সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে পর্দা উঠল ক্রিকেটের অন্যতম প্রেস্টিজিয়াস টুর্নামেন্ট এশিয়া কাপের। ৬ জাতির এই টুর্নামেন্টে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া ৫ এশিয়ান দেশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাছাইপর্ব পেরিয়ে আসা নেপাল। এবারের এশিয়া কাপকে বিশ্বকাপ প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই দেখছে দলগুলো। 

১৯৮৪ সালে যাত্রা শুরু হয়েছিল এশিয়া কাপ টুর্নামেন্টের। দুই বছর পরে অনুষ্ঠিত আসর থেকেই বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে আসছে। এখন পর্যন্ত এশিয়া কাপের ১৫টি আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার মধ্যে দুটি আসর ছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের। বাকি ১৩টি ছিল ওয়ানডে সংস্করণের।

এশিয়া কাপ ক্রিকেটে সবচেয়ে সফলতম দল ভারত ও শ্রীলঙ্কা। অন্যদিকে, তিনবার এশিয়া কাপের ফাইনালে খেললেও এখনো শিরোপাখরা ঘোচাতে পারেনি বাংলাদেশ। এবার বড় কিছুর স্বপ্ন সাকিব আল হাসান বাহিনীর। 

পাকিস্তানের সংগ্রহ ৩৪২/৬ (৫০ ওভার)

নেপালের সংগ্রহ ১০৪/১০ (২৩.৪ ওভার)

এশিয়া কাপে নেপালের শোচনীয় শুরু

পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৩৮ রানের বড় ব্যবধানে হেরে গেছে প্রথমবার এশিয়া কাপ খেলতে আসা নেপাল। তুলনামূলক দুর্বল দলটিকে দাঁড়াতেই দেয়নি পাকিস্তানি বোলাররা। এর আগে শুরুতে ব্যাট করে পাকিস্তান ৩৪৩ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য দাঁড় করায়। সেই রানের সামনে শুরু থেকেই দিশেহারা ছিল নেপাল। প্রথম দুই ওভারে তারা তিন উইকেট হারিয়ে বসে।

এরপর ৬০ রানের জুটি গড়ে পাল্টা লড়াইয়ে স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন আরিফ শেখ ও সোমপাল কামি। কিন্তু তাদের ‍বিদায়ের পর আর কেউই সেভাবে পাকিস্তানি বোলারদের সামনে দৃঢ়তা দেখাতে পারেননি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে মাত্র ২৩.৪ ওভারেই গুটিয়ে যায় ‘খর্বকায়’ দলটি। নেপালের হয়ে সর্বোচ্চ ২৮ রান করেছেন সোমপাল, এছাড়া আরিফের ব্যাটে ২৬ এবং গুলশান ঝা করেন ১৩ রান।

বিপরীতে পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন শাদাব খান। এছাড়া দুটি করে শিকার করেছেন শাহিন আফ্রিদি ও হারিস রউফ।

হারের দ্বারপ্রান্তে নেপাল

দলীয় একশ রানের আগেই ৮ উইকেট হারিয়ে বসেছে নেপাল। প্রথম পাঁচ উইকেট পাকিস্তানি পেসাররা ভাগাভাগি করে নিলেও পরের দুই শিকার স্পিনার মোহাম্মদ নওয়াজ ও শাদাব খানের। তার মধ্যে শাদাব এক ওভারেই দুই উইকেট নিয়ে নেপালের ব্যবধান কমানোর আশা গুড়েবালিতে পরিণত করেছেন। মাত্র ২২ ওভারেই নেপাল ৯১ রানে ৮ উইকেট হারিয়েছে। ফলে হারের একেবারে দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে প্রথমবার এশিয়া কাপ খেলতে আসা দলটি।

এর আগে ইনিংসে ২০তম ওভারে নওয়াজের ডিফেন্ড করার চেষ্টাতেও ব্যর্থ হয়েছেন দীপেন্দ্র সিং আয়রে। বোল্ড হওয়া এই ব্যাটার মাত্র ৩ রান করেছেন। পরের ওভারে শাদাব খানের ওভারে আউট গুলশান ঝা ও সন্দ্বীপ লামিচানে। গুলশান করেছেন নেপালের হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান ১৩।

