তামিম ইকবালের সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল দুপুর দেড়টায়। তবে নির্ধারিত সময়ের মিনিট বিশেক আগেই উপস্থিত হন এই ওপেনার। সাধারণত বিদায়ী দিনে ক্রিকেটাররা সঙ্গে করে লিখিত কোনো বিবৃতি আনেন। তবে তামিম অবশ্য সেসব কিছুই আনেননি, যা বলেছেন সবই যেন নিজের ভেতর থেকেই আসা কথা! তামিমের বক্তব্যের সারাংশটা থাকল ঢাকা পোস্টের পাঠকদের জন্য...

‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালের ম্যাচটিই আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়। অনেক দিন ধরেই আমি ভাবছিলাম। ভিন্ন ভিন্ন কারণ আছে, আমার মনে হয় না বলার দরকার আছে। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছি এটা নিয়ে। আমার মনে হয়েছে এটাই ঠিক সময়। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি। আমি সবাইকে ধন্যবাদ দিব।’

‘আমি সব সময় একটা কথা বলেছি যে আমি খেলেছি... (কান্নার পর থেমে গেলেন)। আমি ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য (আবার কান্না)...(আরও কিছুক্ষণ থেমে) কাজেই আমি নিশ্চিত না আমি তাকে কতটা গর্বিত করতে পেরেছি পুরো ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। আরও অনেকেই আছে যাদের ধন্যবাদ দিতে হবে। আমার সবচেয়ে ছোট চাচা যিনি ইন্তেকাল করেছেন, আকবর খান, উনার হাত ধরেই আসলে আমার প্রথম ক্রিকেট বলের টুর্নামেন্ট খেলা। আমি তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

‘এই এমএ আজিজে তপন দা নামে একজন কোচ আছেন যার কাছে আমি ছোটবেলা থেকে... (আবার আবেগে ভেঙে পড়ে কিছুক্ষণ চুপ), যার কাছে ছোটবেলা থেকে আমি অনুশীলন করেছি। তাকে ধন্যবাদ দিই।’

এরপর সতীর্থদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তামিম বলেন, ‘আমি ক্যারিয়ারে যত খেলোয়াড়ের সঙ্গে খেলেছি সবাইকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। যাদের সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৩, ১৭, এইটিন বা নাইনটিন, প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় দলে যাদের সঙ্গে খেলেছি সবাইকে ধন্যবাদ দিই। বিশেষ করে জাতীয় দলে যারা আমার সতীর্থ ছিলেন তাদের সবাইকে।’

‘ক্রিকেট বোর্ড অবশ্যই (ধন্যবাদ পাবে)। তারা আমাকে সুযোগ দিয়েছেন দেশকে লম্বা সময় প্রতিনিধিত্ব করার; একইসঙ্গে বাংলাদেশের সব অধিনায়কদেরও। আসলে আমার খুব বেশি কিছু বলার নেই। একটা জিনিসই বলব আমি আমার সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করেছি, আমি সেরাটা দিতে চেয়েছি (কান্না জড়ানো কণ্ঠে)। আমি হয়ত নট গুড এনাফ, অথবা গুড এনাফ। কিন্তু যখনই মাঠে ছিলাম আমি শতভাগ দিতে চেয়েছি। আমি অনেক কিছু বলতে চাই আসলে। আপনারা দেখছেন আমি একদম কথা বলার অবস্থায় নেই। কিন্তু আমি আশা করি আপনারা পরিস্থিতিকে সম্মান করবেন (আবার কান্না)। এটা কথা বলার মতন সহজ পরিস্থিতি না। আমি এত বছর ধরে খেলেছি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর সহজ না। এত অল্প সময়ের নোটিশে আপনাদের ডাকা হইছে। আমি মিডিয়ার সবাইকে ধন্যবাদ দিচ্ছি।’

এরপর আগামীর ক্রিকেটারদের ভালো-খারাপ সময়ে তাদের পাশে থাকার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমি একটা অনুরোধ করব, যারা সামনে ক্রিকেট খেলবে তাদের কথা আপনারা ভালো-খারাপ লিখবেন; যাইহোক সেটা ক্রিকেটে যেন থাকেন। সীমার বাইরে যাবেন না। ভালো খেললে ভাল লিখবেন, খারাপ খেললে সমালোচনা করবেন। আপনারা সবাই বুঝতে পারেন যা মাঝে মাঝে সীমা অতিক্রম হয়ে যায়। যারা ক্রিকেট খেলছে তাদের জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বছর, বিশ্বকাপের জন্য। আমি আশা করি আপনারা দলের সদস্যের মত থাকবেন, সমর্থন দিবেন।’

‘আমি আবারও বলি ক্রিকেট খেলা শুরু করেছি বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য। কতটা করতে পেরেছি জানি না। হয়তো আরও অনেককে ধন্যবাদ দেওয়ার ছিল, নাম ভুলে গেলে ক্ষমা চাই। আমার মা, তাকে ভুলব কি করে! আমার ভাই, আমার স্ত্রী, আমার দুই সন্তান। আমার এই ভ্রমণে তারা অনেক ভুগেছে, আবার আনন্দের সময়ও ছিল। আমি তাদের ধন্যবাদ দিই। এরচেয়ে বেশি কিছু বলার নাই। একটাই বলব আমার টপিকটা এখানেই শেষ করে দেন। এটাকে নিয়ে আর বেশি গুঁতাগুঁতি (ঘাটাঘাটি) কইরেন না। আমি সব সময় বলেছি দল সবসময় যেকোনো ব্যক্তির চেয়ে বড়। দুই ম্যাচ আছে এই সিরিজের আশা করি দল জিতবে। এরপর বড় দুটি ট্রফি আছে (এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ)।’

‘সবাইকে আবার ধন্যবাদ জানাই। আর কিছু বলার নেই। আশা করি অন্য কোথাও আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে। ধন্যবাদ।’

এসএইচ/এএইচএস