ব্যাট-বলে বিবর্ণ দিনে বাংলাদেশের ভরাডুবি
দুই দিন আগেও ধর্মশালায় ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেই ম্যাচে দাপট ছিল স্পিনারদের। সঙ্গত কারণেই আজ বাড়তি একজন স্পিনার নিয়ে ইংলিশদের বিপক্ষে মাঠে নামে টাইগাররা। তাদের এ সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল, তা প্রমাণ হয়েছে প্রথম ইনিংসেই। সাকিব-মিরাজদের কচুকাটা করে রানের পাহাড় গড়ে ইংল্যান্ড। অথচ এই উইকেটেই লক্ষ্য তাড়ায় নেমে তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেছে বাংলাদেশের টপ অর্ডার।
তবে লিটন দাস প্রমাণ করেছেন-এই উইকেটে রান করা খুব একটা কঠিন কাজ না। কিন্তু তামিম-শান্তরা উইকেট বিলিয়ে শুরুতেই দলকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন। যেখান থেকে আর ফিরতে পারেনি বাংলাদেশ। ১৩৭ রানের বড় হারে পয়েন্ট টেবিলেও বড় ধাক্কা খেল সাকিবের দল। সেরা চার থেকে নেমে গেছে ছয়ে।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) হিমাচল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৬৪ রান করেছিল ইংল্যান্ড। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১৪০ রান করেন ওপেনার ডেভিড মালান। বাংলাদেশের হয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন মেহেদী।
জবাবে ৪৮ ওভার ২ বলেই ২২৭ রানে অলআউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ। যেখানে সর্বোচ্চ ৭৬ রান এসেছে লিটনের ব্যাট থেকে।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালোই করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই হ্যাটট্রিক বাউন্ডারিতে রানের খাতা খোলেন লিটন। তবে পুরোপুরি ব্যর্থ হন আরেক ওপেনার তানজিদ তামিম। তরুণ এই ওপেনার কিছুতেই যেন ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে পারছেন না। দ্বিতীয় ওভারে রেইস টপলির অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে স্লিপে ক্যাচ দেন। পরের বলেই ফিরেছেন তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত। সর্বশেষ চার ম্যাচে পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলা শান্ত এদিন গালিতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।
শুরুতেই দুই উইকেট হারানোর পর উকেটে এসেছিলেন সাকিব। লম্বা পথ পাড়ি দিতে সাকিবের কাঁধে অনেক দায়িত্ব ছিল। তবে ধর্মশালায় ব্যর্থ হন বাংলাদেশ অধিনায়কও। ষষ্ঠ ওভারের চতুর্থ বলটি ব্যাক অফ ল্যান্থ ডেলিভারি ছিল টপলির। সেখানে লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন সাকিব (১)। টাইগার কাপ্তানের পর দ্রুত বিদায় নেন আগের ম্যাচের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। ওকসের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৭ বলে ৮ রান।
৫০ রানের আগেই ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা চালান লিটন-মুশফিক। ৭৫ বলে ৭২ রানের জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটার। এরপরে ক্রিস ওকসের অফ কাটারের ফাঁদে পড়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন লিটন। তিনি ৬৬ বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলে সেঞ্চুরির আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়েন।
তখনও বাংলাদেশের জয়ের কিছুটা আশা ছিল। কিন্তু দলীয় ১৬৪ রানে মুশফিক আউট হলে সে আশা ক্ষীণ হয়ে আসতে থাকে। বাংলাদেশি উইকেটরক্ষক ফিরেছেন টপলির বলেই। ডিপ থার্ডে থাকা আদিল রশিদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ৬৪ বলে ৫১ রান করেছেন তিনি। মুশফিকের পরে তাওহীদ হৃদয় (৩৯) ও শেখ মেহেদী (১৪) আউট হলে জয়ের সম্ভাবনা প্রায়ই কমে আসে।
শেষ দিকে তাসকিন ( ১৫ রান), শরিফুল ( ১২ রান) এবং মুস্তাফিজ (৩*) কেবল হারের ব্যবধানটাই কমিয়েছেন। বাংলাদেশের ইনিংস থামে ২২৭ রানে। এর আগে টস জিতে ধর্মশালায় বোলিংয়ে শুরুটা ভালোই করেছিল বাংলাদেশ। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই ধার হারান তাসকিন-মুস্তাফিজরা। সেই সুযোগেই চড়াও হন ইংলিশ ব্যাটাররা। বিশেষ করে ডেভিড মালান। এই ওপেনার এদিন রীতিমতো টর্নেডো বইয়ে দেন। মালানের সেঞ্চুরি আর জো রুটের হাফ সেঞ্চুরিতেই যেন ম্যাচের ফল নির্ধারণ হয়ে গিয়েছিল।
শুরু থেকেই বাংলাদেশের বোলারদের ওপর চড়াও হন ইংলিশ দুই ওপেনার মালান এবং বেয়ারস্টো। এই দুইজনের ওপেনিং জুটি থেকে আসে ১১৫ রান। এরপর বেয়ারস্টো আউট হলেও দমে যায়নি ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। রুটকে নিয়ে বড় এক জুটি গড়েন মালান। শেষ পর্যন্ত মালানকে থামান মেহেদী। এই স্পিনারের টসড আপ ডেলিভারিতে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন তিনি। ১০৭ বলে করেছেন ১৪০ রান। ১৬টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ৫টি ছক্কা। সেঞ্চুরির পর ১৬ বলে তিনি করেছেন ৪০ রান। রুটের সঙ্গে তার দ্বিতীয় উইকেট জুটি থামে ১৫১ রানে।
এরপর অবশ্য ইংল্যান্ডের কোনো ব্যাটার ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। শরিফুল ও শেখ মেহেদীর বলে একে একে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ব্রুক, লিভিংস্টোন এবং কারান। শেষ পর্যন্ত আদিল রশিদ এবং ক্রিস ওকসের ঝোড়ো ইনিংসের ওপর ভর করে ৩৬৪ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় ইংল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৬৪/৯ (বেয়ারস্টো ৫২, মালান ১৪০, রুট ৮২, বাটলার ২০, ব্রুক ২০, লিভিংস্টোন ০, কারান ১১, ওকস ১৪, রশিদ ১১, উড ৬*, টপলি ১*; মুস্তাফিজ ১০-০-৭০-০, তাসকিন ৬-০-৩৮-১, শরিফুল ১০-০-৭৫-৩, শেখ মেহেদী ৮-০-৭১-৪, সাকিব ১০-০-৫২-১, মিরাজ ৬-০-৫৫-০)
বাংলাদেশ: ৪৮.২ ওভারে ২২৭ (লিটন ৭৬, তানজিদ ১, শান্ত ০, সাকিব ১, মিরাজ ৮, মিরাজ ৮, মুশফিক ৫১, হৃদয় ৩৯, মেহেদি ১৪, তাসকিন ১৫, শরিফুল ১২, মুস্তাফিজ ৩*; ওকস ৮-০-৪৯-২, টপলি ১০-১-৪৩-৪, কারান ৭.২-০-৪৭-১, উড ১০-০-২৯-১, রশিদ ১০-০-৪২-১, লিভিংস্টোন ৩-০-১৩-১)
ফল: ইংল্যান্ড ১৩৭ রানে জয়ী
এইচজেএস/এফআই