৯৯-এর বাংলাদেশ : ক্রিকেট মঞ্চে বড় শক্তির আগমনী বার্তা
অপেক্ষার পালা শেষ করে আরও একবার হাজির আইসিসি মেনস ক্রিকেট বিশ্বকাপ। একদিনের ক্রিকেটের এই মেগা আসরের এবারের আয়োজক ভারত। উপমহাদেশের বৃহত্তম এই দেশে বসবে বিশ্বকাপের ১৩তম আসর। প্রথম বিশ্বকাপের ৪৮ বছরের মাথায় বসছে ১৩তম আসর। বিগত আসরগুলোতে বিশ্বকাপের এই মঞ্চ দেখেছে একাধিক সাড়া জাগানো দল।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ ঘিরে ঢাকা পোস্টের বিশেষ আয়োজন সাড়া জাগানো সেসব দল। যেখানে থাকছে আলোচিত সব দলের উত্থানের গল্প। প্রথম পর্বে থাকছে ১৯৯৯ সালের বাংলাদেশ দলের কথা।
বিজ্ঞাপন
অসীম প্রত্যাশার এক আসর
ওয়ানডে ক্রিকেট বাংলাদেশ খেলা শুরু করেছিল আশির দশকে। অবশ্য স্বাধীনতার আগে থেকেই এদেশের মানুষের রক্তে মিশে ছিলো ক্রিকেটের উন্মাদনা। তবে আশির দশকেই বলতে গেলে জমতে শুরু করে এদেশের ক্রিকেট। তখন জয়ের চেয়ে সম্মানজনক পরাজয়ই ছিল ভাবনার বিষয়। তবে নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে বাংলাদেশ জন্ম দেয় দারুণ এক ইতিহাসের। ১৯৯৭ সালে ষষ্ঠ আইসিসি ট্রফি জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করে নেয় বাংলাদেশ। নিশ্চিত হয় বিশ্বকাপের অংশগ্রহণ।
১৯৯৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ছিল গ্রুপ ‘বি’ তে। প্রতিপক্ষ হিসেবে সামনে ছিল বিশ্বক্রিকেটের শক্তিশালী সব দল। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সপ্তম আসরের বি গ্রুপে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ওয়েষ্ট ইন্ডিজের মত পরাশক্তি এবং নবাগত স্কটল্যান্ডের সাথে অন্তর্ভুক্ত হয় বাংলাদেশ।
অলিভ সবুজ আর সামনের অংশে হলুদের মাঝে কালো ডোরাকাটা দাগের জার্সিতে শুরু হয় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন। অভিষেক ম্যাচে প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। প্রথমে ব্যাট করে ৩৭.৪ ওভারে সবকয়টি উইকেট হারিয়ে ১১৬ রান তোলে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচ বাংলাদেশ হেরে যায় ৬ উইকেটে। ২য় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৮৩ রানের টার্গেট দিয়ে আটকে রেখেছিল ৪৭ ওভার পর্যন্ত।
আরও পড়ুন
তৃতীয় ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম জয়ের সম্ভাবনা। সমশক্তির দল বলেই কিনা প্রত্যাশা ছিল বেশি। তবে ব্যাট করতে নেমে ২৬ রানেই ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর শুরু হয় মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর প্রতিরোধ। তার ৬৮ রানের সুবাদে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ১৮৫ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ১৬৩ রানে অলআউট হয় স্কটল্যান্ড। ২২ রানের এই জয় বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসের পালে যোগ করে বাড়তি হাওয়া।
নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নাস্তানাবুদ হয় বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করে ১৭৮ রান তোলে বিশ্বকাপের নবাগত এই দলটি৷ আগের সর্বোচ্চ স্কোরার নান্নু এই ম্যাচেও করেন ৫৩ রান। জবাবে অজিরা মাত্র ১৯.৫ ওভারেই জয় পায়।
গ্রুপ পর্বে এবং বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলার জন্য ৩১মে নর্দাম্পটনের মাঠে মুখোমুখি হয় সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের। পুরো টুর্নামেন্টেই প্রথমে ব্যাট করা বাংলাদেশ শেষ ম্যাচেও প্রথমে ব্যাট করতে নামে। আকরাম খানের ৪২, শাহরিয়ারের ৩৯, খালেদ মাহমুদের ২৭ রানের সুবাদে বাংলাদেশ পায় করেই ৯ উইকেটে ২২৩ রান তোলে বাংলাদেশ।
লক্ষ্যতাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় পাকিস্তান। দারুণ বোলিংয়ের তোপে ৪২ রানের মাথায় ৫ উইকেট হারিয়ে বসে ৯২ এর বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আর ঘুরে দাঁড়ানো হয়নি। ১৬১ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। বাংলাদেশ পেয়ে যায় ৬২ রানের ঐতিহাসিক এক জয়।
সেবার বাংলাদেশ বিশ্বকাপ শেষ করে এই দুই জয় নিয়ে। গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় তাদের। তবে বিদায় নিলেও বিশ্বমঞ্চে নিজেদের আগমনী বার্তা ঠিকই জানিয়ে দিয়েছিল লাল-সবুজের বাংলাদেশ।
জেএ