বোলিংয়ে দারুণ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। তবে মাঝের ওভারে সেই ধারবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি। তাতে লড়াই করার পুঁজি পেয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের বোলিং ইনিংসের কার্বন কপি বলা যায় ব্যাটিং ইনিংসকে। লিটন দ্রুত ফিরলেও তানজিদ তামিম-তামিম ইকবাল জুটিতে উড়ন্ত সূচণা পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর আর বড় কোনো জুটি গড়তে পারেনি। আসলে সেটা হতে দেয়নি কিউইরা। বিশেষ করে ইশ সোধি। এই স্পিনারের ঘূর্ণি জালে এদিন ধরা পড়েছেন বাংলাদেশে ৬ ব্যাটার। মিডল অর্ডারে মাহমুদউল্লাহ ছাড়া আর কেউ তার সামনে দাঁড়াতেই পারেনি। ফলে ৮৬ রানের পরাজয় সঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশের।

নিউজিল্যান্ড : ২৫৪/১০ (ওভার : ৪৯.২)

বাংলাদেশ : ১৬৮/১০ (ওভার : ৪১.১)

 

সোধির ষষ্ঠ শিকার হাসান

আজকের দিনটাই বোধহয় সোধির। এই স্পিনারের ফুল লেন্থের বলে হাসান কিছুই করতে পারলেন না। স্টাম্প উপড়ে গেছে। ফলে সোধি পেয়েছেন ষষ্ঠ উইকেট। যা তার ক্যারিয়ার সেরা।

‘শেষ ভরসা’ মাহমুদউল্লাহও শেষ

বলটি ছেড়ে দিলে নিশ্চিত ওয়াইড হতো। অথচ পার্ট টাইমার কোল ম্যাকনকির সে বলটি মাহমুদউল্লাহ মারলেন সরাসরি ফাইন লেগে থাকা ফিল্ডারের হাতে! সেটিও আবার ৪৯ রানে দাঁড়িয়ে থেকে। উইকেট পাওয়ার পর ম্যাকনকির হাসিই বলছিল, এ উইকেট আশা করেননি তিনি কোনোভাবেই! মাহমুদউল্লাহর ৭৬ বলের ইনিংস শেষ এখানেই। হয়ত সে সঙ্গে শেষ বাংলাদেশের আশাও।

সোধির ৫, মাহমুদউল্লাহর দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ

টপ অর্ডারের পর ব্যর্থ মিডল অর্ডার ব্যাটাররাও। এমন সময় উইকেটে এসেছেন মেহেদি হাসান। উইকেটে এসে খুব একটা যে স্বস্তিতে ছিলেন তা বলা যাবে না। শেষ পর্যন্ত আউটও হয়েছেন অনেকটা অস্বস্তিতেই। সোধির সোজা বল পেছনের পায়ে ভর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাটে-বলে করতে পারেননি। ১৭ রান করা মেহেদিকে বোল্ড করে ইনিংসে ব্যাক্তিগত পঞ্চম উইকেট শিকার করেছেন সোধি। বাংলাদেশের আশার আলো হয়ে এখন উইকেটে আছেন মাহমুদউল্লাহ। তার দিকেই তাকিয়ে দল।

ফেরার ম্যাচে ফিফটি হাতছাড়া তামিমের

বাকি ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মাঝেও এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন তামিম। কয়েক মাস পর দলে ফেরা এই ওপেনার ব্যাট হাতে সাবলীল ছিলেন। খেলেছেন দারুণ কিছু শট। তবে সাজঘরে ফিরলেন হাফ সেঞ্চুরি হাতছাড়ার আক্ষেপ নিয়ে। সোধির লেগ সাইডের বলে খেলতে চেয়েছিলেন তামিম। বল গ্লাভসে লেগে যায় ব্লান্ডেলের হাতে। তবে আম্পায়ার আউট দেননি। তামিমও দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপর নিউজিল্যান্ড নেয় রিভিউ। কিন্তু সে রিভিউ টেলিভিশন আম্পায়ারের কাছে যাওয়ার আগেই হাঁটা দেন তামিম। ফলে রিভিউ আর দেখা হয়নি। এরপর আল্ট্রা-এজ নিশ্চিত করেছে, তামিমের গ্লাভসে লেগেছিল বল। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪৪ রান।

