মাঠ থেকে সম্মানজনক বিদায় পাচ্ছেন না কেউই, দায় কার?
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তামিম ইকবালের অবসরের ঘোষণা এখন টক অব দ্য টাউন। কম বলা হলো! দেশ ছাড়িয়ে বাংলাদেশের এই ওপেনারের বিষয়টি ছড়িয়ে গেছে ক্রিকেটবিশ্বে। চলমান আফগানিস্তান সিরিজের মাঝেই হুট করে এলো ওয়ানডে অধিনায়কের বিদায়ের খবর। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এটি নতুন নয়, এর আগে তিনি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটকে এভাবে বিদায় বলেছিলেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে টেস্টকে ‘না’ বলেছিলেন, তবে সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার কপালে তাও জোটেনি!
নতুন করে তামিমের এই বিদায়ের পর আরও একবার আলোচনায় এসেছে মাঠ থেকে বিদায়ের ইস্যু। এর আগে বাংলাদেশের আরও অনেক তারকাই ক্রিকেট ছেড়ে গেছেন। তবে, তাদের সবাইকেই বিদায় বলতে হয়েছে সংবাদ সম্মেলন কিংবা ফেসবুক স্ট্যাটাসে।
বিজ্ঞাপন
দেশের ক্রিকেটে মাঠ থেকে বিদায় নেওয়া যেন একেবারেই দুর্লভ এক ঘটনা। খালেদ মাসুদ পাইলট, হাবিবুল বাশার সুমন থেকে শুরু করে আশরাফুল, মাশরাফি হয়ে সবশেষ উদাহরণ তামিম ইকবাল। প্রায় একই পথে হাঁটছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও।
সিলেটে নিজের শেষ ম্যাচে মাশরাফি অবশ্য পেয়েছিলেন সাদামাটা বিদায়। তামিম ইকবালের কাঁধে চড়ে আর দর্শকদের সামনে ল্যাপ অব অনারেই নিজের শেষটা দেখেছিলেন মাশরাফি। তবে সেটি তার ‘অধিনায়কত্বের ইতি’ হিসেবে আগেই জানা ছিল। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে তার ক্রিকেটীয় বিদায় নেওয়ার সুযোগ পাননি। এর আগে শ্রীলঙ্কায় নিজের টি-টোয়েন্টি অবসরের কথা ঘোষণা করেছিলেন তিনি।
বিদেশের মাটিতেই অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও। জিম্বাবুয়েতে একমাত্র টেস্ট চলাকালেই জানান, সাদা পোশাক তুলে রাখার কথা। সতীর্থদের গার্ড অব অনার আর দেড়শ রানের ইনিংস দিয়ে তিনি সেখানে বিদায় নিয়েছিলেন। ওয়ানডে দলে রিয়াদের অবস্থানটাও বর্তমানে নড়বড়ে। শেষ পর্যন্ত তার বিদায় কেমন হয় তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।
মাশরাফি, রিয়াদের আগে খালেদ মাসুদ পাইলট কিংবা মোহাম্মদ রফিক; কারোরই নজির নেই মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার। বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টারবয় আশরাফুলও নিষিদ্ধ হয়ে একপ্রকার আড়ালেই চলে গিয়েছেন। এরপর মাঠে ফেরারও চেষ্টা চালিয়েছেন, কিন্তু হঠাৎ বিরতি নেওয়ার পর পুরনো অ্যাশকে আর খুঁজে যায়নি।
বাংলাদেশ দলের অন্যতম সফল অধিনায়ক হওয়ার পরেও হাবিবুল বাশার সুমনের ক্ষেত্রেও একই দশা। ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগ (আইসিএল)-এ নাম লিখিয়ে তিনি নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। এরপর ফিরে এলেও ভাল কোনো বিদায় পাওয়া হয়নি তার। একই পরিণতি ছিল মোহাম্মদ রফিকের ক্ষেত্রেও। আবদুর রাজ্জাক পূর্ব সময়ে রফিকের মতো স্পিনার টাইগার ক্রিকেটের জন্য ছিল অনেক বড় পাওয়া। কিন্তু এমন চিত্রও তার বিদায় ভাগ্য বদল ঘটাতে যেন যথেষ্ট ছিল না!
সম্প্রতি ক্রিকেটারদের মাঝে ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে বিদায়ের প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে এক সংক্ষিপ্ত এক স্ট্যাটাস দিয়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটকে বিদায় জানান তামিম। এর কয়েকমাস পরই একইভাবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে সরে দাঁড়ান মুশফিকুর রহিম। বর্তমানে ওয়ানডে এবং টেস্ট দলে নিয়মিত মুখ বগুড়ার এই ক্রিকেটার।
ক্রিকেটারদের এমন বিদায়ের সবশেষ উদাহরণ হয়ে রইলেন তামিম। গতকাল (৭ জুলাই) নিজ শহর চট্টগ্রামে এক হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে যাবার ঘোষণা দেন তিনি। কান্নাভেজা কণ্ঠে আচমকা নেওয়া এমন সিদ্ধান্তের কোনো কারণই তিনি স্পষ্ট করেননি। অথচ আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে ক্রিকেটের বড় দুই আসর এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে অংশ নেবে বাংলাদেশ।
জেএ/এএইচএস