একপ্রান্তে জস বাটলার কিংবা শিমরান হেটমায়ারদের মতো বিশ্বের তারকা সব ব্যাটার, তবে আইপিএলের হাজারতম ম্যাচে গতকাল (রোববার) সব আলো কাড়লেন তরুণ ভারতীয় ব্যাটার যশস্বী জয়সওয়াল। ১৬টি চার ও ৮ ছক্কায় ২০০ স্ট্রাইক রেটে ৬২ বলে ১২৪ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেললেন। স্বীকৃতি টি-টোয়েন্টিতে যা তার প্রথম সেঞ্চুরি। এছাড়া আইপিএলের ইতিহাসে ‘আনক্যাপড’ (এখনো জাতীয় দলের হয়ে খেলেননি যারা) খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংসটিও এখন তার দখলে। 

অন্যদিকে, তারকাবহুল টুর্নামেন্টটিতে সবাইকে ছাপিয়ে এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও যশস্বী। এক সেঞ্চুরি ও ৬ ফিফটিতে ৯ ম্যাচে ৪২৮ রান করে অরেঞ্জ ক্যাপের দৌড়ে পেছনে ফেলেছেন ফ্যাফ ডু প্লেসিস, বিরাট কোহলি কিংবা ডেভন কনওয়েদের মতো তারকাদের। 

অথচ ক্রিকেটে যশস্বীর সুযোগ পাওয়াটাই ছিল অনেকটা রূপকথার মতো। ভারতের উত্তরপ্রদেশের ভাদোহির অখ্যাত সুরিয়ায় জন্ম তার। বাবা ভূপেন্দ্র রং বিক্রেতা, মা কাঞ্চন বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা। চার সন্তানকে বড় করতে গিয়ে হিমশিম খাওয়া পরিবারটির জন্য জয়সওয়ালকে ক্রিকেটার বানানোর খরচ জোগানো প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছিল। কিন্তু নাছোড়বান্দা জয়ওয়াল তাকে মুম্বাইয়ে নিয়ে আসার জন্য বাবাকে বুঝিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন: ঝাড়ুদার থেকে কলকাতার রূপকথার নায়ক রিংকু

দশ বছর বয়সে মুম্বাই চলে আসেন তিনি। চোখে স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হওয়ার। পেট চালাতে প্রথমে দোকানে কাজ নেন। কিন্তু মাথায় তখন শুধুই ক্রিকেট। প্রতিদিন অনর্গল অনুশীলন। প্র্যাকটিসের পেছনে এতটাই সময় দিতেন যে, দোকানের জন্য আর সময় ছিল না। কাজ চলে যায় কিছু দিনের মধ্যেই।

তবে অনুশীলন বন্ধ থাকেনি। ময়দানেরই এক মাঠ কর্মীর সঙ্গে পরিচয় হয়ে যায়। তার বদান্যতায় তাঁবুতেই রাত কাটাতেন। সেখানে বিদ্যুৎ ছিল না, খাওয়ার পানি ছিল না। শুধু ছিল ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন। সেই সময় ক্রিকেট কোচ জ্বালা সিংয়ের চোখে পড়ে যান যশস্বী। ঘুরে যায় জীবনের গতিপথ।

ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, এরপর জয়সওয়ালকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন জ্বালা। হবু স্ত্রী বন্দনাকে বলে দেন, এই ছেলেটাকে কিন্তু নিজের ছেলের মতোই গড়ে তুলতে হবে। বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। সেই শুরু। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। জ্বালাকে জয়সওয়াল শুরুতে শুধু বলেছিলেন, ‘স্যার, আমি আর কোনো কিছু পারি না। শুধু ক্রিকেট খেলতে পারি। আমি আপনার সব কাজ করে দেব। যা বলবেন সব করব। ঘর পরিষ্কার করব, জুতো পালিশও করে দেব। শুধু ক্রিকেট খেলতে দেবেন।’

শুরু হলো যশস্বীর কোচিং। জ্বালার কোচিং সেন্টারে। ফলও পাওয়া গেল হাতেনাতে। তার স্কুলক্রিকেটে ৩১৯ রান ও ১৩ উইকেট নেয়া লিমকা রেকর্ড বইতে স্থান করে নিয়েছে। তারপর ২০১৯ সালে মুম্বাই দলের হয়ে খেলা শুরু। সেই বছর এক হাজার ৮৪৫ রান করেছেন ১৫ ম্যাচে। ১৯ বছরের কম বয়সীদের বিশ্বকাপে করেছেন চারশ রান। এরপর আইপিএলের অন্যতম সফল দল রাজস্থান রয়্যালস তাকে দলে ভেড়ায়। 

আরও পড়ুন: পাঞ্জাবের খেলোয়াড়দের অতিভোজনে বিপাকে পড়েছিলেন প্রীতি

ভারত ও মুম্বাইয়ের অধিনায়ক রোহিত শর্মার মন্তব্য, যশস্বী নিজের খেলাকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আমি জানতে চেয়েছিলাম, কী করে এত শক্তি পাও। যশস্বী জানিয়েছে, নিয়মিত জিম করে। ভারত ও রাজস্থানের সম্পদ যশস্বী।

এফআই