বাংলাদেশকে ২৫৮ রানের লক্ষ্য দিল শ্রীলঙ্কা
আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে শুরুতেই বোলারদের আত্মবিশ্বাস ভেঙে দিয়েছিলেন দুই লঙ্কান ওপেনার। উইকেটেও তেমন কিছু ছিল না পেসারদের জন্য। তাই নতুন বলে বাড়তি কোনো সুবিধা নিতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে প্রথম পাওয়ার প্লের পরই স্পিন দিয়ে চেপে ধরেন সাকিব আল হাসান। তারপরও সাদিরা সামাবিক্রমার-কুশল মেন্ডিসের ব্যাটে বড় সংগ্রহের পথেই এগোচ্ছিল লঙ্কানরা। তবে মেন্ডিস ফেরার পরই তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায় তাদের মিডল অর্ডার। যেখানে বড় অবদান শরিফুলের। সাকিব-নাসুমের নিয়ন্ত্রিত বোলিং আর শরিফুল-হাসানের আগ্রাসনে লঙ্কানদের নাগালেই রেখেছে বাংলাদেশ।
শনিবার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৫৭ রান তুলেছে শ্রীলঙ্কা। সর্বোচ্চ ৯৩ রান এসেছে সামাবিক্রমার ব্যাট থেকে। বাংলাদেশের হয়ে ৫৭ রানে ৩ উইকেট শিকার করে সেরা বোলার হাসান মাহমুদ।
বিজ্ঞাপন
ইনিংসের প্রথম বলেই ইনসাইড এজে বোল্ড হতে পারতেন পাথুম নিশাঙ্কা। কপালের জোরেই সেটা বাউন্ডারি হয়েছে। পরের দুই বলও স্বস্তিতে খেলতে পারেননি, চতুর্থ বলে গিয়ে ভেতরের দিকে ঢোকা বলে নিশাঙ্কাকে তো এলবিডব্লিউই দেন আম্পায়ার। সেখানে একটু সময় নিয়ে রিভিউ নেন এই ওপেনার। উচ্চতা নিয়ে সংশয় ছিল। শেষ পর্যন্ত বল ট্র্যাকিং দেখিয়েছে, বল যেত স্টাম্পের ওপর দিয়েই। তাতে প্রথম ওভারেই বেঁচে যান তিনি।
ষষ্ঠ ওভারের শুরুটা হয়েছিল টানা দুই বাউন্ডারিতে। তবে তৃতীয় বলে উইকেট শিকার করে সেটার প্রতিশোধই নিলেন হাসান মাহমুদ। ব্যাকঅব লেন্থ থেকে খানিকটা আউট সুইং করে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট চালিয়ে ছিলেন দিমুথ করুণারত্নে। ব্যাটের বাইরের দিকের কানায় লেগে বল চলে যায় মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। ১৮ রান করে এই ওপেনার সাজঘরে ফেরায় ভাঙে ৩৫ রানের উদ্বোধনী জুটি।
ইনিংসের নবম ওভারে প্রথমবার স্পিন আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। সাকিব নিজেই বল হাতে তুলে নেন। পরের ওভারে অপর প্রান্ত থেকেও স্পিন আক্রমণে যান সাকিব। এবার বল হাতে নাসুম আহমেদ। দুই স্পিনারই পাওয়ার প্লেতে একটি করে ওভার করেছেন। তাদের দুর্দান্ত শুরুতে ১ উইকেটে ৫১ রান তুলে প্রথম পাওয়ার প্লে শেষ করে শ্রীলঙ্কা।
১৯তম ওভারে বোলিংয়ে ছিলেন হাসান। দ্বিতীয় বলটি নিশাঙ্কার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে চলে যায় প্রথম স্লিপ ও উইকেটকিপারের মাঝামাঝি অঞ্চলে, সেখানে ডানদিকে ডাইভ দিয়েছিলেন মুশফিক। কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ইব্রাহিমের ক্যাচটির পুনরাবৃত্তি করতে পারেননি তিনি। গ্লাভসে অবশ্য পেয়েছিলেন, রাখতে পারেননি। ফলে নিশঙ্কা জীবন পান ৩৬ রানে।
