কয়েক ঘন্টা পরেই এশিয়া কাপে নিজেদের উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। ক্যান্ডির পাল্লেকেলেতে এই ম্যাচটি দুই দেশের মধ্যে ৫২তম ম্যাচ। এর আগের ৫১ বারের দেখায় লঙ্কানরা জিতেছে ৪০ বার। নয়বার ফলাফল গিয়েছে বাংলাদেশের পক্ষে। দুই দলের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল এই ক্যান্ডিতেই। ১৯৮৬ সালের সেই ম্যাচটিও এশিয়া কাপেরই অংশ। 

এরপর থেকে দিনে দিনে বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা ম্যাচ আরও রঙ পেয়েছে। দুই দলই দেখেছে অসাধারণ সব মুহূর্ত। ৩৭ বছরের পুরাতন সেই দ্বৈরথের বেশ কিছু ম্যাচ নিশ্চিতভাবেই স্মরণে রাখবে দুই দেশের ক্রিকেটভক্তরা।

আরও পড়ুন: সাকিবদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো : শানাকা

আতাহার আলী খান (১৯৯০) 

আতাহার আলী খানকে ধারাভাষ্যকার হিসেবেই বেশি চেনে থাকেন বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্ম। তবে একসময় বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় নামই ছিলেন তিনি। টপঅর্ডারে আতাহার ছিলেন নির্ভরযোগ্য নাম। ১৯৯০ এশিয়া কাপে বাংলাদেশের হয়ে লঙ্কানদের বিপক্ষে ৭৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। 

বাংলাদেশ সেই ম্যাচ হেরে যায় ৭১ রানে। কিন্তু আতাহার আলী খান জিতে নেন ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ম্যাচসেরার পুরস্কার ছিল সেটি। 

আফতাব বীরত্বে প্রথম জয় (২০০৬) 

লঙ্কানদের বিপক্ষে জয় যেন অধরাই ছিল বাংলাদেশের। ২০০৬ সালের আগেই অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর স্বাদ পেয়ে যায় বাংলাদেশ। ভারতকেও হারানো হয়েছে ততদিনে। টেস্টেও জয় এসেছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কাকে যেন হাতের নাগালে পাওয়া হচ্ছিল না। সেটাই হলো বগুড়ায়। সিরিজের ২য় ওয়ানডেতে আফতাব আহমেদের কল্যাণে প্রথমবারের মত শ্রীলঙ্কাকে হারানোর স্বাদ পায় বাংলাদেশ। 

ব্যাট হাতে তার ৩১ রানের ইনিংস, ফিল্ডিংয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্স বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিল স্মরণীয় এক জয়। যদিও সেই ম্যাচে মাশরাফি বা আশরাফুলের নৈপুণ্যটাও মনে রাখবে বাংলাদেশ। 

দুরন্ত সাকিব (২০০৯) 

বড় মঞ্চে সাকিব আল হাসান নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন আগেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট নতুন এক তারকা পাচ্ছে সেটাও জানা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৯ সালের ট্রাইনেশনের সাকিব যেন নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অনন্য এক উচ্চতায়। শ্রীলঙ্কাকে হারানো সেই ম্যাচে সাকিব ছিলেন ম্যাচসেরা। তার ৬৯ বলে ৯২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা দ্বৈরথে অন্যতম সেরা এক ইনিংস। 

মুরালি ট্র্যাজেডি (২০০৯) 

সাকিবের উত্থানের দুদিন পরেই ফাইনাল। তিনজাতি সিরিজের সেই ফাইনালেও প্রতিপক্ষ লঙ্কানরাই। লো-স্কোরিং ম্যাচে এবারও জয়ের কক্ষপথেই ছিল বাংলাদেশ। ৬ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলার বোলাররা স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন দারুণ কিছুর। 

জয়ের জন্য যখন দরকার দুই উইকেট, তখনই খেলা গেল পালটে। বোলার মুরালিধরন হয়ে গেলেন পুরোদস্তুর একজন ব্যাটার। রুবেল হোসেনের দুই ওভারে এলো ৪ চার আর ২ ছয়। ১৬ বলে ৩৩ করা মুরালি বাংলাদেশকে ডোবালেন হতাশায়। 

তামিমের ভাঙা আঙুলের ম্যাডনেস (২০১৮) 

মুশফিকুর রহিমের ১৪৪ রানের ম্যারাথন ইনিংস নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা কিছু ইনিংসের একটি। কিন্তু ২০১৮ এশিয়া কাপের বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা ম্যাচের পোস্টারবয় আরেকজন। তিনি তামিম ইকবাল। ম্যাচের শুরুতেই সুরঙ্গা লাকমলের বলে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন। জানলেন আঙুলই ভেঙে গিয়েছে। 

যেখানে হাত নাড়ানো মুশকিল, সেখানে তামিম করলেন ভিন্ন কিছু। নবম উইকেট পতনের পর ব্যান্ডেজ হাতে আবার ক্রিজে ড্যাশিং এই ওপেনার। তামিম নিজে যাকে পরে বলেছিলেন, মোমেন্ট অব ম্যাডনেস। তামিম সেবার পরে নেমে এক বলই খেলেছেন। কিন্তু রূপকথা তৈরি হতে ওই এক বলই যথেষ্ট। বাংলাদেশ ম্যাচটা জিতেছিল বড় ব্যবধানে। 

অনন্য সাঙ্গাকারা (২০১৯) 

বিশ্বকাপটা যখন খেলতে এসেছেন তখন কুমার সাঙ্গাকারার বয়স ৪২। যে বয়সে আর সকলে হয়ত ব্যাট-প্যাড খুলে রাখতেন সেই বয়সেও সাঙ্গাকারা ছিলেন অনন্য, অপ্রতিরোধ্য। ৪২ বছর বয়সেও তিনি যেন ২৭ বছরের তরুণ। বাংলাদেশের বিপক্ষে আগেও ৪ বার শতকের দেখা পেয়েছিলেন। ২০১৯ বিশ্বকাপেও শতক হাঁকিয়েছেন। তবে সেই সেঞ্চুরির মর্ম ছিল একটু অন্যরকম। 

বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরির মধ্য দিয়ে এক বিশ্বকাপে টানা ৪ ম্যাচে সেঞ্চুরির বিরল এক রেকর্ড গড়েছিলেন সাঙ্গা। সেই বিশ্বকাপের পর অবশ্য সাদা বলের ক্রিকেটকে বিদায় বলেছিলেন। তবে যাবার আগে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কেন তিনি ওয়ানডে ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা এক ব্যাটার।

জেএ