ষষ্ঠ উইকেট পতনের পর ভেল্লালেগে আর ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার জুটিতে স্বপ্ন দেখছিল শ্রীলঙ্কা। একইসঙ্গে স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশও দেখছিল এশিয়া কাপের ফাইনালের স্বপ্ন। টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে যে এই ম্যাচে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার জয় দরকার ছিল টাইগারদের। তবে তা আর হলো না। ভারতের দুর্দান্ত বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কার টেল এন্ডাররা বড় করতে পারেননি নিজেদের ইনিংস। লঙ্কানরা থেমেছে ১৭২ রানে। 

আর ৪১ রানের জয়ে ভারত ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে। তাতে বাংলাদেশের নিশ্চিত হয়েছে বিদায়। সুপার ফোরের বাকি দুই ম্যাচের ফল যাই-ই হোক না কেন, তাতে টাইগারদের ফাইনাল আর খেলা হবে না। আর রানরেটে বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকার সুবাদে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ম্যান ইন ব্লুরা। শুক্রবারের নিয়মরক্ষার ম্যাচে মুখোমুখি হবে এই দুই দল।

কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে রান তাড়া করতে নেমে কোনো অবস্থাতেই খুব বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল না শ্রীলঙ্কা। পুরো টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে লঙ্কানদের খুব বেশি সুবিধা করতেও দেখা যায়নি। এই ম্যাচেও অব্যাহত ছিল সেই ধারা। ম্যাচে ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ সিরাজ আর জাসপ্রীত বুমরাহর দুর্দান্ত বোলিংয়ে রান তুলতে হিমশিম খেয়েছেন স্বাগতিকদের টপঅর্ডার ব্যাটাররা। 

পাওয়ার প্লে শেষের আগেই সাজঘরে ফেরেন শ্রীলঙ্কার প্রথম তিন ব্যাটার। দলীয় সাত রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পাথুম নিশাঙ্কা। ২৫ রানে জোড়া আঘাতে ফিরে যাব কুশল মেন্ডিস এবং দিমুথ কারুনারাত্নে। উইকেট ভাগাভাগি করেছেন বুমরাহ এবং সিরাজ। 

বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচসেরা হওয়া সাদিরা সামারাবিক্রমা ফিরেছেন দ্রুতই। চায়নাম্যান বোলার কুলদীপ যাদবের প্রথম শিকার ছিলেন তিনি। খানিক বাদে আবারও কুলদীপের আঘাত। এবার ফিরেছেন চারিথ আসালাঙ্কা। উইকেটে এসে থিতু হতে পারেননি অধিনায়ক দাশুন শানাকাও। রবীন্দ্র জাদেজার বলে রোহিত শর্মাকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। স্কোরবোর্ডে ১০০ রান ওঠার আগেই শ্রীলঙ্কা হারায় নিজেদের ছয় উইকেট। 

এরপর ক্রিজে আসেন ভেল্লালেগে। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে নিয়ে তার জুটি কিছুটা হলেও স্বপ্ন দেখাচ্ছিল লঙ্কানদের। দুজন মিলে জুটি গড়েন ৬৩ রানের। ১৬২ রানে থামে সেই জুটি। জাদেজার বলে থামে ধনাঞ্জয়ার ৬৬ বলে ৪১ রানের সংগ্রামী ইনিংস। 

শ্রীলঙ্কা এরপর গুটিয়ে গিয়েছে দ্রুতই। দশ রানের মাথায় হারিয়েছে শেষ চার উইকেট। ১৭২ রানে মাহিশা পাথিরানা আউট হলে নিশ্চিত হয় ভারতের ফাইনাল। 

এর আগে, টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৪৯ ওভার ১ বলে ২১৩ রান তুলে অলআউট হয়েছে ভারত। অধিনায়ক রোহিতের ব্যাট থেকে এসেছে ৫৩ রান। তাছাড়া রাহুল করেছেন ৩৯ রান।

গত ম্যাচের মতোই আজও দুর্দান্ত শুরু পেয়েছিল ভারত। ১১ ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ ছিল কোনো উইকেট না হারিয়ে ৮০ রান। বলা যায়, উড়ছিলেন দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুবমান গিল। কারণ তখনও বোলিংয়ে আসেননি দুনিথ ভেল্লালেগে! তিনি বোলিংয়ে এসেই গিল-রোহিতদের মাটিতে নামিয়ে আনেন। দুই ওপেনারকে ফেরানোর মাঝে বিরাট কোহলিকে দাঁড়াতেই দেননি এই স্পিনার।

শুরুটা শুবমান গিলকে দিয়ে। ১২ তম ওভারের প্রথম বলটি মিডল স্টাম্পের ওপর রেখেছিলেন ভেল্লালেগে। সেখানে মিড-অনে খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করেন এই ওপেনার। ব্যাটের নিচের দিকের কানায় লেগে বল আঘাত হানে অফ স্টাম্পে। সাজঘরে ফেরার আগে গিলের ব্যাট থেকে এসেছে ১৯ রান।

নিজের পরের ওভারে কোহলিকে ফিরিয়েছেন ভেল্লালেগে। খানিকটা খাটো লেন্থের বল লেগের দিকে ঘুরিয়ে দৌড় দিতে চেয়েছিলেন কোহলি, কিন্তু বল চলে যায় শর্ট মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকা ফিল্ডারের হাতে। এই মাঠে চারটি ওয়ানডে সেঞ্চুরি করা কোহলি এদিন ৪ রানও করতে পারেননি।

নিজের প্রথম দুই ওভারে গিল-কোহলিকে ফেরানোর পর তৃতীয় ওভারেও উইকেটের দেখা পান ভেল্লালেগে। এবার তার শিকার রোহিত। ১৬তম ওভারের প্রথম বলটি স্টাম্পের ওপর রেখেছিলেন। গুড লেন্থের এই বল যতটা উচ্চতায় আসার কথা তার থেকে অনেক নিচু হয়েছে, সেটাতেই বোকা বনেছেন রোহিত। বোল্ড হওয়ার আগে ভারত অধিনায়ক তার নামের পাশে যোগ করেছেন ৫৩ রান।

তিন অঙ ছোঁয়ার আগেই তিন উইকেট হারানো ভারতকে টেনে তুলেন লোকেশ রাহুল-ইশান কিষাণ জুটি। কিন্তু রাহুলকে ৩৯ রানে থামিয়ে ৬৩ রানের চতুর্থ উইকেট জুটিও ভাঙ্গেন ভেল্লালেগে। সঙ্গীকে হারিয়ে বেশিক্ষণ উইকেটে টিকতে পারেননি ইশানও। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৩৩ রান।

এর পরের গল্পটা শুধুই লঙ্কান স্পিনারদের। ১৬ রানের ব্যবধানে পরের ৪ ব্যাটারকে সাজঘরে ফেরান ভেল্লালেগে-আসালঙ্কা জুটি। শেষদিকে অক্ষর প্যাটেল কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও দলকে অলআউটের শঙ্কা থেকে বাঁচাতে পারেননি। ২৬ রান করা এই ব্যাটারকে সাজঘরে ফিরিয়ে ভারতের কফিনে শেষ পেরেকটা মারেন মাহিশ থিকশানা।

জেএ