ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত শুরু, বলা যায় স্বপ্নের মতো কিন্তু তারপরও প্রথম ইনিংস শেষে পিছিয়েই ছিল বাংলাদেশ। তাই এই ম্যাচে পয়েন্ট পেতে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হতো বোলারদের। কিন্তু সেটা পারলেন না কেউই। উল্টো খাপছাড়া বোলিংয়ে রোহিত-কোহলিদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি তারা। রীতিমতো বল ফেলার জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলেন না হাসান-শরিফুলরা। ৭ উইকেটের বড় হারে সেমির স্বপ্ন থেকে আরো দূরে সড়ে গেল বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ- ২৫৬/৮ (৫০.০ ওভার)

ভারত- ২৬১/৩ (৪১.৩ ওভার)

 

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) পুনেতে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৫৬ রান করেছিল বাংলাদেশ। হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন লিটন ও তামিম। জবাবে খেলতে নেমে ৪২ ওভার ৩ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ভারত। দলের হয়ে সর্বোচ্চ অপরাজিত ১০৩ রান করেছেন কোহলি।

আইয়ারকে থিতু হতে দিলেন না মিরাজ

পুনের ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে বোলারদের জন্য তেমন কিছু নেই। তবে লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে বোলিং করলে যে, এখানেও ভালো করা সম্ভব তারই প্রমাণ দিলেন মিরাজ। গিলের পর এবার শ্রেয়াস আইয়ারকেও ফেরালেন তিনি। ৩০তম ওভারের প্রথম বলে মিরাজকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়েন আইয়ার। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৫ বলে ১৯ রান।

কোহলির ফিফটিতে ছিটকে গেল বাংলাদেশ

উইকেটে নেমেই বাংলাদেশি বোলারদের থেকে বেশ কিছু উপহার পেয়েছেন কোহলি! যা তাকে উড়ন্ত শুরু করতে সাহায্য করেছে। কোহলির বিপক্ষে ১৩তম ওভারে পরপর দুটি নো বল দিয়েছেন হাসান। প্রথম ফ্রি হিটে চার। পরেরটিতে ছক্কা। পরপর দুটি নো বলই কাজে লাগিয়েছেন কোহলি। এমন শুরুর পর ফিফটিতে পৌঁছাতে কোহলি খেলেছেন ৪৮ বল।

গিলকে ফেরালেন মিরাজ

ডেঙ্গু থেকে ফিরে প্রথম ম্যাচে সুবিধা করতে পারেননি শুবমান গিল। পাকিস্তানের বিপক্ষে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। কিন্তু আজ বাংলাদেশের বিপক্ষে ঠিকই ফিফটি তুলে নিয়েছেন। তবে এরপর আর বেশি দূর এগোতে পারেননি। ২০তম ওভারে এই ওপেনারকে ফিরিয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। যেখানে বড় কৃতিত্ব আছে মাহমুদউল্লাহর। ডিপ মিড উইকেটে দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়েছেন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে গিলের ব্যাট থেকে এসেছে ৫৫ বলে ৫৩ রান।

রোহিতকে ফিরিয়ে উদ্বোধনী জুটি ভাঙলেন হাসান

অবশেষে উইকেটের দেখা পেল বাংলাদেশ। ১৩তম ওভারের চতুর্থ বলটি খাটো লেন্থে করেছিলেন হাসান। সেখানে ঘুরে দাঁড়িয়ে পুল করেন রোহিত। তবে টাইমিং হয়নি। তাতে ডিপ স্কয়ার লেগে হৃদয়ের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ৪৮ রান করা এই ওপেনারকে ফিরিয়ে ৮৮ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন হাসান।

উড়ন্ত শুরু ভারতের

উইকেটে কোনো মুভমেন্ট নেই। ফলে বাড়তি কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না পেসাররা। এই উইকেটে ব্যাটারদের চেপে ধরতে হলে লাইন-লেন্থের দিকে মনযোগী হতে হবে বোলারদের। সেখানে শুরুর ৫ ওভারে ব্যর্থ বাংলাদেশ। ফলাফল উড়ন্ত শুরু ভারতের। ৫ ওভার শেষে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৩৩ রান তুলেছে স্বাগতিকরা।

আক্ষেপ নিয়ে ফিরলেন মাহমুদউল্লাহ

হাফ সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৪ রান দূরে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। জাসপ্রিত বুমরাহর দুর্দান্ত ইয়র্কারে বোল্ড হয়েছেন তিনি। সাজঘরে ফেরারা আগে  তার ব্যাট থেকে এসেছে ৩৬ বলে ৪৬ রান।

মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে তাকিয়ে বাংলাদেশ

ফিরলেন নাসুমও। তবে এক প্রান্তে আশার আলো হয়ে জ্বলছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অপর প্রান্তে স্বীকৃত কোনো ব্যাটার না থাকায় তার ব্যাটের দিকেই তাকিয়ে আছে বাংলাদেশ। আড়াইশ ছাড়ানো সংগ্রহ পেতে মাহমুদউল্লাহকেই ইনিংস শেষ করে আসতে হবে!

