২০০৬ সালের ০৬ আগস্ট। জিম্বাবুয়ের হারারে স্পোর্টস ক্লাবের মাঠে নিয়মরক্ষার ম্যাচে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। আগেই সিরিজ হার নিশ্চিত। তাই এদিন স্কোয়াডে কিছু পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। সেই পরীক্ষার অংশ হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন ১৯ বছরের এক তরুণ। নাম তার সাকিব আল হাসান। 

সেদিন বাংলাদেশ খেলেছিল দাপুটে এক ম্যাচ। জিম্বাবুয়েকে আটকে ফেলে ২০০ রানের নিচে। শাহরিয়ার নাফিস খেলেছিলেন শতরানের ইনিংস। তবে এর মাঝেও আলাদা করে নজরে ছিলেন ১৯ বছরের সাকিব। ৪০ রান আর এক উইকেট দিয়ে অভিষেকেই জানান দিয়েছিলেন নিজের উপস্থিতি। 

সেদিনের সেই সাকিব দিনে দিনে পরিণত হয়েছেন। দেশের সেরা প্রতিভা থেকে হয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন অনন্য এক উচ্চতায়। যেখানে তার সঙ্গে তুলনা চলে ইমরান খান, ইয়ান বোথাম, জ্যাক ক্যালিস কিংবা স্যার গ্যারিফিল্ড সোবার্সের মত নামের সাথে। 

তরুণ সাকিব (বামে) পরিণত সাকিব (ডানে)

রেকর্ড সাকিবের নিত্যসঙ্গী। গত ১৭ বছরে অজস্র রেকর্ডের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন ৭৫ নাম্বার জার্সিধারী সাকিব। অলরাউন্ডার হিসেবে এমন সব কীর্তি তিনি গড়েছেন, যা হয়ত অন্য যে কারোর জন্য নিছকই স্বপ্ন। 

টেস্ট ক্রিকেট থেকেই শুরু করা যাক। ক্রিকেট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত আরাই হাজারের বেশি টেস্ট ম্যাচ হয়েছে। এর মাঝে কেবল চারজন একই ম্যাচে শতক আর দশ উইকেট পাওয়ার কীর্তি গড়েছেন। তাদের একজন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান। সেইসঙ্গে এক হাজার রান এবং ১০০ উইকেট কিংবা একই ইনিংসে পাঁচ উইকেট এবং শতরানের রেকর্ডেও আছে তার নাম। 

টেস্ট ক্রিকেটের সাদা রঙে সাকিব

ওয়ানডে ফরম্যাটে আরও বেশি রঙিন মাগুরার এই সন্তান। এক টুর্নামেন্টে ২৫০ রান আর ১০ উইকেট শিকারের এলিট ক্লাবে আছেন সাকিব। সেটাও করেছেন বিশ্বকাপের মত মেগা আসরে। একমাঠে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারের রেকর্ড আছে সাকিবের। এমনকি ওয়ানডে ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি উইকেট পাবার তালিকায় শীর্ষ ১৫তেও আছেন বাংলার এই ক্রিকেটার। 

আরও পড়ুন: যে রেকর্ড সাকিব ছাড়া আর কারও নেই

ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম সংস্করণ টি-২০ তে এখনও বড় নাম হতে পারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু এখানে ব্যতিক্রম সাকিব। টি-২০ যুগে সাকিবের মত কার্যকরী খেলোয়াড় খুব কমই পেয়েছে ক্রিকেটবিশ্ব। আন্তর্জাতিক টি-২০ তে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারের রেকর্ড সাকিবেরই। এক ইনিংসে চার বা তারচেয়ে বেশি উইকেটে শিকারের রেকর্ডটাও তার। 

বিশ্বকাপ ২০১৯

তিন ফরম্যাট মিলিয়ে একই মাঠে সবচেয়ে বেশি রানের তালিকায় সাকিব আছেন দ্বিতীয় স্থানে। আর সবচেয়ে বেশি উইকেট লাভের ক্ষেত্রে সাকিবই সেরা। সবচেয়ে বেশিবার সিরিজ সেরার তালিকায় সাকিব আছেন ৩য় স্থানে (১৭ বার)।   

এত এত রেকর্ডের মাঝে সবচেয়ে অনন্য রেকর্ড ১৪ হাজার রান এবং ৬০০ উইকেট পাবার এলিট ক্লাবে যোগ দেয়া। এমন বিরল রেকর্ড নেই অন্য কোন ক্রিকেটারের। সবমিলিয়ে ৬৬ টেস্টে সাকিবের রান ৪ হাজার ৪৫৪। উইকেট ২৩৩। 

ওয়ানডে ফরম্যাটে করেছেন ৭ হাজার ২১১ রান। আর বল হাতে শিকার করেছেন ৩০৫ উইকেট। আর টি-২০ ফরম্যাটে ২ হাজার ৩৮২ রানের পাশাপাশি আছে ১৪০ উইকেট। 

বাংলাদেশের ক্রিকেটে অবিচ্ছেদ্য নাম সাকিব

কখনো বিতর্কে জড়িয়েছেন, কখনো ইনজুরিতে ছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের লাল-সবুজের জার্সিতে সাকিবের বিকল্প আজও আসেনি। দলের অধিনায়কত্ব বুঝে পেয়েছেন বহু আগেই। হয়ত সামনের বিশ্বকাপটাও তার নেতৃত্বেই খেলবে বাংলাদেশ। 

ব্যক্তিগত অর্জনে সমৃদ্ধ সাকিব দেশের জার্সিতে এখন বড় কোন শিরোপা জেতার অপেক্ষায়। সামনের এশিয়া কাপ আর বিশ্বকাপে হয়ত সেই আরাধ্য শিরোপাটাই ধরে দেখতে চাইবেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।  

জেএ