পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই যার পরম মমতায় আমরা বেড়ে ‍উঠি, তিনিই আমাদের মা। ‘মা’ শব্দটি অতি ছোট্ট হলেও খুব মধুর। সেই মধুর সম্পর্কের প্রায় পুরোটা ফলই পেয়ে থাকে সন্তানরা। শত ত্যাগেও যার কোনো বিনিময় দেওয়া সম্ভব নয়। মাকে নিয়ে আমাদের মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা অব্যক্ত কথা কখনও জানানো হয় না। প্রায় সন্তানই এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যান। ক্রিকেটের পাতায় হঠাৎ করে আজ (১৪ মে) মা-কে নিয়ে লেখার কারণ কি? কারণ, মায়ের জন্য বিশেষ কোনো দিন থাকা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব মা দিবস’। 

সাধারণত মে মাসের দ্বিতীয় রোববার ‘মা দিবস’ পালিত হয়। যদিও মাকে ভালোবাসতে কি আবার কারণ কিংবা দিবস লাগে নাকি! তবুও বিশ্বজুড়েই আলাদা করে দিনটি পালিত হয়ে আসছে। বিশেষ এই দিবসে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে নিজের মাকে নিয়ে কথা বলেছেন দেশের ক্রিকেটের পরিচিত মুখ জাকের আলী অনিক। জানিয়েছেন মায়ের সঙ্গে নিজের সখ্যতা, ভালোবাসা এবং আন্তরিকতার গল্প।

শুরুতেই ক্রিকেটার হওয়ার পেছনে নিজের মায়ের অবদানের কথা জানিয়ে জাকের বলেন, ‘ছোট বেলা থেকেই মায়ের জন্য এই পর্যন্ত আসা। যতটুকুই আসতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ, সেটা আমার মায়ের দোয়ায়। তবে পরিবারের সবারই অবদান ছিল; আব্বা ও ভাই-বোনের। কিন্তু মা যে পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সেটা আলাদা করে না বললেই নয়। আসলে মায়ের বিষয় মিডিয়ায় সেভাবে আসে না, অনেকে আনতেও চায় না। আমিও আম্মাকে এতটা আনিনা। অনেকে ইন্টারভিউ নিতে চায়, আম্মাও খুব একটা কথা বলতে চান না ক্যামেরায়। আমার সঙ্গে যতটা বলতে পারেন, সবার সঙ্গে ততটা পারেন না- এসব কারণেই। এই পর্যন্ত আসার ক্ষেত্রে আম্মার সাপোর্টের কখনোই কমতি ছিল না।’

জাতীয় দলে ডাক পেলেও জাকেরের এখনও ম্যাচ খেলা হয়নি

জাকের যখন ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলেন, তখনকার সময়ে অধিকাংশ পরিবারই চাইতো সন্তানদের ডাক্তার-ইন্জিনিয়ার বানাতে। সেই প্রসঙ্গ উঠে এসেছে এই মিডল অর্ডারের কথায়, ‘ছোট বেলায় আমি যখন ক্রিকেট শুরু করি, এখনকার মতো খেলাটা এত জনপ্রিয় ছিল না। এখন যেমন ঘরে ঘরে ক্রিকেটার হতে চায় সবাই, সে সময় বাসায় ক্রিকেটার হতে চাই বলাটাও একটা সাহসের ব্যাপার ছিল। ওই সময়ও কিন্তু আমার প্রতি আম্মার সাপোর্ট ছিল। এমনও হত যে, স্কুলে টিফিন পিরিয়ডের পর বলতাম আম্মা আজ বিকেলে ম্যাচ আছে; এখন আর ক্লাসে যাব না। ঠিক আছে বলেই আম্মা মেনে নিতেন। এই সময় হয়তো অন্যান্য বাবা-মায়ের মানার কথা নয়।’

এক সময় ক্রিকেটের কিছু না বোঝা জাকেরের মা এখন খেলাটির সবকিছুই বোঝেন। খারাপ করলে কিংবা রান না পেলে মা তাকে মোটিভেট করেন। যে কারণে জাকেরের কাছে তার মা একজন কোচ, ‘আমার খেলা দেখতে দেখতে এখন আম্মা ক্রিকেটের অলমোস্ট সবই বোঝেন। আমি যদি রান না পাই কিংবা আমার খারাপ সময় যায়, আম্মা তখন খুব সুন্দর করে মোটিভেট করেন, একজন কোচের মতো। মা বলেন, ‘‘বাবা কোনো সমস্যা নেই, তুমি তো গত ম্যাচেও রান পেয়েছ, এক ম্যাচ খারাপ হতেই পারে।’’ এসব কথা শোনার জন্য আম্মার কাছে ছুটে যাই, এই বিষয়গুলো অন্যরকম লাগে।’