বাংলাদেশের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে ওঠা নিশাঙ্কা শেষ পর্যন্ত ফিরেছেন হাফ সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে। শরিফুলের স্লোয়ারে ব্যাট নামাতে দেরি করে ফেলেন তিনি। বল পায়ে আঘাত হানলে আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু পল উইলসনের দেওয়া এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রিভিউ করেছিলেন, তবে বাঁচেননি। ৭৪ রানের জুটি অবশেষে ভাঙেন শরিফুল। নিশাঙ্কা থেমেছেন ৬০ বলে ৪০ রান করে।
নিশাঙ্কা হাফ সেঞ্চুরির আক্ষেপ নিয়ে ফিরলেও এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন কুশল মেন্ডিস। তবে এরপর আর বেশি দূর এগোতে পারেননি। শরিফুলের খাটো লেন্থের বলে আপার কাট করতে গিয়ে থার্ডম্যানে ধরা পড়েন। এর আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৭৩ বলে ৫০ রান। দুই সেট ব্যাটারকে সাজঘরে ফিরিয়ে বাংলাদেশকেও ম্যাচে ফেরান শরিফুল।
চারিথ আসালঙ্কা উইকেটে আসার পরই শরিফুলকে সরিয়ে তাসকিনকে আক্রমণে আনেন সাকিব। অধিনায়কের সেই পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন করলেন ডানহাতি এই পেসার। তাসকিনের স্লোয়ারে তুলে মারতে চেয়েছিলেন আসালঙ্কা। কিন্তু টাইমিং হয়নি। মিড অনে থাকা সাকিব তার ডানদিকে ছুটে নিয়েছেন ভালো ক্যাচ। আসালাঙ্কা থেমেছেন ২৩ বলে ১০ রান করে।
আসালাঙ্কা দ্রুত ফেরার পর ধানাঞ্জয়া ডি সিলভার কাঁধে অনেক দায়িত্ব ছিল। তবে তিনিও সামাবিক্রমাকে সঙ্গ দিতে পারেননি। ৩৭তম ওভারের প্রথম বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে গুড লেন্থে করেছিলেন হাসান। সেখানে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৬ বলে ৬ রান।
এরপর দাসুন শানাকাকে সঙ্গে নিয়ে ভালোই লড়াই করেছেন সামাবিক্রমা। ষষ্ঠ উইকেটে তাদের জুটিতে বড় সংগ্রহের দিকেই এগোচ্ছিল শ্রীলঙ্কা। ২৪ রান করা শানাকাকে বোল্ড করে ৬০ রানের সেই জুটি ভাঙেন হাসান। তাতে আরও একবার ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় টাইগাররা।
বাংলাদেশের সঙ্গে আগের ম্যাচেও হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন সামাবিক্রমা। হয়েছিলেন দলের সেরা স্কোরার। এবার আরও একবার বাংলাদেশকে পেয়ে জ্বলে ওঠলেন তিনি। খানিকটা চাপ নিয়েই উইকেটে এসেছিলেন। সেখানে দাঁড়িয়েও খেলেছেন দারুণ কিছু শট। হাফ সেঞ্চুরি ছুঁতে খরচ করেছেন মাত্র ৪৫ বল। সেঞ্চুরিটাও পেতে পারতেন। তার কপালে ছিল না বলেই হয়নি! ইনিংসের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে তিনি নামের পাশে যোগ করেছেন ৭২ বলে ৯৩ রান।
বাংলাদেশের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন হাসান-তাসকিন। এই দুই পেসারই ৩টি করে উইকেট পেয়েছেন। তাছাড়া সাকিব-নাসুম উইকেট শূন্য থাকলেও মিতব্যায়ী বোলিং করেছেন।
এইচজেএস