টানা জয়ে বিশ্বকাপ শুরুর পর পথ হারিয়েছে পাকিস্তান। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে হাই-ভোল্টেজ ম্যাচে নিরুত্তাপ পারফরম্যান্সে হারতে হয়েছে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে। সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রানবন্যার ম্যাচে আশা জাগিয়েও সেই ৬২ রানের বড় ব্যবধানে হার। অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৩৬৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তানের ইনিংস থেমেছে ৩০৫ রানে। 

গত শুক্রবার বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে টস জিতে অস্ট্রেলিয়াকে শুরুতে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিল পাকিস্তান কাপ্তান বাবর আজম। অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার আর মিচেল মার্শ মিলে রেকর্ড ২৫৯ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন। এই দুই ব্যাটারের সেঞ্চুরিতে ভর করে নির্ধারিত ওভার শেষে ৯ উইকেটে ৩৬৭ রানের বড় পুঁজি গড়ে অস্ট্রেলিয়া। 

একটা পরিসংখ্যান দেখলে আপনি চমকাতে বাধ্য হবেন। অস্ট্রেলিয়ার অমন রানবন্যার ম্যাচেই ১৫২টি ডট দিয়েছিল পাকিস্তান। বিপরীতে হজম করতে হয়েছে ২৯টি বাউন্ডারি ও ১৯টি ওভার বাউন্ডারি। যদিও তাদের মূল বোলার শাহিন শাহ আফ্রিদি ৫৪ রানে ৫ উইকেট শিকার নিজেকে ঠিকই প্রমাণ করেছেন। বিশ্বকাপে শাহিনের এটাই সেরা বোলিং ফিগার। 

স্পিডস্টার নাসিম শাহের অনুপস্থিতি পাকিস্তানকে নিঃসন্দেহে বেশ ভোগাচ্ছে। অন্যদিকে হারিস রউফের ম্যাচ খেলার অভাব ও আন্তর্জাতিক মানের স্বীকৃত স্পিনারের অভাবে ভারতের মাটিতে পাকিস্তান ভালো করতে পারছে না।

পাকিস্তান কেন ধারাবাহিক ভালো করতে পারছে না? এর কারণ খুঁজতে গেলে সামনেই আসবে তাদের বোলিং ব্যর্থতার চিত্র। স্পিডস্টার নাসিম শাহের অনুপস্থিতি পাকিস্তানকে নিঃসন্দেহে বেশ ভোগাচ্ছে। অন্যদিকে হারিস রউফের ম্যাচ খেলার অভাব ও আন্তর্জাতিক মানের স্বীকৃত স্পিনারের অভাবে ভারতের মাটিতে পাকিস্তান ভালো করতে পারছে না। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় ভারতীয় উইকেটের সঙ্গে রউফ কোনোভাবেই মানিয়ে নিতে পারছেন না। অতিরিক্ত শর্ট বল দিতে গিয়ে তিনি প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের বাউন্ডারি হাঁকাতে সুবিধা করে দিচ্ছেন। 

চার ম্যাচে এ পর্যন্ত রউফকে ১১টি ওভার বাউন্ডারি হজম করতে হয়েছে। প্রতি ম্যাচে গড়ে যা দুটিরও বেশী। এতে কার্যত প্রতি ম্যাচে পাকিস্তান প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের ব্যাটিংয়ে সুবিধা করে দিচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ওভারে তিনি ২৪ রান দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ৮ ওভারে ৮৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন। এই বোলিং ফিগার অবশ্যই ভুলে যেতেই চাইবেন রউফ।

কিংবদন্তি পেসার ওয়াসিম আকরাম দেশটির জনপ্রিয় টেলিভিশন শো ‘প্যাভিলিয়ন’-এ রউফ সম্পর্কে বলেন, ‘সে (রউফ) এখনও ঘরোয়া ক্রিকেটে অনিয়মিত। ওয়ানডেতে তার সমস্যা আছে। টি-টোয়েন্টিতে কোনোভাবে বেঁচে যাওয়া যায়, কারণ সেখানে মাত্র ৪ ওভার বল করতে হয়। কিন্তু ওয়ানডেতে কিছু করতে হলে ঘরোয়া ওই ফর‌ম্যাটের ওপর জোর দিতে হয়। আমি রউফকে ছয়টি বল ভালো লেংথে স্টাম্প বরাবর করতে দেখতে চাই।’

একটা পরিসংখ্যান দেখলে আপনি চমকাতে বাধ্য হবেন। অস্ট্রেলিয়ার অমন রানবন্যার ম্যাচেই ১৫২টি ডট বল করেছিল পাকিস্তান। অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাক বোলাররা সব মিলিয়ে ২৯টি বাউন্ডারি ও ১৯টি ওভার বাউন্ডারি হজম করেছে। 

পাকিস্তানি বোলাদের মধ্যে পরিকল্পনায়ও অনেক সমস্যা রয়েছে। ফাস্ট বোলারদের কাছ থেবে সবময়ই ফুল-লেংথ বোলিং সবাই আশা করে থাকে। বিশেষ করে ব্ল্যাক-হোল পজিশনে বল করতেই হবে তাদেরকে। নাহলে কোনো লাভ নেই। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে স্ট্রেইট বাউন্ডারির দূরত্ব ৭২ মিটার। এখানে ইয়র্কার লেংথের বল দিলে সরাসরি বাউন্ডারি মারাটা কঠিন। কিন্তু রউফ বারবার শর্টার ডেলিভারি দিয়ে গেছে এবং মিচেল মার্শ ও ডেভিড ওয়ার্নারকে উইকেটে উভয় দিকে আড়াআাড়িভাবে শট খেলতে সুযোগ করে দিয়েছে। 

ম্যাচ সম্পর্কে সচেতনতা প্রসঙ্গে হাসান আলিকে নিয়ে নিজের একটি পর্যবেক্ষণের কথা বলেছেন সাবেক অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক। স্কয়ার লেগ ও মিড উইকেট এই দুটি পজিশন মার্শের ফেবারিট জায়গা সম্পর্কে অবগত হওয়া সত্ত্বেও হাসান তার স্কয়ার লেগ ফিল্ডারকে ৩০ গজের মধ্যেই রেখেছিলেন, একইসাথে থার্ড ম্যানকে কিছুটা এগিয়ে এনেছিলেন। লেগ স্পিনার উসামা মীরও বোলিংয়ে সময় অন সাইডে পাঁচজনকে রেখেছেন। অথচ ডান হাতি মার্শকে সে একটিও গুগলি বল করেননি। মিড-অন ও মিড-অফ ফিল্ডারকে একটু উপরে রেখে থার্ড ম্যানকে বাউন্ডারিতে রেখে দুই অস্ট্রেলিয়ান সেঞ্চুরিয়ানের বিপরীতে পাকিস্তানি বোলাররা কোন পরিকল্পনা অনুযায়ী বোলিং করতে পারেননি বলে মিসবাহ মন্তব্য করেছেন। 

আরেক সাবেক বোলার আকিব জাভেদ বিশ্বকাপের শুরুতেই এই বিষয়গুলোকে সামনে এনেছিলেন। মিডল ওভারে পার্থক্য গড়ে দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের অবশ্যই ভালো স্পিনারের প্রয়োজন ছিল। দলে এই মুহূর্তে থাকা শাদাব খান কিংবা উসামা কেউই অধিনায়ক বাবর আজমকে কোন সহযোগিতা করতে পারছেন না। 

এফআই