ব্রেন্ডন ম্যাককালাম এবং বেন স্টোকস জুটি মিলে ইংল্যান্ড দলে নতুন বিপ্লব ঘটিয়েছেন। ‘বাজবল’ তত্ত্ব দিয়ে ব্যতিক্রমী ক্রিকেটারে পরিণত হয়েছেন জো রুটের মতো ঠান্ডা মাথার ব্যাটারও। সেঞ্চুরি করার পথে তিনি পেস বলে দুবার রিভার স্কুপ শটে পেছনের বাউন্ডারিতে ছয় হাঁকিয়েছেন। তবে সেই পর্যন্ত ঠিক ছিল, প্রথম দিন শেষ হওয়ার আগেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ইনিংস ঘোষণায় কিছুটা গোলমেলে ঠেকেছে। সেই জবাব সেঞ্চুরি দিচ্ছেন উসমান খাজা। ইংলিশ রানের দিকে তিনি নিরাপদে অজিদের ছুটে নিয়ে যাচ্ছেন।

প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড ওভারপ্রতি ৫ রানের গড়ে ৩৯৩ রানে ইনিংস ঘোষণা করেছিল। ৮ উইকেট পড়ে গেলেও, তখন ক্রিজে ছিলেন সেঞ্চুরিয়ান জো রুট। তবুও হুটহাট ইনিংস ঘোষণার বিষয়টি অনেককেই অবাক করে দিয়েছিল। তার জবাবে দ্বিতীয় দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ৫ উইকেট হারিয়ে ৩১১ রান। এখনও ক্রিজে ১২৬ রানে অপরাজিত আছেন বাঁ-হাতি ওপেনার খাজা। টেস্টে এটি তার ১৫তম সেঞ্চুরি।

অ্যাশেজ সিরিজের আগেই ইংল্যান্ড দলের বার্তা ছিল বাজবল মানসিকতা দিয়ে দর্শকদের বিনোদিত (ইন্টারটেইন) করবে। তা অবশ্য তাদের ব্যাটিংয়েই দেখা মিলেছে। এছাড়া বল বাই বলেও ছিল রোমাঞ্চকর উত্তাপ। তবে তার কিছুটা নিয়ন্ত্রণ নিজের দখলে রেখেছেন উসমান খাজা। এদিন ডেভিড ওয়ার্নারকে এ নিয়ে ১৫তম বারের মতো শুরুতে ফিরিয়ে দেন স্টুয়ার্ট ব্রড। এরপর দলীয় একশ রানের আগে অস্ট্রেলিয়া তিন উইকেট হারিয়ে বসে। তবে একপ্রান্ত আগলে রাখা খাজা তাদের পথ হারাতে দেননি।

আরও পড়ুন >> ঐতিহ্যের অ্যাশেজেও আক্রমণাত্মক ইংল্যান্ড

এর আগে এজবাস্টনে দিনের খেলা শুরুর আগে বৃষ্টি নামে। মেঘলা আকাশের নিচে খেলা শুরু হয় ৫ মিনিট দেরিতে। সহায়ক কন্ডিশনে ইংল্যান্ডকে দ্রুত সাফল্য এনে দেন ব্রড। চমৎকার বোলিংয়ে তিনি হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগান। যদিও শেষ পর্যন্ত পাননি সেই স্বাদ। ওয়ার্নারের পরের বলেই তিনি মার্নাস লাবুশেনেকে বিদায় করেন। ছন্দহীন ওয়ার্নার করেন ৯ রান। এরপর থিতু হয়েও ফেরেন স্টিভ স্মিথ। ব্যক্তিগত ১৬ রানে তাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন বেন স্টোকস। অথচ এই ইংলিশ অধিনায়কের বল করা নিয়েও শঙ্কা ছিল।

৬৭ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর চতুর্থ উইকেটে ট্র্যাভিস হেডকে নিয়ে ইনিংস মেরামত করেন খাজা। তাদের ৮১ রানের জুটি ভাঙেন টেস্টে অবসর ভেঙে ফেরা মঈন আলী। এরপর ক্যামেরন গ্রিনকেও ফেরান এই অলরাউন্ডার। স্বভাবসুলভ আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ১ ছক্কা ও ৮ চারে ঠিক ৫০ রান করে আউট হন হেড। গ্রিন থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হয়েছেন। মঈনের বলে বোল্ড হওয়ার আগে তিনি ৪টি চার এবং এক ছয়ে করেন ৩৮ রান।

এরপর ষষ্ঠ উইকেটে অ্যালেক্স ক্যারিকে নিয়ে আরেকটি বড় জুটি গড়েন খাজা। দিন শেষ হওয়ার আগে দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটি ৯১ রানের। অবশ্য তাদের প্রতিরোধ ভাঙার সুযোগ পেয়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু গড়বড় করেন জনি বেয়ারস্টো। স্টাম্পিংয়ের সুযোগ পেয়েও তিনি কাজে লাগাতে পারেননি। এছাড়া জো রুটের বলে ক্যারির দেওয়া ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করতে পারেননি দীর্ঘদিন পর চোট থেকে ফেরা বেয়ারস্টো।

দিনের শেষ দিকে টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটি তুলে নেন ক্যারি। তিনি অপরাজিত আছেন ৫২ রানে। এর আগে দ্বিতীয় নতুন বল নিয়েই চমৎকার ইনসুইংয়ে খাজার স্টাম্প ভেঙে দেন ব্রড। কিন্তু বলটি ‘নো’ হওয়ায় বেঁচে যান এই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস : ৭৮ ওভারে ৩৯৩/৮ (ডি.)
(রুট ১১৮*, বেয়ারস্টো ৭৮, ক্রাউলি ৬১; লায়ন ৪/১৪৯, হ্যাজলউড ২/৬১, গ্রিন ১/৩২)

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস : ৯৪ ওভারে ৩১১/৫ (৮২ রানে পিছিয়ে)
(খাজা ১২৬*, ক্যারি ৫২*, হেড ৫০; ব্রড ২/৪৯, মঈন ২/১২৪, স্টোকস ১/৩৩)

এএইচএস