পিংকির সেঞ্চুরির উল্লাসে ভাসছে গাইবান্ধা
ফারজানা হক পিংকির সেঞ্চুরির উল্লাসে ভাসছে গাইবান্ধার ক্রীড়াঙ্গন। প্রথম বাংলাদেশি নারী ক্রিকেটার হিসেবে তার সেঞ্চুরির কীর্তি দেশের সীমা-রেখা ছাপিয়ে বিশ্বেও বাংলাদেশকে গর্বিত করেছে। গাইবান্ধার ক্রিকেটপ্রেমী হাজারো মানুষের অভিনন্দনে ব্যস্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক। ক্লিক করলেই মোবাইল, ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের স্কীনে কেবল পিংকিকে অভিনন্দনের পালা। গাইবান্ধার ক্রিকেট কোচ বাবলুর প্রত্যাশা পূরণের স্বপভরা চোখে ছিল আজকের এই পিংকিই। পিংকির এই অর্জন যেন উত্তরের জেলা গাইবান্ধাকে পরিচয় করিয়ে দিল আরো একবার।
আন্তর্জাতিক নারী ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে ইতিহাসের প্রথম নারী ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে সেঞ্চুরিয়ান এই ফারজানা হক পিংকির বাড়ি উত্তরের জেলা গাইবান্ধায়। ডানহাতি এই ব্যাটার শহরের পৌর এলাকার ব্রীজ রোডের আব্দুল হক-নার্গিস দম্পতির বড় মেয়ে।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (২২ জুলাই) ভারতের বিপক্ষে প্রথম বাংলাদেশি নারী ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করেন পিংকি। ১৫৬ বলে শত রান করেন। এতে ভারতের বিপক্ষে ৪ উইকেটে ২২৫ রানের বড় সংগ্রহ পায় টাইগ্রেসরা।
নারীদের ক্রিকেটে বাংলাদেশ সেঞ্চুরি পেয়েছিল আরও অনেক আগে। কিন্তু সেটি ছিল মালদ্বীপের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। ২০১৯ সালে মালদ্বীপের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টির সেদিনের ম্যাচে প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন নারী ক্রিকেটার নিগার সুলতানা জ্যোতি। তবে, সেদিনও পিছিয়ে ছিল না ফারজানা হক পিংকি। পিংকিও ওই দিনই পেয়েছিল টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরির স্বাদ। সেদিন মালদ্বীপের বিপক্ষে ৫৩ বলে ১১০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ডানহাতি এ ওপেনার। সে হিসেবে দুই ফরম্যাটে সেঞ্চুরি করা প্রথম বাংলাদেশি নারী ক্রিকেটার গাইবান্ধার ফারজানা হক পিংকিই।
২০১১ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হওয়া এই ক্রিকেটার ওয়ানডে ম্যাচে এখন পর্যন্ত করেছেন ১ হাজার ২৪০ রান। ওয়ানডে ক্রিকেটে পিংকিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক এবং তিনি ওয়ানডেতে হাজার রান ছাড়ানো একমাত্র বাংলাদেশি ব্যাটার।
আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচে প্রথম নারী সেঞ্চুরিয়ানের ফলক অর্জন করায় পরিবারেও বইছে আনন্দের বন্যা। ফারজানা হক পিংকির বাবা আব্দুল হক বলেন, আমার মেয়ের এমন অর্জনে আমাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজনসহ পুরো গাইবান্ধাবাসী আনন্দে আত্মহারা। এসময় এমন অর্জনে পিংকির ত্যাগের বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেন তার বাবা। তিনি জানান, মানুষ ঈদে যেখানেই থাক, বাড়িতে আসে ঈদ করতে কিন্তু পিংকি এই ওয়ানডে খেলার কারণেই কোরবানি ঈদের দশদিন আগে গাইবান্ধা থেকে ঢাকায় যায়।
পিংকির গাইবান্ধার কোচ মো.বাবলু খান জানান, একজন কোচের সব থেকে বড় পাওয়া তার খেলোয়ারদের অর্জন। পিংকির অর্জন মানেই আমান অর্জন, পিংকির সাফল্য মানেই আমার সাফল্য। ওয়ানডে ম্যাচে দেশের প্রথম নারী সেঞ্চুরিয়ান আমার তৈরী একজন নারী খেলোয়ার। এটাতে আমার ভিষণ ভালো লাগছে। আমার আর্শীবাদ থাকবে, পিংকি জীবনে অনেক বড় খেলোয়ার হবে। এসময় তিনি আরো বলেন, আজকে যারা গাইবান্ধা থেকে অনুশীলন করছে পিংকির আজকের সাফল্য এবং পাওয়া তাদেরকে আরো অনুপ্রাণিত করবে।
১৯৯৩ সালের ১৭ মার্চ গাইবান্ধা শহরের ব্রীজ রোডের ৯ নং ওয়ার্ডের একোয়েষ্টেট পড়ায় জন্মগ্রহণ করেন ফারজানা হক পিংকি। ব্যবসায়ী বাবার দুই ছেলে ও একমাত্র মেয়ে পিংকি। তিন ভাই-বোনেরর মধ্যে বড় পিংকিই। গাইবান্ধা শহরের মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিকের পর্যায় শেষ করে, গাইবান্ধার আসাদুজ্জামান গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজে মাধ্যমিকে ভর্তি হন পিংকি।
এসময়েই তিনি গাইবান্ধার ক্রিকেট কোচ মো: বাবুল খানের কাছে প্রথম ক্রিকেটের অনুশীলন শুরু করেন। এরপর ওই প্রতিষ্ঠান থেকে সপ্তম শ্রেণি শেষ করে ভর্তি হন বিকেএসপিতে। সেই থেকে হয়ে উঠেন আজকের সেঞ্চুরিয়ান ফারজানা হক পিংকি।
রিপন আকন্দ/এফআই