ফাইল ছবি

একটা সময় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্য ছিল হ্যালির ধুমকেতু! কালে-ভদ্রে জয়ের দেখা মিলতো। শুরু থেকেই এই ফরম্যাটটা গলার কাঁটা হয়ে ছিল! কিছুতেই যেন ২০ ওভারের ক্রিকেট হজম করতে পারছিল না টাইগাররা। এই সমস্যা সমাধানে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর দলের টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে অধিনায়ক, মাস কয়েকের ব্যবধানে পরিবর্তন আনা হয় সব জায়গায়। কিন্তু তাতেও অপরিবর্তিত ছিল পারফরম্যান্সের চাকা! একটু দেরিতে হলেও এবার সেটি ঘুরেছে। বদলে যাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেটে যেন 'লেইট বসন্ত'! 

গত কয়েক মাস ধরেই টি-টোয়েন্টিতে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। সেই হাওয়ায় ভেসে উন্নয়নয়ের নৌকা অনেকটা পথই এগিয়েছে। স্রোতের দিকেই যেন গা ভাসাতে পেরেছেন সাকিব-লিটনরা! অন্তত পরিসংখ্যান এমন কথাই বলছে। সর্বশেষ তিনটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজের সবকটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। এই সময়ে মোট ৮ ম্যাচে ৭ জয়ের বিপরীতে হার কেবল একটি। এমনকি এই সময়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশও করেছে সাকিবের দল। টাইগারদের এমন সাফল্যকে নতুন শুরু না বলে উপায় আছে?

টি-টোয়েন্টিতে এই পরিবর্তনের সূচনা গত বছরের অগাস্টে। প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোকে টি-টোয়েন্টি দল থেকে সরিয়ে শ্রীধরন শ্রীরামকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি দলের টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন বটে, আদতে এই ভারতীয় প্রধান কোচের ভূমিকাই পালন করেছেন।

বাংলাদেশে আসার পর শ্রীরামের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ছিল ২০২২ সালের এশিয়া কাপ। মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্বের সেই লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় বাংলাদেশ। এরপর আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ জিতলেও ছিল না প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স। এরপর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে পাকিস্তানসহ ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে যায় বাংলাদেশ। সেই আসরে চার ম্যাচের সবকটিতেই হেরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে অস্ট্রেলিয়ায় পা রাখে সাকিব আল হাসানের দল।

অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসকে ৯ উইকেটে হারিয়ে দুর্দান্ত শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু পরের ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বড় হার। এরপর জিম্বাবুয়েকে শেষ ওভারের নাটকে হারালেও ভারতের বিপক্ষে সহজ সমীকরণ মেলাতে পারেনি সাকিবের দল। আর শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরে দেশে ফেরে টাইগাররা। এই আসরের দুই জয়কে বড় সাফল্য হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূলপর্বে সেবারই প্রথমবার একাধিক জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। 

শ্রীরামের সঙ্গে সাকিব

 

আসর শেষে দেশে ফিরে দলের তখনকার টেকনিক্যাল ডিরেক্টর শ্রীরাম এমন পারফরম্যান্সে খুশি হওয়ার কথাই জানিয়েছিলেন। সংখ্যার বিচারে হয়তোবা এই দুইটা জয় আহামরি কিছু না। তবে বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে তারণ্য নির্ভর দল নিয়ে খেলার মতো যে সাহস দেখিয়েছিল বাংলাদেশ, পরবর্তীতে তা টনিক হিসেবে কাজ করেছে। শ্রীরাম বিশ্বকাপের পর চাকরি হারিয়েছেন, কিন্তু তার দেখানো সেই পথ ধরেই এখনো হাঁটছে বাংলাদেশ। 

কারণ সেই বিশ্বকাপ দিয়েই তারণ্যের নির্ভর স্কোয়াডের দিকে ঝুঁকে বাংলাদেশ। তাতে দ্রুত সময়েই ফলাফলও পেয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের পরপরই বাংলাদেশ সফরে আসে ইংল্যান্ড দল। সাম্প্রতিক সময়ে ঘরের মাঠে ওয়ানডেতে বেশ নাম-ডাক বাংলাদেশের। এই সিরিজের আগে টানা ৭ বছর দেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ হারেনি টাইগাররা। অথচ এমন সফল দলটাই ইংলিশদের বিপক্ষে পাত্তা পায়নি। তাই টি-টোয়েন্টি সিরিজে স্পষ্ট ফেভারিট হিসেবে মাঠে নেমেছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে ফলাফলটা ছিল বাংলাদেশ ৩, ইংল্যান্ড শূন্য।  

বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হোয়াইটওয়াশ করে যে আত্মবিশ্বাস পেয়েছিল বাংলাদেশ তা পরবর্তীতে অনেকটাই 'বিগ ব্যাঙের' মতো কাজ করেছে! আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে এক ম্যাচ হারলেও সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। আর সদ্য সমাপ্ত আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে ২-০ তে জয় বাংলাদেশের।

গত ৯ মার্চ থেকে ১৬ জুলাই, মাসের হিসেবে চার, আর ম্যাচের হিসেবে ৮। এই সময়টায় ১ হারের বিপরীতে বাংলাদেশের ৭টা জয়। এমন পারফরম্যান্সকে বসন্তের হাওয়া ছাড়া তুলনা করার মতো আর কি ই বা এই উপমহাদেশে আছে?

সেই যে ডোমিঙ্গোকে সরিয়ে শ্রীরামকে দিয়ে বীজ বপন করা হয়েছিল। সেই চারাটাতেই পানি দিয়ে পরিপক্ক গাছ করে তোলার চেষ্টায় চন্ডিকা হাথুরুসিংহে! গত চার মাসে তাতে ফলও ধরেছে! তা না হলে মাস চারেক আগেও যে দলটার ব্যাটিং অর্ডার ছিল এলো-মেলো, ওপেনিংয়ে তো বদল আসতো ম্যাজিক্যাল চেয়ারের মতো! এমনও হয়েছে ওপেনার চেয়ে রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু তাতেও যেন ধরা দিচ্ছিলো না সোনার হরিণ! 

অবশেষে রনি তালুকদার-লিটন দাসে আস্থা খুঁজে পেয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। তিন নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে নাজমুল হোসেন শান্তও প্রতিদান দিচ্ছেন। আর তৌহিদ হৃদয়-শামীম পাটোয়ারীরাও মিডল অর্ডারে আস্থার নাম হয়ে ওঠছেন। সবমিলিয়ে ব্যাটিং অর্ডার এখন অনেকটাই স্থিতিশীল। বোলিংয়েও উন্নতির ছাপ স্পষ্ট। বিশেষ করে পেস বিভাগে। ব্যাটিংয়ের মতো এখানেও তরুণ্যের জয়জয়কার। হাসান মাহমুদ-শরিফুলরা এখন সাকিবের জন্য ভরসার অস্ত্র!  

এইচজেএস