ভক্তদের উদ্দেশে বিজয়ের আবেগঘন বার্তা
চলমান এশিয়া কাপে ব্যাটিং বিপর্যয়ের কারণে আরও একটি ম্যাচে জয় হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৫৮ রানের জবাবে গতকাল (শনিবার) সুপার ফোরের ম্যাচে সাকিব আল হাসানের দল ২১ রানে হেরেছে। যা কার্যত টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলার দৌড় থেকে হটিয়ে দিয়েছে টাইগারদের। এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনায় মেতেছেন দেশের ক্রিকেটভক্তরা। যা নজর এড়ায়নি বাংলাদেশ স্কোয়াডে থাকা এনামুল হক বিজয়ের।
এশিয়ানদের শ্রেষ্ঠত্বের এই আসর শুরুর আগে টাইগার ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনাতেও ছিলেন না বিজয়। যার কারণে ৩২ সদস্যের প্রাথমিক দল এবং পরবর্তীতে বিশ্বকাপের জন্য ব্যাকআপ ক্রিকেটারের তালিকাতেও ছিল না তার নাম। এশিয়া কাপের আগমুহূর্তে জ্বরের কারণে ছিটকে যান লিটন দাস। তার পরিবর্তে আচমকা চট্টগ্রামে বাংলাদেশ টাইগার্সের দলে থাকা বিজয়কে এশিয়া কাপ স্কোয়াডে ডেকে নেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
যদিও এখন পর্যন্ত মূল একাদশে সুযোগ পাননি বিজয়। অন্যদিকে জ্বর কাটিয়ে ফিরেছেন লিটনও। তবে বাংলাদেশের হারের পর ভ্ক্তদের কড়া সমালোচনা নিতে পারছেন না বিজয়। তাই তাদের উদ্দেশে তিনি আবেগঘন একটি বার্তা দিয়েছেন। নিচে তার ফেসবুক পোস্টটি তুলে ধরা হলো।
আরও পড়ুন >> সাকিব-মুশফিককে ছাড়াই নিউজিল্যান্ড সিরিজ!
আপনার কাছে থেকে মাত্র দুই থেকে তিন মিনিট সময় নিব একটু কষ্ট করে পড়বেন আমার টিম আমাদের...
Posted by Anamul Haque Bijoy on Sunday, September 10, 2023
‘আশা করছি এই কথাগুলো আপনারা সুন্দরভাবে নিবেন, আসসালামু আলাইকুম আমরা সবাই জানি ক্রিকেট আমাদের একটা আবেগের জায়গা। পুরো জাতি আমরা একসাথে একত্র হয়ে এটার জয় উদযাপন করি, হারলেও একইভাবে আমরা এটার কষ্ট ফিল করি। কিন্তু আমরা যখন কোন কিছু সোশ্যাল মিডিয়াতে লিখব অবশ্যই অবশ্যই আমাদের খেয়াল রাখা উচিত আমরা আলোচনা করছি, সাথে সমালোচনাও করছি। কিন্তু এই আলোচনা-সমালোচনা কোন মানুষকে আঘাত করছে কিনা? সে মানুষটির পরিবার পরিজন বন্ধু-বান্ধব এমনকি নিজেও সেটার সাফার হচ্ছেন কিনা? তার মানসিক অবস্থা কি দাঁড়াচ্ছে তা আমি কাউকে খুশি করতে যেয়ে আরেকজনকে কষ্ট দিয়ে কোন কথা বলছি সেটা আসলেও ঠিক হচ্ছে কিনা? আমাদের অবশ্যই অবশ্যই এই জিনিসগুলো মাথায় রাখা উচিত।’
এরপর ক্রিকেট যে তাদের পেশা সেটাও মনে করিয়ে দিলেন বিজয়, ‘আমি জানি আপনি সম্মানী মানুষ হয়ে আরেকজনকে অসম্মান করবেন না, অসম্মান করলে বিনিময়ে অবশ্যই সম্মান পাওয়া যায় না। যেটা কখনোই ভালো হয়ে আসে না। ক্রিকেট শুধু আমাদের একটা আনন্দের জায়গা আসলে তা নয়, ক্রিকেটারদের কাছে ক্রিকেট শুধু আনন্দের জায়গা নয় সেটা তার রুটি-রুজি। তাই সেখানে সর্বত্র দেয়ার চেষ্টা করে ক্রিকেটাররা। অবশ্যই আপনারা আলোচনা করবেন সাথে সমালোচনাও। আমরা ক্রিকেট খেলি