ফাইল ছবি

ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের কারণে অনিশ্চয়তার সুতোয় ঝুলছিল এশিয়া কাপের ভাগ্য। ভারতের আপত্তির মুখে আয়োজক পাকিস্তানের পক্ষ থেকে একাধিক মডেলের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। কিন্তু কোন কিছুতেই যেন মন গলছিল না চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের! অন্যদিকে টুর্নামেন্টকে আলোর মুখ দেখাতে মরিয়া ছিল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। মাস তিনেকের 'নাটক' শেষে অবশ্য এক বিন্দুতে মিলেছে ভারত-পাকিস্তান। ফলে আগামী ৩০ আগস্ট থেকে মাঠে গড়াচ্ছে এশিয়া সেরার লড়াই।

এশিয়া কাপের এবারের আসরে অংশ নেবে ছয় দল। এই ছয় দলের সম্ভবনা নিয়ে ধারবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে ঢাকা পোস্ট। আজ প্রথম পর্বে থাকছে প্রথমবারের মতো মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়া নেপালের স্কোয়াড নিয়ে কাটা-ছেঁড়া। 

আইসিসির পূর্ণ সদস্য হিসেবে সরাসরি এশিয়া কাপের মূল পর্বে খেলছে ৫টি দেশ-ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। পাশাপাশি কোয়ালিফায়ার পর্ব পেরিয়ে এসেছে নেপাল। এশিয়া সেরার মঞ্চে পারফর্ম করার সুযোগ পেতে বেশ কাঠ-খর পোড়াতে হয়েছে আইসিসির সহযোগী এই দেশকে।

গত এপ্রিল-মেতে নেপালের মাটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে এসিসি মেন্স প্রিমিয়ার কাপ। ১০ দলের এই টুর্নামেন্টে দুটি গ্রুপ ছিল। যেখানে গ্রুপ 'এ'তে ছিল নেপাল, ওমান, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও কাতার। অন্যদিকে গ্রুপ 'বি'তে ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, হংকং, বাহরাইন ও সিঙ্গাপুর।

চার ম্যাচে ৩ জয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে 'এ' গ্রুপ থেকে শীর্ষ দল হিসেবে ফাইনালে কোয়ালিফাই করে নেপাল। সেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে আরব আমিরাতকে পায় সন্দ্বিপ লামিছানের দল। পহেলা মে কিরিতপুরের ফাইনালে স্বাগতিক দর্শকদের ঢল নামে। নেপালিদের ক্রিকেট প্রেম সেদিন স্যালুলয়েডের পর্দায় দেখেছে পুরো বিশ্ব। জন সমুদ্রে রূপ নেয়া ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় মাঠের গ্যালারিতে থাকা হাজারো ভক্তের গলা ফাটানো সমর্থনের সেদিন প্রতিদান দিয়েছিলেন লামিছানে-ললিতরা। ৭ উইকেটের সহজ জয়ে দেশটার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাফল্যটা আসে সেদিনই। তাতে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের টিকিট পায় নেপাল।

স্বপ্নের মঞ্চে পারফর্ম করতে ইতোমধ্যেই পাকিস্তানের মাটিতে পা রেখেছে নেপাল। তবে দলের সঙ্গে যেতে পারেননি লামিছানে। এই স্পিনারকে ছাড়াই গতকাল মুলতানের বিমান ধরেছে স্কোয়াডের বাকি ১৬ সদস্য। লামিছানে দলের সঙ্গে যেতে পারেননি মামলার হাজিরা থাকায়। নেপালের এই লেগ স্পিনারের বয়সটা এখন ২৩ এর ঘরে। অথচ এই সময়ের মধ্যেই মুদ্রার দুই পিঠই দেখে ফেলেছেন তিনি। বাইশ গজে পুরোটা সময় জুড়েই রঙ ছড়িয়েছেন। তবে মাঠের বাইরের কান্ডে কালো ছাপ পড়েছে তার ক্যারিয়ারে। ধর্ষণ মামলায় জেলেও যেতে হয়েছে তাকে। যদিও সেই অন্ধকার পেরিয়ে আবারও ভোর এসেছে তার জীবনে। ক্রিকেটে ফিরেছেন মাস চারেক হয়েছে। কিন্তু এখনও মামলা থেকে পুরোপুরি মুক্তি মেলেনি। তবে ম্যাচ খেলতে তার বাধা নেই। আদালতে হাজিরা শেষে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই দলের সঙ্গে যোগ দেবেন তিনি। তার দিকেই যে তাকিয়ে পুরো দেশ!