ব্যর্থ হৃদয়, বিপদে বাংলাদেশ

২ বলের ব্যবধানে দুই উইকেট হারানোর পর উইকেটে এসেছিলেন তাওহীদ হৃদয়। এমন সময় লম্বা ইনিংস প্রয়জন ছিল। কিন্তু হৃদয় টিকতে পারলেন কেবল ৭ বল। সোধির আফ স্টাম্পের বাইরের বল ডেকে এনে বোল্ড হয়েছেন। ৪ রান করে হৃদয় ফেরায় ১০ রানের ব্যবধানে ৩ ব্যাটারকে হারিয়ে বিপাকে পরল বাংলাদেশ।

দলে ফিরেই ডাক খেলেন সৌম্য

লম্বা সময় পরদলে ফিরেছেন সৌম্য সরকার। সেটাও নিয়মিত ক্রিকেটারদের বিশ্রামের জন্য। স্কোয়াডে ডাক পাওয়ার পর জায়গা হয়েছে একাদশেও। প্রথম ম্যাচে বৃষ্টির জন্য ব্যাটিং করতে পারেননি। আজ সুযোগ পেয়ে খেয়েছেন সিলভার ডাক। সোধিকে সোজা ব্যাটে ডিফেন্স করতে গিয়ে বোলারের হাতে ফিরতে ক্যাচ দিয়েছেন এই ব্যাটার। বলা যায়, কুড়িয়ে পাওয়া সুযোগ পায়ে ঠেললেন সৌম্য!

উইকেট বিলিয়ে দিলেন তানজিদ তামিম

ভালোই শুরু করেছিলেন তানজিদ তামিম। নিজের খেলা প্রথম বলেই বাউন্ডারি পেয়েছেন। এমন শুরুর পর বড় ইনিংস প্রত্যাশিত ছিল। তবে পারলেন না তিনি। ১১তম ওভারের চতুর্থ বলে ইনসাইড আউট করে খেলতে চেয়েছিলেন ইশ সোধিকে। টাইমিং করতে পারেননি। ধরা পড়েছেন বৃত্তের ভেতরই। এর আগে ১২ বলে করেছেন ১৬ রান।

দুই তামিমের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের ফিফটি

লিটন ফেরার পর উইকেটে আসেন তানজিদ হাসান তামিম। আর আগে থেকেই উইকেটে ছিলেন তামিম ইকবাল। দুজনেরই ডাক নাম তামিম। এই দুই তামিমের জুটিতে আক্রমণাত্মক শুরু করেছে বাংলাদেশ। ৫৭ বলে প্রথম ফিফটি পেয়েছে বাংলাদেশ। 

ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী লিটন

সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপের আগে ভাইরস জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন লিটন। যে কারণে আসরের শুরুতে খেলতে পারেননি। সুপার ফোরে দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে যে কয়টা ম্যাচ খেলেছিলেন, সেখানে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। আজ ঘরের মাঠে কিউইদের বিপক্ষেও ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে পারেননি। ইনিংসের প্রথম ওভারে রিভিউ নিয়ে বাঁচার পরও বেশি দূর এগোতে পারলেন না। ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে জেমিসনকে আপার কাট করতে গিয়ে থার্ড ম্যানে ধরা পড়েছেন। তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৬ বলে ৬ রান।

রিভিউ নিয়ে বাঁচলেন লিটন

গত কয়েক ম্যাচে তিন নম্বরে ব্যাটিং করেছিলেন লিটন দাস। আজকে আবারও ওপেনিংয়ে ফিরলেন তিনি। ইনিংস ওপেন করতে নেমে তার খেলা প্রথম বলেই ফিরতে পারতেন। ট্রেন্ট বোল্টের সিমের ওপর করা ডেলিভারীতে ব্যাটে খেলতে পারেননি। বল প্যাডে আঘাত হানলে আম্পায়ার আউট দেন। তবে বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায় স্টাম্প মিস করতো। ফলে এ যাত্রায় বেঁচে যান এই ওপেনার।