হয়তো অনেকে বিজনেস করে চাকরি করে কেউ গান গেয়ে, কেউ নাটক করে, বিভিন্নভাবে নিজের জায়গা থেকে আমরা চেষ্টা করি আমাদের বেস্টটা দেয়ার। কখনো সফল হয় আবার কখনো হয়না। এর মানে এই না যে আমি আমার চেষ্টা বন্ধ করবো। আমরা ক্রিকেটার হিসাবে আমরা চেষ্টা করতে পারি। অনেক সময় সফল হচ্ছি অনেক সময় ব্যর্থ। কিন্তু আপনাদের সহযোগিতার মাধ্যমে আপনাদের ভালো সাপোর্টের মাধ্যমে যে কোন প্লেয়ার যে কোন ভাবে অনেক মেন্টালি স্ট্রং হতে পারে আবার আপনাদের বাজে শব্দচয়ন এর জন্য ডাউন হয়ে যেতে পারে।’
আরও পড়ুন >> মাহমুদউল্লাহর সুযোগ দেখছেন সাকিবও
‘অন্তত আমি আমার চারপাশে বা আমার আশেপাশে এরকম মানুষদেরকে চাই না, যে মানুষগুলো আমার কলিগ, আমার সাথে যারা খেলছেন, আমার সাথে যারা আছেন তাদের নামে তাদের যে কোন ধরনের নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট ফেলুক এবং আমি যাদের সাথে চলছি তাদের কোন নেগেটিভ জিনিস আমার কাছে আসুক এবং আমরা এখন যখন টিম হিসেবে খেলি তখন আমরা ফ্যামিলিও। আমাদের সবার জীবনেই ভালো এবং খারাপের মিশ্রণ থাকে যেটা আমরা সব সময় দেখি। ডিপ্রেশন সবার মধ্যেই বিরাজমান, কেউ আমায় বলতে পারবে না আমি খুবই শান্তিতে আছি, ভালো আছি, দারুণ আছি। তো আমরা আমাদের ডিপ্রেশনটাকে অন্য মানুষের দিকে ছুড়ে না দেই। আমরা আমাদের জায়গা থেকে আমাদের বেস্ট হওয়ার চেষ্টা করি। তাহলে অটোমেটিকালি আমরা জাতি হিসেবে অনেক দূর আগাতে পারব বলে আমার মনে হয়। আমি আমার ফ্রেন্ড আমি আমার ফ্যামিলি আমি আমার পরিবারকে যথেষ্ট ভাবে সাপোর্ট করি এবং করতে চাই। ফেসবুকের মাধ্যমে আমি শুধু এতোটুকু বলতে পারি এতটুকু জানাতে পারি আপনারা যখনই কোন কিছু লিখবেন, যখনই কোন কিছু বলবেন, আপনাদের শতভাগ স্বাধীনতা আছে। কিন্তু এতটুকু দেখা উচিত আপনি যাদের উদ্দেশ্যে বলছেন তার পরিবারও এটা দেখছে, সেও দেখবে, তার বন্ধু মহল দেখবে, সবাই দেখবে। এতে আপনি তাকে সম্মান করছেন নাকি অসম্মান করছেন নাকি আলোচনা নাকি সমালোচনা আপনিও এটা অবশ্যই মাথায় রেখে আপনার কথাগুলো পেশ করবেন।’
বিজয় আরও লেখেন, ‘যে কোন সময় কর্ম নাকি ফেরত আসে, এটাও কিন্তু সত্য। তা আমরাও যে কথাগুলো বলছি, যা করছি, আজকে আপনার কাছে মনে হচ্ছে আপনি যাকে হাসির পাত্র বানালেন কিছুদিন পরে যে আপনি কোন জায়গাতে আপনি হাসির পাত্র হবেন না বা আপনার সম্মানহানি হবে না সেটার গ্যারান্টি তো আপনিও দিতে পারবেন না। তাই আমি চাই আপনার মাধ্যমে কেউ হাসির পাত্র না হোক, আপনার মাধ্যমে কেউ অপমানিত না হোক, আপনার মাধ্যমে কেউ যেন মানসিকভাবে কষ্টে না থাকুক, তার পরিবার এবং তার ফ্রেন্ড সবাই যেন তাকে সেফ মনে করে। এটা আমাদের নিজেদেরই দায়িত্ব। আমরা যেন এটা ফিল করাতে পারি আমরা জাতি হিসেবে আসলে এক। কাউকেই আলাদা করা সম্ভব না, আমরা সবাই এক। আমার এই কথার মাধ্যমে কাউকে যদি কষ্ট দিয়ে থাকি আমি অবশ্যই দুঃখ প্রকাশ করছি এবং মাফ চাচ্ছি। আমি আশা করি আমার মনের কথাটা আপনাদেরকে বুঝাতে পেরেছি।’
এএইচএস