ফিরলেন মুশফিকও, খাদের কিনারায় বাংলাদেশ

দুর্দান্ত শুরু করা ইনিংসের শেষটা ভালো করতে পারলেন না মুশফিক। ৪৩তম ওভারের তৃতীয় বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে রেখেছিলেন বুমরাহ। সেখানে কাট করতে গিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে খেলেন মুশফিক। ব্যকয়ার্ড পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকা জাদেজা দুর্দান্ত ড্রাইভে সেটা তালুবন্দি করেন। ৩৮ রান করে মুশফিক ফেরায় আরো চাপে পড়ল বাংলাদেশ।

হৃদয়কে মুক্তি দিলেন ঠাকুর, বিপদে বাংলাদেশ

উইকেটে আসার পর থেকেই অস্বস্তিতে ভুগছিলেন তাওহীদ হৃদয়। যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন-রানের জন্য ছটফট করেছেন! তবে তার ব্যাট যেন বোবা, কোনো কিছুতেই কথা বলবে না! ৩৫ বল খেলেও কোনো বাউন্ডারির দেখা পাননি। শেষ পর্যন্ত তাকে মুক্তি দিয়েছেন শার্দুল ঠাকুর! এই পেসারের খাটো লেন্থের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অনে শুবমান গিলের হাতে ধরা পড়েন হৃদয়। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৬ রান।

জুটি গড়ার চেষ্টায় মুশফিক-হৃদয়

৪৩ রানের ব্যবধানে টপ অর্ডারের ৪ ব্যাটারকে হারিয়ে কিছুটা হলেও পিছিয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। এমন অবস্থা থেকে দলকে টেনে তুলার চেষ্টা করছেন মুশফিক-হৃদয়। বিশেশ করে মুশফিক শুরু থেকেই সাবলীল ব্যাটিং করছেন। তবে আরেক প্রান্তে হৃদয় কিছুটা ধীরগতির ব্যাটিং করছেন।

এই ইনিংস খেলার পথে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব‍্যাটসম‍্যান হিসেবে বিশ্বকাপে হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন মুশফিকুর রহিম। এর আগে বাংলাদেশের হয়ে এই এলিট ক্লাবে নেম লেখান সাকিব আল হাসান।

লিটনকে ফিরিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিল ভারত

শান্ত-মিরাজ দ্রুত ফিরলেও এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন লিটন। ফিফটি করে বড় রানের পথেই হাঁটছিলেন তিনি। তবে ২৮তম ওভারে এই ওপেনারকে থামালেন জাদেজা। এই অফ স্পিনারের গুড লেন্থের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অফে শুবমান গিলের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়েছেন লিটন। তার আগে ৮২ বলে ৬৬ রান করেছেন এই ওপেনার।

শান্তর পথে হাঁটলেন মিরাজ

উইকেটে এসে থিতু হওয়ার আগেই ফিরেছিলেন শান্ত। এবার সেই পথেই হাটলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। চার নম্বরে খেলতে নেমে সুবিধা করতে পারলেন না তিনি। ২৫তম ওভারের প্রথম বলটি লেগ স্টাম্পের ওপর খাটো লেন্থে করেছিলেন মোহাম্মদ সিরাজ। ইন সুইং করে সেটা লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় অযথা ব্যাট চালিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পরেছেন মিরাজ। ছেড়ে দিলে ওয়াইড হতো নিশ্চিত। সাজঘরে ফেরার আগে মিরাজের ব্যাট থেকে এসেছে ১৩ বলে ৩ রান।

লিটনের ফিফটি

গত ম্যাচে ডাক খেয়েছিলেন লিটন। কিউইদের বিপক্ষে ব্যাট হাতে ব্যর্থতার পর পুনেতে এসে হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে তর্কে জড়ান তিনি। সবমিলিয়ে খানিকটা বাড়তি চাপ নিয়েই আজ ভারতের বিপক্ষে নেমেছিলেন লিটন। সেসব দূরে ঠেলে খেললেন দারুণ এক ইনিংস। সাবলীল ব্যাটিংয়ে তুলে নিয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি। ১২তম ওয়ানডে ফিফটি ছুঁতে লিতন খেলেছেন ৬২ বল।

