বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ সবশেষ বোধহয় টিভি স্ক্রিনের সামনে বসেছিল গেল বছরের ১৮ ডিসেম্বর। সেদিন ছিল ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ। কাতার থেকে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স পেরিয়ে সেই আনন্দের জোয়ার পৌঁছে গিয়েছিল বাংলাদেশেও। লিওনেল মেসির হাতে সোনালি ট্রফি দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়েছিল দেশের সাধারণ ভক্ত-সমর্থকরা।

অবশ্য সেই আনন্দ আর খুশির ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছিল সাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেট তারকার মনেও। মেসির হাতে অধরা সেই মুকুট দেখে সেদিন মাঝরাতে ঢাকার রাস্তায় নেমে পড়েছিলেন টাইগার অধিনায়ক। কালো গাড়িতে করে ঘুরে ঘুরে সাকিব মেসিদের জয় উদযাপন করেছিলেন। দেশের মানুষের গর্ব করার মতো তেমন একটি উপলক্ষ্য এনে দেওয়ার সুযোগ এসেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটেও।

গতকাল থেকে ভারতের মাটিতে শুরু হয়েছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। মর্যাদাপূর্ণ এই টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আগামীকাল (শনিবার) আফগানিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে টাইগাররা। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া হয়ে সারা দেশের মানুষই উদগ্রীব হয়ে আছে দেশের জয় দেখার জন্য। সবার নজর সকাল ১১টার টিভি স্ক্রিনে! সবার চাওয়া একটা-ই ট্রফি আসুক ওই গঙ্গার পাড় থেকে এই পদ্মায়।

ট্রফি জেতা অবশ্য বেশ দূরের ব্যাপার। তার আগে প্রথম সিঁড়ি আফগানিস্তান। ২০১১ সালের পর আবারও বিশ্বমঞ্চে সাকিবের নেতৃত্বে খেলবে টাইগাররা। গেল দশ দিনে সাকিব-তামিম ইস্যুতে বাংলাদেশ ক্রিকেটে তীব্র ঝড়ের পর এখন বইছে হিম-শীতল ঠাণ্ডা। আপাতত মাঠের ক্রিকেটেই এখন নজর সবার। দিন কয়েক আগে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা জানিয়েছিলেন, সাকিব যে মাপের ক্রিকেটার তার একটি ট্রফি প্রয়োজন।

লেখার শুরুতে লিওনেল মেসির কথা বলা হয়েছে, ২০২১ সালের আগে আন্তর্জাতিক ফুটবলে যার দেশের হয়ে বড় কোনো শিরোপা ছিল না। সেই খরা তিনি কাটিয়েছিলেন কোপা আমেরিকার শিরোপা জয় করে, পরবর্তীতে বিশ্বকাপ। সাকিবের সামনেও তেমন-ই সুযোগ রয়েছে। বিষয়টা বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে, তবে স্বপ্ন দেখতে সমস্যা কোথায়! বিশ্বক্রিকেটে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে রাজ করে আসা এমন কারও মাথায় থাকবে না কোনো রাজ মুকুট— সেটা হতে পারে?

দেশের ক্রিকেট সমর্থকরাও চাচ্ছেন— এবার কিছু করে দেখাক বাংলাদেশ। যার নেপথ্যের মূল দায়িত্ব সাকিবের কাঁধেই। আমাদের দেশ আয়তনে ছোট হলেও জনসংখ্যা ১৭ কোটি। তবে এই ১৭ কোটি মানুষের চিন্তা-ভাবনা কিন্তু ভিন্ন। অবশ্য সবার চিন্তা-চেতনা ঠিক কেবল একটি জায়গায়— সেটি হলো ক্রিকেট। ক্রিকেট মাঠে বাংলাদেশ যখন খেলতে নামে তখন দেশের মানুষ কেবল জয়ের লক্ষ্য নিয়েই টিভি-সেটের সামনে বসে। দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার চিন্তাতে কেবল-ই জয়। 

একটা জয়ই পারে মুহূর্তের মধ্যে দেশের মানুষকে আনন্দের সাগরে ডুবিয়ে রাখতে। কোনো মানুষের মন খারাপ, কারও প্রচুর মানসিক হতাশা কিংবা তরুণ কারও প্রেমে বিচ্ছেদ; ঠিক তখনই স্বস্তি এনে দিতে পারে সাকিবের একটি ব্রেক-থ্রু কিংবা মিরাজের জয়ে রাঙানো ফিফটি!

বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন সব ছাপিয়ে পৌঁছে গেছে আবেগের অনেক উর্ধ্বে। দেশের অধিকাংশ মানুষ এখন বিশ্বকাপ জ্বরে ভুগছে, স্বপ্ন দেখছে নতুন কিছুর আশায়। সবার স্বপ্নের পরিধি চ্যাম্পিয়ন ট্রফি পর্যন্ত। তবে টাইগাররা ঠিক কতটা কী করতে পারবে, সেটা তোলা থাকুক সময়ের কাছে।

বিশ্বকাপে তারুণ্যে ভরা বাংলাদেশ দলটার কমান্ডার তো সাকিব আল হাসান। দেশকে বড় কোনো ট্রফি এনে না দিতে পারা এই তারকার সামনে সুযোগ নিজেকে প্রমাণ করার। অবশ্য সাকিব তো সেই কবেই নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন। সেই সুযোগ কাজে লাগানোর লক্ষ্যের কথা তিনি নিজেও বলেছেন, বাংলাদেশ কতটা ভালো দল সেটা দেখাতে চান বিশ্বকাপে।

শেষ করা যাক বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনের একটি কথা দিয়ে। গতকাল সুজন বলেছিলেন, ‘এবার না হলে আর কখন? আমাদের পুরো অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশেল আছে। তারা এখন টপ লেভেলে পারফর্ম করেছে। সেজন্য আমরা স্বপ্ন দেখতে-ই পারি।’

এসএইচ/এএইচএস