আফ্রিদি-নাসিমের দলে যোগ দিলেন রউফ

গড়ে ১৪৫-এর উপরে গতি দিচ্ছেন হারিস রউফ। পাকিস্তানি এই বোলার আক্রমণে আসার আগে বেশ অনায়াসে ব্যাট করছিল নেপাল। যার ফলে দুজনের জুটিতে শুরুর ধাক্কা ভালোভাবেই সামাল দিচ্ছিল। মাত্র ১৪ রানে তিন উইকেট হারানো নেপালকে আরিফ শেখ ও সোমপাল কামির জুটি ৬০ রান এনে দিয়েছে। যার ওপর ভর করে পাল্টাই লড়াই চালাচ্ছিল তুলনামূলক দুর্বল দলটি। এরপরই রউফের জোড়া আঘাত, প্রথমে তার ১৪৬ গতিতে ফেলা বলটি স্টাম্প ছেড়ে খেলতে গিয়েই বোল্ড আরিফ শেখ।

ফলে সোমপাল কামির সঙ্গে গড়া তার জুটি ভেঙে গেছে। এরপর মাঝে এক ওভার করেছেন লেগ-স্পিনার শাদাব খান। ওই ওভারে একটি ছয়ের বাউন্ডারি খেলেন নতুন ব্যাটার গুলশান ঝা। কিন্তু পরের ওভারে রউফ ফিরতেই রানের গতি থেমে যায় নেপালের। তার আগের ওভারে সঙ্গীকে হারানো সোমপালও এবার রউফের শিকার। ব্যক্তিগত ২৮ রানে তিনি উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানের তালুবন্দী হয়েছেন।

শক্ত জুটিতে নেপালের পাল্টা লড়াই

মাত্র ১৪ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে খাদের মুখে পড়ে গিয়েছিল নেপাল। মনে হচ্ছিল পাকিস্তানের সাড়ে তিনশ ছোঁয়া রানপাহাড়ে তারা চাপা পড়তে যাচ্ছে। তবে সেখান থেকে পাল্টা লড়াই শুরু করেছে এশিয়া কাপে প্রথম খেলতে আসা দলটি। ইতোমধ্যে আরিফ শেখ ও সোমপাল কামির জুটিতে নেপাল আরও ৫০ রান পেয়ে গেছে।

এখন পর্যন্ত ৭৬ বলে তাদের দুজনের ব্যাটে এসেছে ৫৯ রান। আরিফ ৩৪ বলে ২৬ এবং সোমপাল অপরাজিত আছেন ৪০ বলে ২৮ রানে। হারিস রউফের বলে তাদের কিছুটা নড়বড়ে মনে হলেও অন্য বোলারদের অনায়াসেই খেলছেন দুই নেপালি ব্যাটার। 

আফ্রিদি-নাসিমে দিশেহারা নেপাল

পাকিস্তানের দেওয়া পাহাড়সম রান তাড়ায় শুরু থেকেই দিশেহারা নেপাল। তারকা পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির দুই বলেই তারা দুই উইকেট হারিয়েছে। এর আগে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা অবশ্য পরপর দুটো চার দিয়ে করেছিল প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ খেলতে আসা দলটি।

এর পরের দুই বলে সিঙ্গেল রান। পঞ্চম ডেলিভারিতে লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরের দিয়ে যাওয়া বলে ব্যাটের কোনা লাগিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন নেপালের ওপেনার কুশাল ভুরটেল। ৪ বলে তিনি ৮ রান করেন। এরপর ক্রিজে নামা অধিনায়ক রোহিত কুমার পৌডেল পড়েছেন আফ্রিদির লেগ বিফোরের ফাঁদে। তিনি রানের খাতা খুলতে পারেননি।

দ্বিতীয় ওভারে আক্রমণে এসে নিজের প্রথম ও পাকিস্তানের তৃতীয় উইকেট তুলে নিয়েছেন নাসিম শাহ। তার তৃতীয় ডেলিভারিতে চার মারার পরের বলেই স্লিপে ইফতিখারের তালুবন্দী হয়েছেন আসিফ শেখ। এর আগে তার ব্যাটে আসে ৫ রান।

দুই সেঞ্চুরিতে রানের পাহাড় পাকিস্তানের

শেষ ১০ ওভারে ১২৯ রান!

