শিহাব। বিশ্বকাপের এক ভেন্যু থেকে অন্য ভেন্যুতে নেটে ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে দেশি এই দুই কিশোরের।
অনূর্ধ্ব-১৭ ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলা এই দুই লেগিকে প্রথম থেকে দলের সঙ্গে রাখতে চেয়েছিলেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তবে ভিসা জটিলতার কারণে প্রথম থেকে শিহাবকে পেলেও পাওয়া যায়নি ওয়াসীকে।
তবে এবার মুম্বাইয়ে দলের সঙ্গী হলেন দুইজনই। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আজ নেটসেশনে বল করবেন তারা। এছাড়া কেরালার কারাপাস জিয়াস ঢাকা থেকেই দলের সঙ্গে আছেন ভাড়াটে চায়নাম্যান হিসেবে।
কিন্তু যে লেগস্পিনারদের নেটে সমাদর করা হয় কিংবা ভাড়া করে দলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, সেই লেগস্পিনার এবং চায়নাম্যান বোলারদের জাতীয় দলে নিতে যেন ভীষণ অনীহা টিম ম্যানেজমেন্টের। অলক কাপালীর পর বাংলাদেশে লেগস্পিনার হিসেবে থিতু হতে পারেননি আর কেউই।
জুবায়ের হোসেন লিখন জাতীয় দলে এসেছিলেন। ৩ ওয়ানডেতে ৪ উইকেট কিংবা ৬ টেস্টে ১০ উইকেট শিকার করা লিখনের সম্ভাবনা ছিল, এ কথা সকলেই বিশ্বাস করেন। ২০১৯ সালে এই লিখনের বোলিং দেখেই তাকে বিশ্বমানের বোলার উল্লেখ করেছিলেন আফগানিস্তানের রশিদ খান। তবে কোন এক অজ্ঞাত কারণে জাতীয় দলে নিয়মিত হতেই পারেননি লিখন। ক্যারিয়ার শেষ করছেন শুধুমাত্র নেট বোলার কিংবা ক্যাম্প বোলার হয়ে।
লিখনকে বিদায় বলার পর আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে এসেছিলেন ধুমকেতু হয়ে। তাকেও চেষ্টা করেছিল বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। জাতীয় দলের হয়ে ১০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচও খেলে ফেলেন তিনি। এই লেগস্পিনিং অলরাউন্ডার একেবারে খারাপ করেননি। ১০ ম্যাচে ১২ উইকেটের পাশাপাশি ৩৫ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। তবুও ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ খেলে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়তে হয় তাকে।
এরপর অনেকটা সময় বিরতি দিয়ে জাতীয় দলে এসেছেন রিশাদ হোসেন। তবে নিজের উপর প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন এই লেগি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৩ ম্যাচে নিয়েছেন ২ উইকেট। বয়সী রিশাদ প্রথম শ্রেণিতে পেয়েছেন ১৯ উইকেট আর টি-টোয়েন্টিতে পেয়েছেন ৮ উইকেট।
সাধারণ ব্যাটারদের যেমন ম্যাচের পর ম্যাচ সুযোগ দেওয়া হয়, তেমন সুযোগ থেকে বঞ্চিত লেগস্পিনাররা। নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাসরা মূলত নির্বাচকদের লম্বা সময়ের আস্থার ফলাফল। কিন্তু সেই একই নির্বাচকরাই লেগ স্পিনারদের ছুঁড়ে ফেলতে সময় নেননি। বছরের পর বছর নেটে সমাদর করা হলেও জাতীয় দলে অনীহার পাত্রই হয়ে আছেন দেশের লেগস্পিনাররা।
জেএ