ব্যর্থদের ভিড়ে একাই লড়লেন শান্ত
অভিষিক্ত তানজিদ তামিমকে দিয়ে শুরু। এরপর ব্যর্থদের কাতারে যুক্ত হয়েছেন অভিজ্ঞ সাকিব-মুশফিকরাও। ব্যাটারদের এই আসা-যাওয়ার মিছিলে একমাত্র ব্যাতিক্রম ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এই টপর্ডার ব্যাটার ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে একাই লড়াই করেছেন। কিন্তু তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি কেউই। ফলে বাংলাদেশও ২০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার পাল্লেকেল্লেতে টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন সাকিব আল হাসান। আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৪২ ওভার ৪ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৬৪ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ।
বিজ্ঞাপন
তামিম ইকবাল না থাকায় সুযোগ পেয়েছিলেন স্কোয়াডে। এরপর লিটনের অনুপস্থিতিতে অভিষেকটাও হয়ে যায় তানজিদ তামিমের। কিন্তু শুরুটা হয়েছে বিষাদময়। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে আক্রমণে আসেন মাহিশ থিকশানা। এই রহস্যময় স্পিনারের প্রথম বলটা ব্যাটে খেলতে পারেননি তামিম, লেগেছে প্যাডে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটা ছিল তার প্রথম বল। পরের বলটা মিডল স্টাম্পের ওপর ক্যারম করেছিলেন থিকশানা। তাতেই লাইন মিস করেছেন এই ওপেনার। বল তার পায়ে আঘাত হানলে আম্পায়ার আঙুল তুলতে খুব একটা সময় নেয়নি। ফলে ওয়ানডেতে ১৬তম বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে অভিষেকে ‘ডাক’ মারেন তামিম। ওপেনার হিসেবে যা চতুর্থ। তামিম ছাড়া বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে অভিষেকে শূন্য রানে আউট হওয়া ওপেনাররা হলেন- নুরুল আবেদীন (১৯৮৬), হারুনুর রশিদ (১৯৮৮), রফিকুল খান (২০০২)।
তামিমের ডাক খেয়ে ফেরা কিছুটা হলেও চাপে ফেলে বাংলাদেশকে। নাজমুল হোসেন শান্ত আর নাঈম শেখ মিলে সেই চাপ কাটিয়ে স্বস্তি ফেরানোর চেষ্টা করছিলেন। দেখে-শুনে খেলতে থাকা শান্ত পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে রাজিথাকে ফুললেংথে পেয়ে টেনে মারতে গেলেন। কিন্তু টাইমিং ঠিকঠাক করতে না পারায় ক্যাচ উঠেছিল। অধিনায়ক দাসুন শানাকা সামনে ডাইভ দিয়ে ক্যাচের নাগাল পেয়েছিলেন ভালোভাবেই। তবে হাতে রাখতে পারেননি বল। তাতে ব্যাক্তিগত ২ রানে জীবন পান শান্ত।
ইনিংসের অষ্টম ওভারে প্রথমবার আক্রমণে আসেন ধানাঞ্জয়া ডি সিলভা। আক্রমণে এসেই উইকেটের দেখা পান এই অফ স্পিনার। চতুর্থ বলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে বড় শট খেলতে গিয়েছিলেন নাঈম, তবে নিয়ন্ত্রণ ছিল না কোনোই। আউটসাইড-এজে ক্যাচ গেছে শর্ট থার্ডম্যানে। সহজ এই ক্যাচ লুফে নিতে ভুল করেননি পাথুম নিশাঙ্কা। তাতে ২৩ বল খেলে ১৬ রানে ফেরেন নাঈম।
দুই ওপেনারের দ্রুত বিদায়ের দিনে সাকিবের ব্যাটের দিকে তাকিয়ে ছিল দল। অধিনায়ক শুরুটাও করেছিলেন বাউন্ডারি হাঁকিয়ে। কিন্তু সেই ধারা বেশিক্ষণ অব্যাহত রাখতে পারেননি। ১১তম ওভারের চতুর্থ বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে খাটো লেন্থে করেছিলেন মাথিশা পাথিরানা। সেখানে অযথাই ব্যাট ছোঁয়াতে গিয়ে ক্যাচ তুলেছেন সাকিব। উইকেটের পেছনে সামান্য বাম দিকে সরে এসে বল লুফে নিয়েছেন কুশল মেন্ডিস। সাকিব ফিরেছেন ১১ বলে ৫ রান করে। তাতে ৩৬ রান তুলতেই তিন ব্যাটারকে হারিয়ে ধুঁকতে থাকে বাংলাদেশ।
দ্রুত তিন উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন শান্ত-হৃদয়। এই দুই তরুণের ব্যাটে ভর করে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে টাইগার শিবিরে। দলকে টেনে তোলার পথে ৬৬ বলে হাঁফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন শান্ত। ২৪তম ওভারের চতুর্থ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে এই মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি। তবে এর এক বল পরই সাজঘরে ফেরেন হৃদয়। শানাকার অফ স্টাম্পের বাইরের বল টেনে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করেন। তাতে বল আঘাত হানে হৃদয়ের প্যাডে। আম্পায়ার শুরুতে আউট না দিলেও রিভিও নেন শানাকা। এতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হন আম্পায়ার। শুরু থেকেই মন্থর ব্যাটিং করা হৃদয় শেষ পর্যন্ত সাজঘরে ফিরেছেন ৪১ বলে ২০ রান করে।
টপ অর্ডার ব্যর্থতার পর যখন সাকিব-হৃদয়ও সাজঘরে তখন মুশফিকের কাঁধে ছিল গুরু দায়িত্ব। কিন্তু তার সিকি ভাগও পালন করতে পারলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। ১২ রানে ব্যাটিং করছিলেন মুশফিক। পাতিরানাকে কাট করতে গিয়ে ঠিকঠাক করতে পারেননি, বল গিয়েছিল উইকেটকিপার কুশল মেন্ডিসের কাছে। মেন্ডিস নিজে অবশ্য তেমন আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না, আম্পায়ার পল উইলসনও আবেদনে সাড়া দেননি। তবে আল্ট্রা-এজ দেখিয়েছে, বল লেগেছিল মুশফিকের ব্যাটে। সে যাত্রায় বেঁচে যাওয়া মুশফিক নিজের নামের পাশে আর যোগ করতে পেরেছেন কেবল ১ রান। ৩৩তম ওভারের চতুর্থ বলটি খাটো লেন্থে করেছিলেন পাথিরানা। সেখানে লাফিয়ে উঠে আপার-কাট করতে গিয়ে ঠিকমতো ব্যাটে নিতে পারেননি। নিচের দিকের কানায় লেগে বল চলে যায় সোজা থার্ডম্যানে দাঁড়িয়ে থাকা দিমুথ করুণারত্নের হাতে। তাতে ২২ বলে ১৩ রান করেই থামেন মুশফিক।