ব্যর্থ শান্ত

সাকিবের অনুপস্থিতিতে আজ দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ওপেনারদের দারুণ শুরুর পর তিনে ব্যাটিং করতে আসেন শান্ত। উইকেটে এসে দেখে-শুনে শুরু করেছিলেন। তবে ফিরলেন থিতু হওয়ার আগেই। ২০তম ওভারের শেষ বলে রবীন্দ্র জাদেজার সোজা বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৭ বলে ৮ রান।

ফিফটির পর ফিরলেন তামিম

১৫তম ওভারের চতুর্থ বলটি খানিকটা জোরের ওপর করেছিলেন কুলদীপ যাদব। সেখানে সুইপ করতে গিয়ে টাইমিং করতে পারেননি তামিম। বল প্যাডে আঘাত হানলে আম্পায়ার আউট দেন। লিটনের সঙ্গে কিছুক্ষণ আলোচনা করলেও রিভিউ নেননি তামিম। ৫১ রান করা এই ওপেনারকে ফিরিয়ে ৯৩ রানের উদ্বোধনী জুটি ভেঙেছেন কুলদীপ।

তামিমের অভিষেক ফিফটি

ক্যারিয়ারের শুরুটা ভালো হয়নি। একাধিক ম্যাচে একটানা ব্যর্থ হয়েছেন। তারপরও তামিমের কাঁধের ওপর ভরসার হাত রাখেন হাথুরুসিংহে। অবশেষে তার প্রতিদান দিলেন এই ওপেনার। ভারতের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এসে ঝড়ো ফিফটি হাঁকিয়েছেন। ৪১ বলে এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি।

বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে সর্বোচ্চ রানের জুটি

বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়লেন তামিম ও লিটন। আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০১১ সালে মিরপুরে তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের ৫৬ রান। এবার সেটি ছাড়িয়ে এখনো অবিচ্ছিন্ন আছেন তামিম-লিটন।

তামিমের ব্যাটে উড়ন্ত শুরু বাংলাদেশের

শুরুটা ধীরগতির হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে বাংলাদেশ। বিশেষ করে তানজিদ তামিম দারুণ কিছু বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। পাওয়ার প্লের সুবিধা নিয়ে বৃত্তের উপর দিয়ে খেলেছেন। তাতে সফলও হয়েছেন এই তরুণ ওপেনার। আরেক প্রান্তে লিটনও খোলস ছেড়ে রান তুলায় মনযোগ বাড়িয়েছেন। ফলে প্রথম পাওয়ার প্লে শেষে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬৩ রান তুলেছে বাংলাদেশ।

দুই দশক পর সাকিবকে ছাড়া বাংলাদেশ

২০০৭ সালে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ অভিষেক সাকিব আল হাসানের। প্রায় ১৬ বছর পর ভারতের সঙ্গে আরেকটি ম্যাচেই চোটের কারণে দলের বাইরে বাংলাদেশ অধিনায়ক। মাঝের ১৬ বছরে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবকটি ম্যাচ খেলেছেন সাকিব। সবশেষ ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে সাকিবকে ছাড়া কোনো ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। তখনও অভিষেকই হয়নি এই অলরাউন্ডারের অলরাউন্ডারের।

ধীরগতির শুরু বাংলাদেশের

নতুন বলে দারুণ শুরু করেছেন জাসপ্রিত বুমরাহ। এই ডানহাতি পেসারকে যোগ্য সঙ্গে দিয়েছেন মোহাম্মদ সিরাজ। ভারতীয় পেসারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে দেখে-শুনে খেলছেন লিটন দাস ও তানজিদ তামিম। রানের গতি কিছুটা কম হলেও উইকেট ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের একাদশে দুই পরিবর্তন

সাকিব আল হাসানের পরিবর্তে এই ম্যাচে সুযোগ পেয়েছেন বিশেষজ্ঞ স্পিনার নাসুম আহমেদ। দলে বোলিং ইউনিটে ভারসাম্য আনতেই নেওয়া হয়েছে তাকে। এছাড়া বাংলাদেশ দলে এসেছে আরও এক পরিবর্তন। পেসার তাসকিন আহমেদের পরিবর্তে দলে এসেছেন আরেক পেসার হাসান মাহমুদ।

ওপেনিং পজিশনে যথারীতি থাকছেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস। এরপর  মেহেদী হাসান মিরাজ, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়দের উপর নির্ভর করতে হবে বাংলাদেশকে। দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নামবেন এরপরেই। যার অর্থ, সাত বিশেষজ্ঞ ব্যাটার নিয়ে এই ম্যাচ খেলছে টাইগাররা। 

বোলিং বিভাগে নেতৃত্ব দেবেন নাসুম আহমেদ, হাসান মাহমুদ, শরিফুল ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমান। তিন পেসারের পাশাপাশি স্পিন বিভাগে নাসুম এবং মিরাজই বাংলাদেশের ভরসা।

 

এইচজেএস