যে দুর্বলতা ছিল টাইগারদের ব্যাটিংয়ে
এশিয়া কাপের পর্দা উঠেছে গতকালই (বুধবার)। তবে আজ (বৃহস্পতিবার) এশিয়াসেরা হওয়ার মিশনে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এদিন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং নামার সিদ্ধান্ত নেন। যেখানে বাজেভাবেই শুরুটা হয়েছে অভিষিক্ত ক্রিকেটার তানজিদ হাসান তামিমের। এক নাজমুল হোসেন শান্ত ছাড়া কোনো টাইগার ব্যাটারই সেভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। ফলে নির্ধারিত ওভারের অনেক আগেই থেমেছে বাংলাদেশ, পুঁজি মাত্র ১৬৪ রান।
পুরো ইনিংসজুড়ে খাপছাড়া বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখিয়েছেন বাংলাদেশি ব্যাটাররা। এছাড়া দলের ব্যাটিং লাইনআপ সাজানো নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। টানা বাঁ-হাতি ব্যাটারদের ক্রিজে পাঠিয়ে যেন লঙ্কান বোলারদের বাড়তি সুবিধা করে দেওয়া হয়েছে! সবমিলিয়ে ইনজুরি আক্রান্ত শ্রীলঙ্কান দলটির দুর্বলতার সুযোগ নিতে পারেনি চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। ফলে তৈরি হয়নি বড় কোনো জুটি, এরপর থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি ব্যাটাররা।
বিজ্ঞাপন
এশিয়া কাপ যাত্রা শুরুর আগে শক্তিমত্তা কিছুটা কমে গিয়েছিল লঙ্কানদের। দাসুন শানাকার দলের বড় অস্ত্র অলরাউন্ডার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা শেষমুহূর্তে ছিটকে যান। এর আগে ইনজুরিতে পড়েন প্রধান দুশমান্থ চামিরা। এছাড়া আরও দুই ক্রিকেটার বাদ পড়েন কোভিড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে। কিন্তু সেই দুর্বলতার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি লঙ্কানদের ফিল্ডিংয়ে। তাতে ছন্নছাড়া টাইগার ব্যাটিংয়েরই ভূমিকা বেশি।
আরও দেখুন >> নিশাঙ্কাকে ফেরালেন শরিফুল (লাইভ আপডেট)
এদিন ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মহেশ থিকসানার বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে আটকে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন তামিম। এরপর তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্তকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে থাকেন নাঈম শেখ। তবে এখানেও বাঁধে বিপত্তি, দলীয় ২৫ রানে আবার টাইগার শিবিরে আঘাত। ১৬ রান করে ফিরে যান ওপেনার নাঈমও। একেবারে অহেতুক একটি শট খেলে বল উপরে তুলে দেন আগেও চার ওয়ানডে খেলা এই ব্যাটার। তবে তার আজকের পুঁজি ১৬ রানই ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ইনিংস।
পরবর্তীতে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে বেশিদূর পাড়ি দিতে পারেননি শান্ত। কারণ দলীয় ৩৬ রানেই টাইগার অধিনায়ক মাথিশা পাথিরানার বলে ব্যক্তিগত ৫ রানে বিদায় নেন। ভালো পার্টনারশিপের অভাবে তখন মারাত্মকভাবে ভুগছিল বাংলাদেশ। এরপর তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে শান্ত জুটি গড়েন ৫৯ রানের। সেই জুটি ভাঙলে শান্তকে আর কেউই যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি।
ব্যক্তিগত ২০ রানের মাথায় দাসুন শানাকার বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন হৃদয়। যদিও টাইগার দর্শকরা তখনও আশায় বুক বেঁধে ছিলেন। কারণ এরপরই ক্রিজে আসেন লঙ্কানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। সেই আশা গুড়েবালি করে দিয়ে মুশফিকও বিদায় নেন ১৩ রানে। মাত্র ৩২ রান পর্যন্ত দুজনের এই জুটি স্থায়ী হয়েছিল।
ইনিংসের অন্যতম বাজে দৃশ্য ঘটে এরপর শান্তকে সঙ্গ দিতে আসা মেহেদী মিরাজ খেলছিলেন দেখেশুনে। মুশফিকের বিদায়ের পর মেহেদি মিরাজ-শান্ত জুটিই ছিল বাংলাদেশের শেষ ভরসা। কিন্তু সেই শেষ সম্বলটুকু যেন বিলিয়ে দিলেন দুই ব্যাটার। ৩৭তম ওভারের তৃতীয় বলটি স্কয়ার লেগে খেলেছিলেন মিরাজ। সেখানে ফিল্ডার থাকায় রান নেওয়ার চেষ্টা করেও দুই-তিন পা এগিয়ে থেমে যান মিরাজ।
আরও দেখুন >> ব্যর্থদের ভিড়ে একাই লড়লেন শান্ত
কিন্তু অপর প্রান্তে থাকা শান্ত নিজেকে সামলাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত দুই ব্যাটারই এক প্রান্তে ঢুকেছেন। তাতে রাজিথা উইকেট ভাঙলে আম্পায়ার রিভিউতে দেখেন আগে ক্রিজে ঢুকেছেন শান্ত, ফলে মিরাজকেই সাজঘরে ফিরতে হয়। শেষদিকে টাইগারদের অন্তত সান্ত্বনা হতে পারত শান্তর সেঞ্চুরি। তবে একের পর এক সতীর্থের বিদায়ে তারও ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। মনোযোগ নড়চড় হতেই থিকশানার ক্যারম বলে বোল্ড শান্ত। ১২২ বল খেলে তিনি ৮৯ রান করেন ৭টি চারে।
শান্তর বিদায়ের পর আর বাংলাদেশ দলও ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত টাইগারদের ইনিংস থামে ১৬৪ রানেই। যা জয়ের পথ অনেক কঠিন করে দিয়েছে তাসকিন-মুস্তাফিজদের সামনে। দুইশ’র নিচে রান নিয়েও তাতেই শক্ত দাপট দেখাতে হবে সাকিবের দলকে।
এসএইচ/এএইচএস