এশিয়া কাপের মতো বড় মঞ্চে অভিজ্ঞতা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে দেশটার ১৭ জনের স্কোয়াডে বাকিদের থেকে ঢের এগিয়ে লামিছানে। একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার অভিজ্ঞতা আছে এই লেগ স্পিনারের। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লিগেও মাথা ঠান্ডা রেখে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। খেলেছেন বিগব্যাশ লিগ, পিএসএল, বিপিএল, সিপিএল কিংবা দ্য হানড্রেডের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ধারাবাহিক তিনি। নেপালের জার্সিতে ৪৮ ম্যাচে শিকার করেছেন ১১১ উইকেট। যেখানে তিনি ওভারপ্রতি খরচ করেছেন চারের একটু বেশি রান। যা যেকোনো বিচারেই একজন লেগ স্পিনারের জন্য ঈর্ষণীয়! সাম্প্রতিক ফর্মও তার পক্ষেই কথা বলছে। সর্বশেষ খেলা ১০ ম্যাচে শিকার করেছেন ১৮ উইকেট। তবে পরিসংখ্যান তার বোলিংয়ের ধার বুঝানোর জন্য যথেষ্ট নয়। ব্যাটারের ধরন বুঝে স্ট্রেট, গুগলি কিংবা লেগ স্পিন সবই করতে পারেন তিনি। তাই সবমিলিয়ে এই এশিয়া কাপে নেপাল অধিনায়ক রুহিত প্যাডেলের ট্রাম্প কার্ড হবেন লামিছানে।

নেপালকে ভালো শুরু এনে দেওয়ার মূল দায়িত্বটা থাকবে কুশল ভার্তেলের কাঁধে। এই ওপেনারের অভিজ্ঞতা আর সাম্প্রতিক ফর্ম সে কথাই বলছে। সর্বশেষ ১০ ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৯৭ রান। স্ট্রাইকরেটটাও প্রায় ৮৮। তার সঙ্গে ইনিংস ওপেন করবেন অর্জুন সউদ। একই সঙ্গে উইকেট সামলানোর দায়িত্বও থাকবে সৌধের ওপর। এছাড়া টপ অর্ডারে আছেন আরাফ শেখ, দিপেন্দ্র সিং আইরির মতো ব্যাটাররাও।

মিডল অর্ডারে দেশটার বড় ভরসার নাম রোহিত। নেতৃত্ব সামলানোর পাশপাশি ব্যাটিংয়েও দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন এই ব্যাটিং অলরাউন্ডার। তাছাড়া মিডল অর্ডারে থাকবেন কারান কেসি, কুশল মাল্লা, অর্জুন সৌধ ও বিম শাকরির মতো ব্যাটাররা। 

আরও পড়ুন: হিথ স্ট্রিকের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা

নেপালের বড় শক্তির জায়গা তাদের স্পিন বিভাগ। যেখানে নেতৃত্ব দেবেন লামিছানে। তবে ললিত রাজবংশীও সাম্প্রতিক সময়ে দুর্দান্ত বোলিং করছেন। এই স্পিনারকেও নিশ্চয়ই মার্ক করবে প্রতিপক্ষ দল। তাছাড়া মৌসুম ধাকালও হাত ঘুরাতে পারেন।

পেস বিভাগে বড় কোনো নাম না থাকলেও বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান আছেন। যার মধ্যে গুলশান ঝা অন্যতম। তাছাড়া কারান কেসি, কিশোর মাহাতাও, প্রাতিস জিসি, সম্পাল কামিরাও নিজের দিনে প্রতিপক্ষের জন্য হুমকি হতে পারেন।

আরও পড়ুন: উইজডেনের চোখে এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সেরা একাদশ

সবমিলিয়ে এবারের এশিয়া কাপে নেপালের জন্য হারানোর খুব বেশি কিছু নেই। তবে পাবার আছে অনেক। হতে পারে এই আসর থেকেই পাল্টে যাবে দেশটির ক্রিকেটের গতি পথ।

নেপাল স্কোয়াড : রোহিত প্যাডেল (অধিনায়ক), আসিফ শেখ, কুশল ভার্তেল, ললিত রাজবংশি, ভিম শারকি, কুশাল মাল্লা, দিপেন্দ্র সিং আইরি, সন্দীপ লামিছানে, কারান এলসি, গুলশান ঝা, সোমপাল কামি, আরাফ শেখ, প্রতিশ জিসি, কিশোর মাহাতো, সুন্দীপ জোরা, অর্জুন সউদ ও শ্যাম ধাকাল।

এইচজেএস