প্রথম ২২ ওভারে কোনো রকমে একশ পেরোনো পাকিস্তান নির্ধারিত ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে জমা করল ৩৪২ রান। ঘরের মাঠ মুলতানে রীতিমতো ঝড় তুললেন দুই পাকিস্তানি ব্যাটার বাবর আজম ও ইফতিখার আহমেদ। পাকিস্তান অধিনায়কের দেড়শ ছাড়ানো ইনিংস খেলার দিনে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির আক্ষেপ ঘোচালেন ইফতিখার। আর তাতে নেপালের বিপক্ষে এশিয়া কাপ উদ্বোধনী ম্যাচে রানের পাহাড় গড়েছে স্বাগতিকরা।

ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি ইফতিখারের

ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবার ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছালেন ইফতিখার আহমেদ। মাত্র ৬৭ বলে ১০০ রান পূর্ণ করলেন পাক এই ব্যাটার। 

 

 সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন বাবর

মাইলফলক ছুঁতে অপেক্ষাটা ছিল অনেকটা সময়ের। বাবর সময়ও নিলেন। ধীরে সুস্থে খেলছিলেন। ৪২ তম ওভারে আইরের বল ডিপ পয়েন্টে ঠেলে দিয়েই ২ রান পূর্ণ করলেন। আর তাতে পূর্ণ হলো সেঞ্চুরিও। ১০৯ বলে ১০০!

গেল মে মাসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ ওয়ানডেতে দ্রুততম ১৮ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন বাবর আজম। আজ নেপালের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের ১৯তম সেঞ্চুরি হাঁকালেন। সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে সর্বাধিক সেঞ্চুরির রেকর্ড এটিও। ক্যারিয়ারের ১৯ তম সেঞ্চুরি পেতে বাবর খেললেন মোটে ১০২ ইনিংস।

 

আবারো বিপদে পাকিস্তান

শুরুর ব্যাটিং ব্যর্থতা ভুলে বাবর-রিজওয়ানের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল পাকিস্তান। দুজনই ছিলেন ব্যক্তিগত অর্ধশতকের দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু দিনটা যেন পাকিস্তানের হয়ে কথা বলছে না কোনোভাবেই! ইমাম উল হকের পর দিনের দ্বিতীয় রানআউটের শিকার উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া মোহাম্মদ রিজওয়ান। সন্দ্বীপ লামিচানের বল কাভারে ঠেলেই সিঙ্গেল নিতে চেয়েছিলেন। প্রান্ত বদল পূর্ণ করার আগেই দিপেন্দ্রা সিং আইরের থ্রোয়িং থেকে ননস্ট্রাইকিং প্রান্তের স্ট্যাম্প ততক্ষণে উড়ে গেছে। ৫০ বলে ৪৪ করেছেন রিজওয়ান।

রিজওয়ানের পর নামলেন আর উঠলেন তরুণ ব্যাটার আগা সালমান। এবারো বোলার সেই লামিচানে। রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়েছিলেন পাক ব্যাটার। ঠিকঠাক খেলতে পারেননি। কুশাল ভুরটেলের হাতে ধরা পড়ে ১৪ বলে মাত্র ৫ রান করে ফিরে গেছেন তিনি।

 

১২তে ৮ ফিফটি, ছুটছেন বাবর

বিশ্বকাপের বছরে হাসছে বাবর আজমের ব্যাট। চলতি বছর ১২ ওডিআইতে ৮টি ফিফটি হাঁকিয়েছেন পাক অধিনায়ক। আজ নেপালের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের ২৯ তম ফিফটির দেখা পেলেন তিনি। 

পাকিস্তানের ১০০

২৫ রানে ২ উইকেট পতনের পর অভিজ্ঞ দুই ব্যাটার বাবর আজম ও রিজওয়ানের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়াল পাকিস্তান। দলীয় শতক এসেছে ২২তম ওভারে। ৪১ রানে অপরাজিত আছেন বাবর। রিজওয়ানের সংগ্রহ ৩৯ রান।

