হাংজু এশিয়ান গেমসে প্রায় দেশই স্বাভাবিকভাবে পদক জয়ের উল্লাস করে। অথচ প্রায় সময় নীরব থাকেন বাংলাদেশের দর্শকরা। এই গেমসে দুই বার বাংলাদেশ পদক জয়ের উল্লাস করল। ছেলে ও মেয়েদের ক্রিকেটের দু’টি পদকই এসেছে ব্রোঞ্জের।

নিগার সুলতানা জ্যোতিরা অনেকটা সহজেই পাকিস্তানকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ জিতলেও, সাইফ-আফিফদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। বৃষ্টির বাধায় বারবার ম্যাচের পরিধির সঙ্গে নিয়ন্ত্রণও বদলেছে। একেবারে শেষ অঙ্কে বাংলাদেশের জয়ের জন্য শেষ বলে ৪ রান প্রয়োজন ছিল। এরপর রাকিবুল হাসানের ব্যাটে ব্রোঞ্জ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। 

বাংলাদেশকে ব্রোঞ্জ জিতিয়ে বেশ উচ্ছ্বেসিত কণ্ঠ রাকিবুল হাসানের, ‘এটা দারুণ অনুভূতি। দেশকে একটি পদক এনে দিতে পেরেছি।’ উইকেট গিয়েই শেষ বলে চার রান অনেক চাপ ছিল। এরপরও নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস রেখেছিলেন এই ব্যাটার, ‘আমার ওপর নির্ভর করেই ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিল দল। সেই নির্ভরতার প্রতিদান দিতে চেয়েছি।’

শেষ বলে চার হাঁকিয়ে রাকিবুল ব্রোঞ্জ জয়ের শেষ ধাপ পেরোলেও, বাংলাদেশকে জেতানোর মূল নায়ক অবশ্য ইয়াসির আলী রাব্বি। ৫ ওভারে ৬৫ রানের মধ্যে ইয়াসির আলীই করেছেন ৩৪ রান। মাত্র ১৬ বলের ইনিংসে তার দুই ছক্কা ও তিনটি চার রয়েছে। সেই রাব্বিও খানিকটা শঙ্কায় ছিলেন শেষ বলের বিষয়ে, ‘আসলে আমরা জাতীয় দলেও অনেক সময় শেষ বলে এভাবে হেরেছি। তাই একটু ভয় কাজ করছিল। রাকিবুল ভালোভাবে ফিনিশ করেছে।’

তবে শেষ ওভারে বাংলাদেশকে ম্যাচে রেখেছেন ইয়াসির আলী-ই। ২০ রানের মধ্যে ১৬ রানই তিনি নিয়েছেন। শেষ ওভারের পরিকল্পনা সম্পর্কে ইয়াসির বলেন, ‘স্পিনারকে প্রথম দুই বলে বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারি হাঁকানোর পরিকল্পনা ছিল। এটা করতে পারায় ম্যাচ সহজ হয়ে যায়। যদিও আমি পঞ্চম বলে আউট হওয়ায় চাপে পড়ে যাই।’

ইয়াসিরের আউটের পর যেমন চাপ ছিল, তেমনি তিনি যখন ক্রিজে আসেন তখনও পরিস্থিতি এমনই ছিল। কারণ প্রথম ওভারেই যে দুই উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে ম্যাচ বের করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দুই উইকেট গেলেও আমাদের হাতে আরও উইকেট ছিল। তাই রান নেওয়ার চেষ্টা করেছি। রান এসেছেও।’

এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাইফ হাসানও বিশেষভাবে কৃতিত্ব দিলেন ইয়াসিরকে, ‘রাব্বি ভাই সিনিয়র খেলোয়াড়, তার অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগিয়েছে। আফিফও ভালো ব্যাট করেছে।’ খেলা বারবার পরিবর্তন হওয়ায় পরিকল্পনাতেও পরিবর্তন আনতে হয়েছে বাংলাদেশের, ‘আসলে খুব সংক্ষিপ্ত সময়ে খেলা হলে অনেক কিছুতেই পরিবর্তন করতে হয়। আমরা সেভাবেই খেলেছি।’

ক্রিকেটাররা সাধারণত দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলে অভ্যস্ত। গেমসে সব সময় ক্রিকেট থাকেও না। তবে এশিয়ান গেমস খেলা দলটির এই অভিজ্ঞতা রয়েছে, ‘এসএ গেমসে আমরা এই দলের অনেকেই খেলেছি। তাই গেমসের আবহ অনেকটাই জানি।’

২০১০ সালে এই চীনেই এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ স্বর্ণ জিতেছিল। এক যুগ পর চীনের অন্য শহরে আয়োজিত গেমসে ব্রোঞ্জ জিতল বাংলাদেশ। এ নিয়ে অবশ্য খুব একটা আক্ষেপ নেই ইয়াসির আলীর, ‘আমরা আমাদের সামর্থ্য মতোই খেলেছি। টি-টোয়েন্টিতে সবসময় সব দিন সমান যায় না।’ ব্রোঞ্জ জেতানো ইয়াসির আলী অবশ্য এই গেমসের প্রথম দুই ম্যাচে খেলার সুযোগ পাননি। 

এজেড/এএইচএস