অলআউটের শঙ্কায় নিউজিল্যান্ড

ইশ সোধিকে সঙ্গে নিয়ে বড় জুটির পথেই হাটছিলেন কাইল জেমিসন। তবে ৪৫তম ওভারে এই ব্যাটারকে আটকে দিলেন মেহেদি হাসান। তার ব্যাট থেকে এসেছে ২০ রান।

নাসুমের ফাঁদে ম্যাকনকি

 ব্লান্ডেল ফেরার পর কোল ম্যাকনকির ওপর গুরু দায়িত্ব ছিল। তবে ব্যর্থ হলেন তিনি। নাসুমের ফাঁদ থেকে রক্ষা পেলেন না। ম্যাকনকি অবশ্য দেখে-শুনেই ব্যাটিং করছিলেন। ৩৯তম ওভারের প্রথম বলটি গুড লেন্থে রেখেছিলেন নাসুম, সেখানে ব্লক করতে গিয়ে ব্যাটে খেলতে পারেননি ম্যকনকি। বল পায়ে আঘাত হানলে আম্পায়ার আউট দেন। তবে রিভিউ নেন ব্যাটার। বলের পিচ, ইম্প্যাক্ট ভেতরেই ছিল, হিটিং দেখায় আম্পায়ার্স কল। তাতে রিভিউ বেঁচে গেলেও ম্যাকনকি বাঁচতে পারেননি। ৩৩ বল খেলে তিনি করেছেন ২০ রান।

ব্লান্ডেলকে বোল্ড করলেন হাসান

বাকি ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মাঝে এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করছিলেন ব্লান্ডেল। অপর প্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট যাওয়ায় শুরুতে কিছুটা ধীর গতির ব্যাটিং করেছেন। তবে ফিফটির পর রানের গতি বাড়ানোয় মনযোগ দেন। তাতে সফলও হচ্ছিলেন। তবে ৩৪তম ওভারে হাসানের ইয়র্কার সামলাতে পারলেন না। ৬৬ বলে ৬৮ রান করে হাসানের দুর্দান্ত ডেলিভারীতে বোল্ড হয়েছেন তিনি।

রবীন্দ্রকে ফেরালেন মেহেদি

উইকেটে এসেই রানের গতি বাড়ানোয় মনযোগ দিয়েছিলেন রাচিন রবীন্দ্র। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না। শেখ মেহেদির লেন্থ বল খেলতে গিয়ে লাইন মিস করেন। বল পায়ে আঘাত হানলে আম্পায়ার আঙুল তুলতে খুব একটা সময় নেননি। লেগ বিফোরের ফাঁদে পরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২ বাউন্ডারিতে ১০ রান।

নিকোলসের এক রানের আক্ষেপ, খালেদের শিকার দুইটি

২৬তম ওভারের শেষ বলে নাসুম আহমেদের ওভার পিচ ডেলিভারী লং অনে ঠেলে দিয়ে ফিফটি স্পর্শ করেছেন ব্লান্ডেল। পরের ওভারে একই মাইলফলকের সামনে ছিলেন নিকোলস। কিন্তু গত ম্যাচের মতো এবারও ফিফটি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে সাজঘরে ফিরলেন তিনি। খালেদ আহমেদের রাইজিং ডেলিভারী জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়লেন। এর আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪৯ রান।

নিউজিল্যান্ডের ১০০

প্রথম ৫০ রান তুলতে নিউজিল্যান্ড খরচ করেছিল ৭১ বল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রানের গতি বাড়িয়েছে তারা। পরের ৫০ রান তুলেছে মাত্র ৫০ বলে। সবমিলিয়ে ২১তম ওভারে শতরান স্পর্শ করল সফরকারীরা।

আবারও কিউইদের টেনে তুলছেন নিকোলস

দ্রুত ৩ উইকেট পরার পর উইকেটে এসে এক প্রান্ত আগলে রাখার চেষ্টা করছেন হেনরি নিকোলস। ইতোমধ্যেই টম বান্ডেলকে সঙ্গে নিয়ে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৫০ রান পূর্ণ করেছেন। গত ম্যাচেও টপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতার পর দলের হাল ধরেছিলেন নিকোলসও। আজও তার ব্যাটে ভর দিয়ে খাদের কিনারা থেকে উঠার চেষ্টা করছে কিউইরা।

