এক দশকের ব্যবধানে পৃথক দুটি ঘটনায় চাচা আকরাম খান এবং ভাতিজা তামিম ইকবাল খানের সাদৃশ্য পাওয়া গেছে। ২০১২ সালে প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছিলেন আকরাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধে তিনদিন পরই পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে তিনি দায়িত্বে যোগ দেন। ১১ বছর পর ভাতিজা তামিম ইকবালও ২৮ ঘণ্টার ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে অবসরের ঘোষণা প্রত্যাহার করে নিলেন।

গত এক দশকে আকরাম খানের পরিচয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক। গোটা দেশের কাছে আকরাম খান মানেই ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ের অধিনায়ক। যিনি বিসিবি পরিচালক হওয়ার আগে ছিলেন প্রধান নির্বাচকও। 

প্রায় বছর পাঁচেক প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পালনের পর আকরাম ২০১২ সালে আকস্মিকভাবে পদত্যাগ করেন। এশিয়া কাপের দল নির্বাচন নিয়ে বোর্ডের হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে পদত্যাগপত্র দেন তিনি। সেই সময় জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়কের পদত্যাগ ক্রীড়াঙ্গনে প্রচুর আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। 

আলোচনা-সমালোচনার পর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গড়ায়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আকরামের আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পরই পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করেন আকরাম। আকরামের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের সঙ্গে ওপেনার তামিম ইকবালও দলে পুনরায় সুযোগ পান। 

আকরাম খান পদত্যাগের পেছনে তৎকালীন বোর্ড সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামালের সঙ্গে মনোমালিন্য একটা কারণ ছিল। এক দশক পর ভাতিজা তামিম ইকবাল খানের আন্তর্জাতিক ক্রিকটে থেকে অবসরের ঘোষণার পেছনেও বর্তমান বোর্ড সভাপতিও একটা কারণ হিসেবে অনুমেয়! 

চাচার মতো ভাতিজার ক্ষেত্রেও একই চিত্রনাট্য। চাচা আকরাম খানের ঘটনার চেয়ে ভাতিজা তামিমের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী একটু দ্রুতই হস্তক্ষেপ করেছেন। গতকাল দুপুর দেড়টায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দেন বাংলাদেশের এই ওয়ানডে  অধিনায়ক। তামিমের ঘোষণার পরপরই বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেন তামিমের সঙ্গে। গতকাল রাতে অনুষ্ঠিত সভাতেও তামিমের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের অপেক্ষায় ছিল বোর্ড। তামিম বোর্ডের অনুরোধ আমলে না নিলেও প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে সায় দিয়েছেন। গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বিকেল সাড়ে ৫টায় অবসর প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। গণভবনে তামিমের সঙ্গে ছিলেন আরেক সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ও বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। 

তামিমের চাচা আকরাম খান প্রধান নির্বাচকের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে তৎক্ষণাৎ কাজে ফিরেছিলেন। সেই পদে ফিরে খুব বেশি দিন আর থাকেননি। ২০১৩ সালে পুনরায় পদত্যাগ করে বোর্ডের পরিচালক হয়েছেন। তামিম অবসর প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও ক্রিকেটে ফিরতে এক মাসের মতো সময় চেয়েছেন। পুনরায় ফিরে কতদিন গ্লাভস-প্যাড পড়বেন সেটাই এখন দেখার বিষয়!

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ক্রীড়াপ্রেমের কথা কারও অজানা নয়। প্রায় সব খেলারই তিনি খুটিনাটি খোঁজ রাখেন। ক্রীড়াঙ্গনে বিভিন্ন সময় উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সমাধান আসলেও সংশ্লিষ্ট খেলার কর্মকর্তাদের পরিচালনা-ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়!

এজেড/এএইচএস