নাজমুল হোসেন শান্ত। ছবি-সংগৃহীত

গত বিপিএলের আগের কথা, বাংলাদেশ ক্রিকেটে নাজমুল হোসেন শান্ত যেন ছিলেন টপ অর্ডারের এক বিভীষিকার নাম। তার অফফর্মের জন্য শুনতে হয়েছে কত সমালোচনা! সমর্থকরা তার এই ফর্মহীনতার জন্য ‘লর্ড’ উপাধি দিয়ে বিদ্রুপ করতেও পিছপা হননি। তবে শান্তর দিন বদলেছে। এখন বাংলাদেশের টপ অর্ডারের অন্যতম নির্ভরতার নাম শান্ত।  

শান্তর দিন বদলাতে শুরু করেছে গেল আসরের বিপিএল থেকেই। সমালোচকদের সব সমালোচনার জবাব তিনি দিয়েছেন নিজের ব্যাট দিয়েই। গেল বিপিএল দিয়ে শুধু তিনি ফর্মেই ফেরেননি, বরং হয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরা! এটি যেন ছিল সমালোচকদের মুখে মোক্ষম চপেটাঘাত! 

দিনের পর দিন খারাপ পারফম্যান্সের পরেও নির্বাচক প্যানেল শান্ততে যে আস্থা রেখেছিলেন,সেটির পরিপূর্ণ প্রতিদান দিতে শুরু করেছেন ২০২৩ সালে এসেই! বিপিএল এরপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শান্তর পারফরম্যান্স চোখে পড়ার মতো। এ বছর এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে ৯ ম্যাচ খেলে করেছেন ৪৮৯ রান! ২০২২ সালে যেখানে ব্যাটিং স্ট্রাইকরেট ছিল মাত্র ৬২.৫৬, সেখানে এ বছর তার স্ট্রাইকরেট ৮৬.৯২! 

ভঙ্গুর অবস্থা থেকে হঠাৎ করে কিভাবে ঘুরে দাঁড়ালেন এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটের ব্যাটিং স্তম্ভ হয়ে উঠলেন, সে গল্পই শান্ত শুনিয়েছেন ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজের বিশেষ সাক্ষাৎকারে। 

২০২২ সালের পর ১৭ ওয়ানডেতে শান্তর ২ সেঞ্চুরি ও ৪ ফিফটির সাফল্য প্রসঙ্গে শান্ত বলেন, প্র্যাকটিসে সময় দিয়েছি প্রচুর, সেই সাথে ব্যাটিংয়ে দুর্বলতার নির্দিষ্ট জায়গা নিয়ে অনেক কাজ করেছি। বিশেষ করে শট সিলেকশন থেকে শুরু করে স্কিল ডেভেলপমেন্টে বেশি মনোযোগ দিয়েছি। এ ছাড়া টি-২০ বিশ্বকাপের আগে তিনি মানসিকভাবে পিছিয়ে ছিলেন এবং সেই জায়গাটায় উন্নতির জন্য বিশেষভাবে কাজ করেছেন বলেও জানান। 

ঘরের মাঠে আফগানিস্তান সিরিজের ব্যর্থতার পর এ নিয়েও কাজ করেছেন বলে জানান শান্ত। বলেন, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হওয়ার পর  দুর্বলতাকে বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করেছি এবং একই ভুল যেন বারবার না হয় সেদিকে নজর দিয়েছি। 

খেলার ধরণ বদলানো প্রসঙ্গে শান্ত জানান, আগে ব্যাটিং এ নামলে তার একই ধরণের প্যাটার্নে ব্যাট করতে হতো ফলে ব্যাট থেকে রান আসতো না। কিন্তু এখন স্কিল ডেভেলপমেন্ট করার পর তার ব্যাটিং-এ শট সিলেকশনে অপশন বেড়েছে। সেই সাথে উইকেটের আচরণ বুঝে ব্যাটিং করার স্কিল তিনি উন্নতি করেছেন বলে খেলার ধরণে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে যা কি না একটা পজেটিভ দিক। 

বেশ কয়েকটা ফিফটি করার পর সেটিকে সেঞ্চুরিতে পূর্ণ না করায় কোচ কিংবা টিম ম্যানেজম্যান্ট এর আক্ষেপ ছিল, কারণ শান্তর থেকে এখন টিম ম্যানেজমেন্ট বড় স্কোর আশা করে। এ ব্যাপারটিকে শান্ত উৎসাহ হিসেবে নিচ্ছেন। অবশ্য দলের প্রতি নিজের দায়িত্ববোধটাও তিনি বুঝতে শিখছেন, যা কি না বাংলাদেশের জন্যই ভালো দিক। 

এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কি হতে পারে এ প্রসঙ্গে শান্ত বলেন, ‘বিশ্বকাপে আমি যেটা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করি সেটা হল আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে কারণ প্রতিটি খেলাই হবে তীব্র প্রতিযোগিতার এবং সেখানে প্রতিটি দলই জিততে চাইবে। এটা একটা চাপ এবং চাপ সামলে পারফর্ম করাই হবে মূল চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া ব্যাটারা উইকেটের গতিবিধি বুঝে ব্যাটিং করতে পারলে এ চ্যালেঞ্জ সহজেই উৎরানো যাবে।’

এবারের বিশ্বকাপে নাজমুল হোসেন শান্তর কাছ থেকে অনেক কিছুই আশা করছে দেশবাসী। কারণ শান্তর ব্যাট জ্বলে উঠলেই ব্যাটিং অর্ডারের দুশ্চিতা দূর হবে বাংলাদেশের।  

এফআই/