পাকিস্তানের একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ ট্রফি এসেছিল ইমরান খানের হাত ধরে। তাকে দেশটির সর্বকালের সেরা অধিনায়কদের মধ্যে শুরুতেই রাখা হয়। তবে পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইমরান বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতা হিসেবে বর্তমানে কারাগারে আছেন। দেশটির স্বাধীনতা দিবসে এই কিংবদন্তি ক্রিকেটারকে ছাড়াই একটি ভিডিও বানিয়েছে ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। সরকার বিরোধী হওয়ায় পিসিবি ইমরানকে ভিডিওতে না রাখার অভিযোগ উঠেছে!

পাকিস্তান ক্রিকেটের অফিশিয়াল পেজ থেকে ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে ওই ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। যেখানে দেখানো হয়, ১৯৯২ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য ওয়াসিম আকরাম, জাভেদ মিয়াঁদাদসহ অন্য তারকারা থাকলেও সেখানে অধিনায়ক ইমরানের জায়গা হয়নি। তবে ওই ভিডিওতে আছেন শোয়েব আখতার, ওয়াকার ইউনিস, শহীদ আফ্রিদি ও বাবর আজমদের মতো পরবর্তী তারকারা।

পাকিস্তান ক্রিকেটের স্মরণীয় অনেকগুলো মুহূর্ত স্থান পেয়েছে তারকা ক্রিকেটারদের উৎসর্গ করা ওই ভিডিওতে। ১৯৮৬ এশিয়া কাপে জাভেদ মিয়াঁদাদের বিখ্যাত ছক্কা, ১৯৯২ বিশ্বকাপ জয়, ২০০০ সালে জেতা পাকিস্তানের প্রথম এশিয়া কাপের মুহূর্ত, ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের ফুটেজ, ২০১২ এশিয়া কাপ ও ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের বিভিন্ন মুহূর্তও এতে দেখানো হয়েছে। 

ভিডিও’র ক্যাপশনে বলা হয়, ‘শুধুমাত্র একদিনেই ইতিহাস গড়ে উঠেনি। এটি সেই চিত্র যা কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা বানিয়েছেন এবং সেই গল্পই আমরা বলছি। পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সেই উত্তরাধিকার এখনও সময়ান্তরে অক্ষত রয়েছে।’

যাইহোক এই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে আপলোড করার পর থেকে তুমুল সমালোচনায় মাতেন ক্রিকেটভক্তরা। প্রায় সবারই এক প্রশ্ন ২ মিনিট ২১ সেকেন্ডের ভিডিওতে ‘৯২-এর বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খান কোথায়? কেউ কেউ খুঁজছেন ওই দলটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মোহাম্মদ ইউসুফ এবং সাঈদ আনোয়ারকেও। বলে রাখা ভালো, এক বছরে টেস্টে সর্বোচ্চ রান করার রেকর্ড এখনও ইউসুফের অধীনেই রয়েছে।

২০০৬ সালে মাত্র ১১ ম্যাচেই ১৭৮৮ রান করেছিলেন ইউসুফ। তার ৯৯.৩৩ গড়ও বিশ্বসেরা ব্যাটারদের জন্য ঈর্ষণীয়। ওই সময় পাকিস্তানের ডানহাতি এই ব্যাটার ৯টি সেঞ্চুরি এবং তিনটি হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন। অন্যদিকে, ১৯৯৭ সালে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে অপরাজিত ১৯৪ রান করা সাঈদ আনোয়ারের ইনিংসটি দীর্ঘদিন তো ফরম্যাটটিতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ক্যামিও ছিল। পাকিস্তানের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ এবং ১৮টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই তারকা ক্রিকেটার।

টুইটারে পিসিবির অফিসিয়াল পেইজে দেওয়া ভিডিওর নিচে পাকিস্তানের ক্রিকেট সংবাদকর্মী ফরিদ খান লিখেছেন, ‘১৯৯২ বিশ্বকাপজয়ী ইমরান খান নেই, তাকে উল্লেখ করা হয়নি, সেলিব্রেশন ফটোতেও নেই। প্রথম ভিডিওতে লাইক দিয়েছিলাম, পরে তুলে নিলাম।’

পাকিস্তানের হয়ে টেস্টে ইমরান খানের উইকেট ৩৬২টি, রান করেছেন ৩৮০৭। ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৮২ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি করেছেন ৩৭০৯ রান। ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ার শেষে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন ইমরান। এরপর ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন। তবে বিরোধীদের অনাস্থা ভোটে গত বছর প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হয় ইমরানকে। সম্প্রতি ইমরান খানকে তোশাখানা মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের তৎপরতা শুরু হয়েছে দেশটিতে।

এএইচএস