 

২৫ হাজার দর্শক

মুলতান ক্রিকেট গ্রাউন্ডে দর্শক ধারণক্ষমতা ৩০ হাজার। এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচটি মাঠে বসে উপভোগ করছে ২৫ হাজার মানুষ।

 

৫ বলের ব্যবধানে ২ উইকেট নেই পাকিস্তানের

কে বলবে প্রথমবার এশিয়া কাপ খেলতে নেমেছে নেপাল! ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষে থাকা পাকিস্তানের বিপক্ষে বল হাতে শুরুটা হয়েছে দারুণ। স্কোরবোর্ডে ২৫ রান যোগ করতেই দুই উইকেট হারিয়ে ফেলেছে স্বাগতিকরা। আরেকটু পরিষ্কার করে বলতে গেলে ৫ বলের ব্যবধানে ২ উইকেট তুলে নিয়েছে নেপাল।

ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে কারান এলসির বলে সাজঘরে ফিরে গেছেন পাক ওপেনার ফখর জামান। তিনি করেছিলেন ২০ বলে ১৪ রান। ফখরের পর দুর্ভাগ্যজনক রানআউটের শিকার হয়েছেন আরেক তারকা ব্যাটার ইমাম-উল-হক। সোমপাল কামির ফুলার লেন্থের বল মিডঅফে খেলেছিলেন ইমাম। অনায়াসে সিঙ্গেল নেওয়া যায়। ফিল্ডিং প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা রোহিত কুমারের সরাসরি থ্রোয়িংয়ে শেষ রক্ষা হয়নি ইমামের। আউট হওয়ার আগে ১৪ বলে ৫ রান করেছেন তিনি।

শুরুতেই সাফল্য পেল নেপাল 

দুর্দান্ত ক্যাচ আসিফ শেখের!

উদ্বোধনী ম্যাচে ব্যাট হাতে রাঙাতে পারলেন না পাকিস্তানের ওপেনার ফখর জামান। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে কারান এলসির বল ঠিকভাবে খেলতে পারেননি পাক এই উদ্বোধনী ব্যাটার। ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় উইকেটের পেছনে। ঝাঁপিয়ে পড়ে দু’হাতে ক্যাচ তালুবন্দি করলেন আসিফ শেখ। সাজঘরে ফেরার আগে ২০ বলে ১৪ রান করেছেন ফখর।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে পাকিস্তান

মুলতান ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নিয়েছে বাবর আজমরা। হাইব্রিড মডেলের এশিয়া কাপে আইসিসির ওয়ানডে টিম র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষে থেকে মাঠে নামছে পাকিস্তান।

অন্যদিকে, প্রথমবার খেলতে এসেই উদ্বোধনী দিনে বড় পরীক্ষার মুখে পড়তে হচ্ছে নেপালকে। দুইবারের এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামবে রোহিত পৌডেলের নেতৃত্বাধীন দলটি। তবে বড় প্রতিপক্ষের সামনে ভীত নন নেপাল অধিনায়ক। জানালেন, যোগ্য দল হিসেবেই এবারের এশিয়া কাপে এসেছেন তারা।

পাকিস্তান একাদশ

বাবর আজম (অধিনায়ক), শাদাব খান, ফখর জামান, ইমাম-উল হক, সালমান আলী আগা, ইফতিখার আহমেদ, মোহাম্মদ রিজওয়ান (উইকেটরক্ষক), মোহাম্মদ নওয়াজ, শাহীন আফ্রিদি, নাসিম শাহ ও হারিস রউফ।

নেপালের একাদশ

রোহিত কুমার পৌডেল (অধিনায়ক), মোহাম্মদ আসিফ শেখ, কুশাল ভুরটেল, ললিত নারায়ণ রাজবানশি, কুশাল মাল্লা, দিপেন্দ্রা সিং আইরে, সন্দ্বীপ লামিচানে, কারান এলসি, গুলশান কুমার ঝা, আরিফ শেখ ও সোমপাল কামি।

এফআই/এএইচএস