১৬ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারকে পাশে রেখে অনেকটা হুট করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন তামিম ইকবাল। সাম্প্রতিক সময়ে তার মলিন পারফরম্যান্সের কারণে অনেক সমালোচনা চলছিল। যার রেশ ধরে গুঞ্জন ছিল, তিনি বাংলাদেশের ওয়ানডে ফরম্যাটের অধিনায়কত্ব ছাড়বেন। কিন্তু এর ভেতরই তিনি পুরো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে ‘না’ বলে দিয়েছেন। তার এমন সিদ্ধান্তে ‘শকড’ হয়েছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। একইসঙ্গে তামিমের সিদ্ধান্তকে তিনি ‘অসাধারণ’ উল্লেখ করে তার ‘ফিরে আসার’ আশাপ্রকাশও করেছেন।

আজ (৬ জুলাই) দুপুর দেড়টায় চট্টগ্রামের হোটেল টাওয়ার ইনে এক সংবাদ সম্মেলন করেন ওপেনার তামিম ইকবাল। সেখানে অনেকটা কান্নাভেজা কণ্ঠে তিনি অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালের ম্যাচটিই ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ বলে উল্লেখ করেন তামিম। একইসঙ্গে তার ভাষ্য এই সিদ্ধান্ত হুট করে নয়, কয়েকদিন ধরেই ভেবেচিন্তে নিয়েছেন।

এমন সিদ্ধান্ত একইসঙ্গে হতবাক এবং শকড হয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক আশরাফুল। তিনি বর্তমানে ইংল্যান্ডে অবস্থান করছেন। তামিমের হঠাৎ বিদায়ের পর সেখান থেকেই লাইভে আসেন আশরাফুল। ওয়ানডে অধিনায়কের সিদ্ধান্তের বিষয়ে অ্যাশ বলছেন, ‘গত এক বছর ধরেই শুনছিলাম, বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জয়ের আশা নিয়ে ভারতে যাচ্ছে- এমন ঘোষণা দেওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। কিন্তু ঘুম থেকে ওঠেই দেখলাম সে অবসর নিয়ে ফেলেছে। যদিও এভাবে হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভ্যাস তার পুরনো। তবুও অবাক হয়েছি, তা সত্ত্বেও বলব সে চমৎকার একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ আর ২-১টা ম্যাচ হারলে তাকে বাজেভাবে অধিনায়কত্ব ছাড়তে হতো। তার সাম্প্রতিক ফর্ম থেকে সাধারণ মানুষ সেই ২০০৭ সালের তামিমকে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি শকড। আর হয়তো ৬-৭টা ম্যাচ পরেই বিশ্বকাপ। তার আগেই এমন সিদ্ধান্ত। জীবনটাই এরকম, তাকেও হঠাৎই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। বাংলাদেশের সব ফরম্যাটে তিনি টপ স্কোরার ছিলেন এবং ২৫টা সেঞ্চুরি অবশ্যই বিরাট অ্যাচিভমেন্ট। আমার মনে হয়না সে ফিরে আসবে, যেহেতু বিশ্বকাপের আগেও আর তেমন সময় নেই।’

আশরাফুল বলছেন, আমার জুনিয়র হলেও তুমি আমার আগেই অবসরের ঘোষণা দিয়েছ। যেটা সিনিয়র হয়েও আমি এবং মাশরাফি এখনও পারিনি। তামিমের বিগ হার্ট, ওর মতো বিগহার্ট মানসিকতা কারও নেই। তার এমন দৃঢ় মনোবল এবং ব্যক্তিত্ব আসলেই অসাধারণ।

এর আগে অনেকটা শোকার্ত মুখেই লাইভে আসেন আশরাফুল। শুরুতে তামিমের ছোটবেলার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা তেকে আমি তামিমকে চিনি। সে সময় তার ভাই নাফিস ইকবালের সঙ্গে খেলছিলাম, যখন সে হাফপ্যান্ট পরে আসতো। পরে ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সে জাতীয় দলে আসে। এর আগে ডিওএইচএসের হয়ে এক ম্যাচে ১৮৮ রান করেছিল, আমার মনে আছে। তখন থেকেই আমরা জানতাম একজন ড্যাশিং ওপেনার আসছে বাংলাদেশে। প্রথমে অফসাইডে খেলত বেশি, পরবর্তীতে জেমি সিডন্স এবং সালাউদ্দিনের মাধ্যমে সে লেগসাইডে খেলতেও অভ্যস্ত হয়।’

তামিমের বিদায়ে বাংলাদেশের সামনের পথটা কঠিন হয়ে গেছে বলে মনে করেন আশরাফুল। তবে তার ফিরে আসার স্বপ্নও দেখছেন তিনি, ‘এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য পথটা কঠিন হয়ে গেল। যখন আমরা তৃতীয় ওপেনার খুঁজছিলাম, তার ভেতরই অভিজ্ঞ একজনকে হারালাম। তবে আমি আশা করব তামিম ইজিলি আরও ৩-৪ বছর ঘরোয়া লিগে খেলবে এবং আন্তর্জাতিকেও ফিরতে পারেন। তার বয়স তো এত বেশি হয়নি আসলে, অন্তত অবসর নেওয়ার মতো নয়। কিছুদিন রেস্ট নিয়ে তিনি ফিরতেও পারেন। যাইহোক, অল দ্য বেস্ট তামিম।’

বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই ড্যাশিং ওপেনারের অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন আশরাফুল, ‘তামিম তোমাকে ধন্যবাদ, গত ১৯টা বছর তুমি আমাদেরকে অনেক ইন্টারটেইন করেছ। ২০০৭ বিশ্বকাপে প্রথমে ভারতের দেওয়া ১৯১ রানের জবাবে ডমিন্যান্ট করার মানসিকতা দেখিয়েছ। এরপর বাংলাদেশের হয়ে অনেক অর্জন তোমার, আমার জুনিয়র হলেও তুমি আমার আগেই অবসরের ঘোষণা দিয়েছ। যেটা সিনিয়র হয়েও আমি এবং মাশরাফি এখনও পারিনি। তামিমের বিগ হার্ট, ওর মতো বিগহার্ট মানসিকতা কারও নেই। তার এমন দৃঢ় মনোবল এবং ব্যক্তিত্ব আসলেই অসাধারণ।’

এএইচএস