স্ত্রী নাফিসা তাবাসসুম নাতাশা’র সঙ্গে জাকের আলী

তবে মাকে কখনোই ঘটা করে বলা হয়নি মাকে কতটা ভালোবাসেন জাকের, ‘এই জিনিসটা আসলে কখনও বলা হয় না। কিন্তু আম্মাকে যে ভালোবাসি, এটা উনিও খুব ভালো করেই জানেন। মা-ও আমার পাশে থাকতে খুবই পছন্দ করেন। আমি ঢাকার বাসায় থাকি, যখনই সুযোগ হয় আম্মা সিলেট থেকে চলে আসেন। আমার দেখাশোনা করতে খুব ভালোবাসেন তিনি। সত্যি কথা বলতে মা ছাড়া আমি এখনও চলতে পারি না। আমি বিয়ে করেছি, এখন স্ত্রী আছে। তবুও মা ছাড়া ঠিকভাবে সবকিছু হয় না। আমার মা থাকলে সবকিছুই পারফেক্টলি হয়ে যায়। আম্মা জানেন আমার কি দরকার, এমনকি আমি যে ভাত খাই সেই ভাতের পরিমাণটাও উনার জানা। বড় হয়েছি, তবুও আমি পুরোপুরি আম্মার ওপর নির্ভরশীল।’

জাকেরের কাছে তার মা একজন কোচ, ‘আমার খেলা দেখতে দেখতে এখন আম্মা ক্রিকেটের অলমোস্ট সবই বোঝেন। আমি যদি রান না পাই কিংবা আমার খারাপ সময় যায়, আম্মা তখন খুব সুন্দর করে মোটিভেট করেন, একজন কোচের মতো। মা বলেন, ‘‘বাবা কোনো সমস্যা নেই, তুমি তো গত ম্যাচেও রান পেয়েছ, এক ম্যাচ খারাপ হতেই পারে।’’ এসব কথা শোনার জন্য আম্মার কাছে ছুটে যাই, এই বিষয়গুলো অন্যরকম লাগে।’

মায়ের জন্য আলাদা করে দিবস হয়না উল্লেখ করে এই ক্রিকেটার বলেন, ‘মায়ের জন্য স্পেশাল কোনো দিন নেই। উনাদের অবদানের কি শেষ আছে? এটা তো বলে বোঝাতে পারব না। একদিন হয়তো একটা কেক কাটব, কিংবা মাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে গিয়ে ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়ে দেব। কিন্তু তাতে কী এমন হয়ে যাবে! আসল জিনিসটা হচ্ছে মা-কে প্রতিদিন বোঝা এবং মায়ের কষ্ট অনুভব করা। মা যে আমাদের জন্য নিজের জীবনটা একদম রান্নাঘরে আটকে রাখলেন, ওই জিনিসটা বুঝতে পারা এবং তাকে খুশি রাখা।’

এবারের ডিপিএলে আবাহনীর হয়ে খেলেছেন জাকের

‘মানুষের যখন বয়স হয়ে যায়, দেখবেন অনেক প্রশ্ন করে। ছোট বেলায় আম্মাকে এটা-ওটা নিয়ে প্রশ্ন করতাম, আম্মাও মাঝেমধ্যে বিরক্ত হতেন। এখন আম্মা আমাকে অনেক প্রশ্ন করেন, তবে কখনও বিরক্ত প্রকাশ করিনা আমি। কারণ আমি জানি যে মা-রা এমনই হয়। যখন বয়স বাড়ে তখন সবকিছু জানার যে আগ্রহ সেটা বাড়ে হয়তো। এই জিনিসগুলো আমার আরও ভালো লাগে, আমি তাকে বিষয়টা খোলাসা করেই উত্তর দিই। বিশেষত ক্রিকেটের কোন বিষয়টা কেমন! আসলে আমার বাবা নেই তো, মানুষকে হারানোর বেদনাটা আমি বুঝি। এজন্য আমি সবসময় চেষ্টা করি আমার মাকে হান্ড্রেড পার্সেন্ট ভালো রাখার’, যোগ করেন সম্প্রতি জাতীয় দলে ডাক পাওয়া এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ডাক পেয়েছিলেন জাকের, তবে এখনও জাতীয় দলের হয়ে তার মাঠে নামা হয়নি। ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যত নিয়ে ভাবনা সিম্পল। এতদিন পর্যন্ত ডিপিএলে খেললাম, আলহামদুলিল্লাহ ভালো হয়েছে। যতটুকু ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছি কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। তবে পঞ্চাশ রানের ইনিংসগুলোকে বড় করতে পারলে ভাল লাগত। চেষ্টা করেছি ভালো কিছু করার। সামনে ‘এ’ দলের খেলা, ওখানে বড় রান করার ইচ্ছা আছে। ‘এ’ দল জাতীয় দলের কাছাকাছি। সুতরাং সেখানে পারফর্ম করতে পারলে, যেকোনো সময় সুযোগ চলে আসবে।’

এসএইচ/এএইচএস