 অভিষিক্ত খালেদের শিকার বোয়েস

বাংলাদেশের হয়ে ১৪৬তম ওয়ানডে ক্রিকেটার হিসেবে আজ অভিষেক হয়েছে পেসার খালেদ আহমেদের। তার অভিষেক বলেই স্কয়ার লেগে চারের বাউন্ডারি খেলেন চ্যাড বোয়েস। এরপর দুটো বল ডট। খালেদের চতুর্থ বলে আবারও লেগে খেলতে যান বোয়েস, তবে ব্যাটের মাঝে লেগে সেটি শর্ট লেগে উড়ে যায়। সেখানে থাকা তাওহীদ হৃদয়ের ক্যাচটি ধরতে কোনো অসুবিধাই হয়নি।

৩৬ রানে তৃতীয় উইকেটের পতন হয়েছে কিউইদের। তিনটি চারের বাউন্ডারিতে বোয়েস ১৪ রান করেন।

শুরুতেই মুস্তাফিজের জোড়া আঘাত

ম্যাচের শুরু থেকেই কিউই ওপেনারদের বাউন্স বলের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান ও হাসান মাহমুদ। অবশেষে ইনিংসের তৃতীয় ওভারের তিন নম্বর বলটি কাজে এসেছে। মিড উইকেটে ফেলা মুস্তাফিজের বলটি সোজা বুকের ওপর উঠে আসছিল। ব্যাট সরাতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন উইল ইয়াং, ফলে কানা লেগে তিনি তালুবন্দি হয়েছেন উইকেটের পেছনে থাকা লিটন দাসের।

দলীয় ১৫ রানেই প্রথম উইকেট হারিয়েছে কিউইরা। এর আগে ইয়াং ৮ বল খেললেও রানের খাতা খুলতে পারেননি। তবে দ্রুত উইকেট পড়লেও আক্রমণাত্মক মেজাজেই ব্যাট চালাচ্ছিলেন আরেক ওপেনার ফিন অ্যালেন। সপ্তম ওভারে ফিজের প্রথম ডেলিভারি বলেও তিনি সজোরে হাঁকিয়েছেন। অফ-স্টাম্প বরাবর বলটি অ্যালেনের ব্যাট ছুঁয়ে মাথার ওপর দিয়ে যেতে থাকা ক্যাচ লাফিয়ে ধরেন সৌম্য সরকার। অ্যালেন ফিরেছেন মাত্র ১২ রানে (১৫ বল)।

দুই দলের একাদশ

বাংলাদেশের একাদশে দুটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগের ম্যাচে থাকা তানজিম সাকিব (চোট) ও নুরুল হাসান সোহানকে বসানো হয়েছে। সেই জায়গায় নেওয়া হয়েছে দুজন পেসার। দলে ফিরেছেন গতকালই স্কোয়াডে যুক্ত হওয়া পেসার হাসান মাহমুদ। এছাড়া ওয়ানডেতে অভিষেক হয়েছে খালেদ আহমেদের।

বাংলাদেশ একাদশ : লিটন দাস (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, তানজিদ হাসান তামিম, সৌম্য সরকার, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তাওহীদ হৃদয়, শেখ মেহেদী হাসান, নাসুম আহমেদ, হাসান মাহমুদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও খালেদ আহমেদ।

নিউজিল্যান্ড একাদশ : ফিন অ্যালেন, উইল ইয়াং, চ্যাড বোয়েস, হেনরি নিকোলস, টম ব্লান্ডেল, রাচিন রবীন্দ্র, কোল ম্যাকনকি, ইশ সোধি, কাইল জেমিসন, লকি ফার্গুসন (অধিনায়ক) ও ট্রেন্ট বোল্ট।

টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ

আগের ম্যাচেও টস জিতে পরে ব্যাট নিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস। এরপর বৃষ্টির বাগড়ায় আর ব্যাটের সুযোগ পায়নি স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় ম্যাচেও টস হেরে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে টাইগারদের আগে ফিল্ডিং করতে হবে। নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক লকি ফার্গুসন টস জিততেই ব্যাট করার বিষয়ে দ্বিতীয়বার ভাবেননি।

 এএইচএস/এইচজেএস