বার বার পঞ্চাশের কোঠায় আটকে যাচ্ছিলেন। কিছুতেই তিন অংকের রান আসছিল না। খরা কাটার পর ক্রিকেটের তিনটি ফরম্যাটেই শতরান হয়ে গেছে। বাকি ছিল আইপিএল। সেখানেও সফল হলেন বিরাট কোহলি।

তার শতরানের সুবাদে হায়দরাবাদকে গুঁড়িয়ে দিল আরসিবি। হায়দরাবাদের ৫ উইকেটে তোলা ১৮৬ রানের জবাবে আরসিবি জিতল আট উইকেটে। বিফলে গেল হেনরিখ ক্লাসেনের শতরান।

আইপিএলের প্লে-অফে উঠতে গেলে আরসিবিকে শেষ দুটি ম্যাচে দুটিতেই জিততে হতো। এই অবস্থায় প্রথম ধাপটা ভালোভাবেই পেরিয়ে গেল তারা। জয়ের নায়ক সেই কোহলি। শতরান করে আরসিবিকে জেতাতে মুখ্য ভূমিকা নিলেন তিনি। দোসর ফাফ ডুপ্লেসি। দুই ওপেনারে ভরসা করেই হায়দরাবাদ ম্যাচ জিতে নিল আরসিবি।

ইডেনে চেন্নাই খেলতে আসার সময় যেমন কলকাতা চলে গিয়েছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সমর্থকদের দখলে, এ দিন হায়দরাবাদে একই দৃশ্য। ঘরের দল খেললেও মাঠে শুধু ‘কোহলি, কোহলি’ চিৎকার। এক সমর্থকের পোস্টার, ‘কোহলি, তোমার খেলা দেখব বলে ৮ হাজার ৮৯৬ মাইল দূর অরল্যান্ডো থেকে ছুটে এসেছি’। তাদের ডাক শুনলেন কোহলি। শতরানের পরের বলেই আউট হলেও, হায়দরাবাদের সমর্থকদের তখন ‘পয়সা উশুল’।

আরসিবির দুই ওপেনার শুরু থেকেই চালিয়ে খেলছিলেন। এ দিন দেখা গেল শটের ছড়াছড়ি। মাঠের এমন কোনও কোণ ছিল না যেখানে এই দুই ওপেনারের শট যায়নি। কোনও বোলারই কোহলি এবং ডুপ্লেসির সামনে দাঁড়াতে পারেননি। কোহলি তো এমন একটা ছয় মারলেন যেটা গ্যালারির দ্বিতীয় টায়ারে গিয়ে পড়ল। ১০৩ মিটারের ছিল সেই ছক্কা। দেখে ধারাভাষ্যকাররাও উত্তেজিত হয়ে পড়লেন।

একটা সময় পর্যন্ত দুই ওপেনারই সমান গতিতে এগোচ্ছিলেন। কিন্তু কোহলির রান ৭০ পেরোনোর পর থেকেই ডুপ্লেসি ব্যাক সিটে চলে যান। তখন আরও আগ্রাসী খেলতে শুরু করেন কোহলি। তখন ডুপ্লেসি খুচরা রান নিচ্ছিলেন। কোহলি একের পর এক চার ছয় মারছিলেন। ছয় মেরেই এল শতরান। তার পরের বলে আউট হয়ে গেলেন। কিছু ক্ষণ পরে ফিরলেন ডুপ্লেসিও। কিন্তু আরসিবির জিততে কোনও অসুবিধাই হলো না।

তার আগে আরও একটি শতরান দেখা গেল। হ্যারি ব্রুকের পর বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে শতরান করলেন হায়দরাবাদের হেনরিখ ক্লাসেন। ৫১ বলে ১০৪ রান করেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারের দাপটে আগে ব্যাট করে ১৮৬ তোলে হায়দরাবাদ।

টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি হায়দরাবাদের। এই ম্যাচে আবার ওপেনিং জুটি বদলে ফেলে তারা। অনমোলপ্রীত সিংহের বদলে এ দিন অভিষেক শর্মার সঙ্গে ওপেন করতে নামেন রাহুল ত্রিপাঠি। তার আগে অভিষেকের সঙ্গে ওপেন করতেন মায়াঙ্ক আগরওয়াল। ছন্দে থাকা অভিষেক বিপক্ষের বোলারদের ওপর আগ্রাসন দেখাতেই পারছিলেন না।

উল্টো দিকে একই অবস্থা হয়েছিল রাহুলের। তিনিও ব্যাট হাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারছিলেন না। একই ওভারে পর পর দুই ওপেনারকে তুলে নেন মাইকেল ব্রেসওয়েল। কভারে অভিষেকের (১১) ক্যাচ নেন মহিপাল লোমরোর। রাহুল প্যাডল সুইপ করতে দিয়ে ক্যাচ দেন হর্ষল প্যাটেলের হাতে।

সেখান থেকে দলকে টেনে তোলের অধিনায়ক এডেন মার্করাম এবং ক্লাসেন। মার্করাম তুলনায় ধীরগতিতে খেলছিলেন। আগ্রাসী ভঙ্গিতে খেলার ভূমিকা নিয়েছিলেন ক্লাসেন। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে প্রতি ম্যাচেই মিডল অর্ডারে দলকে ভরসা দিচ্ছেন। এ দিনও তার ব্যতিক্রম নয়। মাঠের চারধারে ছড়িয়ে পড়ল ক্লাসেনের শট। প্রোটিয়া ব্যাটার রেয়াত করলেন না কোনও বোলারকেই।

১৯তম ওভারে নিজের শতরান পূরণ করেন ক্লাসেন। হর্ষলের বলে ছয় মেরে ৪৯ বলে শতরান হয় তার। এ বার হায়দরাবাদের দ্বিতীয় শতরান এটি। এর আগে হ্যারি ব্রুক কলকাতার বিরুদ্ধে শতরান করেছিলেন। তবে হায়দরাবাদের হয়ে দ্রুততম শতরান হল তাঁরই।

মার্করাম আউট হয়ে যান ১৩তম ওভারে। তার সংগ্রহ মাত্র ১৮ রান। ক্লাসেন বাদে আর কোনও ব্যাটারেইর বলার মতো অবদান নেই। তারা কিছুটা সাহায্য করলেন রান আর একটু বাড়ত। কিন্তু বেঙ্গালুরু যেভাবে রান তাড়া করেছে, তাতে কিছুই নিরাপদ ছিল না তাদের কাছে।