ইংল্যান্ডের নতুন ধারার বাজবল কৌশলে ধরাশায়ী বিশ্বের বাঘা বাঘা সব প্রতিপক্ষ। মর্যাদার অ্যাশেজ শুরুর আগে বারবার আলোচনায় ঘুরে ফিরে এসেছে বেন স্টোকস-ম্যাককালামের সেই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট প্রসঙ্গ। তবে প্রথম দফার পরীক্ষায় সেটি ভালোভাবেই উৎরে গেল টেস্টের বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম তথা এজবাস্টন টেস্টের শেষ দিনের রোমাঞ্চে ২ উইকেটের জয় পেয়েছে প্যাট কামিন্সরা।

এজবাস্টন টেস্টের শুরু থেকেই ম্যাচের পেন্ডুলাম ঘুরেছে দুই দিকে। একবার ইংল্যান্ড কেড়ে নেয়, আরেকবার অস্ট্রেলিয়ার নিয়ন্ত্রণে। এরই ধারাবাহিকতায় সেই রোমাঞ্চ পঞ্চম দিনে এসে ঠেকে। প্রথম ম্যাচ জিততে স্বাগতিকদের প্রয়োজন ছিল ৭ উইকেট আর অস্ট্রেলিয়ার ১৭৪ রান। শেষ দিনে উত্তাপ আরও বাড়িয়ে দেয় বৃষ্টি। প্রথম সেশনের খেলা বৃষ্টিতে পণ্ড হওয়ার পর ব্যাট করতে নেমে ইংলিশ পেসারদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই ম্যাচ বের করে নিল সফরকারীরা। 

আগের দিনে অপরাজিত থাকা উসমান খাজা পঞ্চম দিনে দলকে ভালো ভীত গড়ে দেন। শেষ দিকে ইংলিশ পেসারদের তোপে ম্যাচটা প্রায় হাত ফসকেই যাচ্ছিল অস্ট্রেলিয়ার। ৮ উইকেট হারানোর পর লক্ষ্যটা তখনো অনেক দূর। এমন বিপর্যয়ে হাল ধরলেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। টেলএন্ডার নাথান লায়নকে সঙ্গে নিয়ে আর কোনো বিপর্যয় হতে দিলেন না। উইকেটে অক্ষত থেকে দারুণভাবে ম্যাচটা বের করে নিলেন। কামিন্স অপরাজিত ছিলেন ৪৪ রানে আর নাথান লায়ন টিকে ছিলেন ২৮ বলে ১৬ রানে। 

প্রথম ইনিংসে দাপুটে বাজবল ঘরানার খেলা দেখালেও দ্বিতীয় দফায় সেটি দেখাতে পারেনি বেন স্টোকসের দল। মাত্র ২৭৩ রানেই তাদের দ্বিতীয় ইনিংস থেমেছে। ফলে আগের ইনিংসে পাওয়া ৭ রান যোগ হয়ে ২৮১ রানের লক্ষ্য পায় প্যাট কামিন্সের অস্ট্রেলিয়া। 

এমন ম্যাচে ইংলিশ সমর্থকদের অনুপ্রেরণা ছিল দেড় যুগ আগের এক ম্যাচ। ১৮ বছর আগে এই এজবাস্টনেই অস্ট্রেলিয়াকে ২৮২ রানের লক্ষ্য দিয়ে ২ রানে জিতেছিল ইংল্যান্ড। এবার লক্ষ্যটা যদিও ১ রান কম। তবুও শেষ রক্ষা হলো না স্বাগতিকদের।  

২৮২ রানের লক্ষ্যে চতুর্থ দিনের শেষ বিকেলে ভালো শুরু পান ডেভিড ওয়ার্নার এবং আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান উসমান খাজা। দুই ওপেনারের ছন্দময় ক্রিকেটে লক্ষ্যটা সহজই মনে হচ্ছিল সফরকারীদের জন্য। তবে দলীয় ৬১ রানে তাদের প্রথম জুটিতে আঘাত হানেন ইংলিশ পেসার রবিনসন। ৩৬ রান করা ওয়ার্নারকে তিনি তালুবন্দি করেন উইকেটরক্ষক বেয়ারস্টোর। এরপর অল্প রানের ব্যবধানে আরও দুটি উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে যায় সফরকারীরা। দলীয় ৭৮ রানে মারনাস লাবুশেন (১৩) ও ৮৯ রানে ফিরে যান স্টিভ স্মিথ (৬)। প্রথম ইনিংসের পর অভিজ্ঞ স্মিথ ব্যাট হাতে ফের ব্যর্থ হয়েছেন। শেষদিকে নাইটওয়াচম্যাচ স্কট বোল্যান্ডকে সঙ্গে নিয়ে মোটামুটি কিছুটা প্রতিরোধ দেখান খাজা। 

পঞ্চম দিনে প্রথম সেশনের খেলা বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়ার পর আকাশ পরিষ্কার হতেই পেসারদের আধিপত্য দেখছিল অনেকে। তবে ব্যাট হাতে এজবাস্টনে আলো ছড়ালেন খাজারা। স্টোকসের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১৯৭ বলে ৬৫ রানের মহামূল্যবান এক ইনিংস উপহার দেন। দুই ইনিংসে খাজার সেঞ্চুরি ও ফিফটিময় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে লড়াই জিইয়ে রাখে সফরকারীরা। 

খাজার বিদায়ের পর তেমন বড় স্কোর গড়তে পারেননি মিডল অর্ডার ব্যাটাররা। শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়ার জয় ভাগ্য নির্ভর করছিল অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের ওপর। তার অপরাজিত ৪৪ রানের অনবদ্য এক ইনিংসে প্রথম টেস্টে বাজবলের জবাব দিল অজি বাহিনী। 

এফআই/ওএফ