জাহানারার পছন্দ সেমাই, জ্যোতির চটপটি
সিয়াম সাধনার পবিত্র মাস শেষে মুসলমানরা মেতে উঠেছেন ঈদ উদযাপনে। বিশেষ এই দিনটিকে ঘিরে সবারই নানান পরিকল্পনা থাকে। বাদ যান না দেশের নারী ক্রিকেটাররাও। ঈদ ব্যস্ততা নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি এবং তারকা পেসার জাহানারা আলম।
পেসার জাহানারার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তার কাছে ঈদের মানে কী। টাইগ্রেস এই পেসার জানালেন,'ঈদটাকে সবসময় অন্যভাবে দেখি। ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে নতুন জামা, সাজগোজ করা কিংবা ঘুরতে যাওয়া। সারাদিন আনন্দ-উল্লাস। বিশেষ করে ঈদের দিন সকালে তো সেমাই খেতেই হবে। বাসায় একবার খাওয়া বাইরে থেকে আবার কিনে খাওয়া।'
বিজ্ঞাপন
জাতীয় দলের খেলা থাকলে দেশের বাইরে ঈদ কিভাবে কাটে জানতে চাইলে জাহানারা বলেন, 'দেশের বাইরে সত্যি কথা বললে তখন ঈদের আনন্দটাই মনে হয় না। মনেই হয় না যে ঈদ হচ্ছে। বাংলাদেশে যে মজা হয় বাইরে তো ওভাবে হয় না। গতবছর দুবাইতে ছিলাম ঈদের সময়। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে যে যদিও ওটা মুসলিম দেশ তবে সেভাবে মজাটা আসলে করতে পারিনি। আমাদের দেশে এক সপ্তাহ আগে থেকে উদযাপন শুরু হয়। ঈদের পরও ঈদ ঈদ ভাব থাকে, কিন্তু এটা তো দেশের বাইরে থাকে না। খুব মিস করি বাইরে থাকলে। তখন কাছের মানুষ পরিবারের, বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় সবাইকে মনে পড়ে।'
ঈদের দিনে নিজ হাতে রান্না করেন কি না প্রশ্ন শুনেই জাহানারা বেশ উচ্ছ্বাস নিয়েই বললেন, 'অবশ্যই রান্না করি। যখন পরিবারের সঙ্গেই করা হয় তখন একটা বা দুইটা আইটেম রান্না করি। যদি সুযোগ থাকে তখন বিরিয়ানি বা জর্দা রান্না করি। মাঝে মাঝে সেমাই করি। একটা বা দুইটা আইটেম করিই। এছাড়া যখন ঢাকায় ঈদ করি একা তখন দেখা যায় যে ঈদের জন্য যে আইটেম হওয়া দরকার সবই করি। যেমন বিরিয়ানি, মাংস, কিংবা প্লেন পোলাও। রোস্ট সেমাই, কাবাব, জর্দা, মাছ, চটপটি এরকম করে বেশ অনেক আইটেমই রান্না করা হয়। বাসায় অনেক আত্মীয় আসে। আমার কাছে ঈদ হচ্ছে কাছের মানুষের সঙ্গে সময় কাটানো, খাবার থাকতে হবে এবং নতুন জামা থাকতে হবে। ঘোরাঘুরি আনন্দ তো আছেই।'
এছাড়া সালামি পেতে কিংবা দিতে বেশ পছন্দ জাহানারার, 'সালামি পেতে খুবই ভালো লাগে। সালামি মিস করি এখন। তবে হ্যাঁ বিশেষ কিছু মানুষের থেকে এখনো সালামি পাই। এটা ভালো লাগে যে এখনো আমি সালামি পাই। তবে এখন আমি বড় হয়ে গিয়েছি সালামির পরিমাণটা বেশি আমাকে দিতে হয়। তাতে আমি বেশি খুশি। কেননা সালামি দেওয়া ও পাওয়া দুটোই সমান আনন্দের।'
এদিকে বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির কাছে এ সময়ের ঈদকে অনেকটা যান্ত্রিক মনে হয়। অবশ্য কারণটাও ব্যাখা করে তিনি বলেন, 'প্রথমত বলি যে এখনকার ঈদগুলো কেমন যেন যান্ত্রিক। আমরা যেমন যান্ত্রিক হয়ে গেছি ঈদটাও তেমন হয়ে গেছে। আগে ঈদের সময় নানু বাড়ি দাদু বাড়ি যাওয়া সবার সঙ্গে মিলে ঈদ করা হতো। সেটা তো এখন আর হয় না, যে যার বাসায় ঈদ করা হয়। সবথেকে বড় কথা হলো ঈদ বলতে ছোটদের ঈদ, কারণ তারাই তো সব থেকে বেশি আনন্দ করে। ছোটরা ঈদের দিন ঘুরে বেড়ায়, মজা করে তাদের কোনো কাজ থাকে না। সবকিছু মিলে বলা যায় ঈদ তাদের।'
অবশ্য নারী দলের এই অধিনায়ক মিস করেন তার ছোট বেলার ঈদকেই, 'আমাদের সবথেকে বেশি ভালো লাগে ঈদের আগের দিন রাতে হাতে মেহেদী লাগানো। সেটাকে সবথেকে বেশি ভালো লাগে। কেননা সকাল বেলায় উঠে তখন দেখাদেখি হয় কার হাতের মেহেদি রং ভালো হয়েছে। একটা কম্পিটিশনের মতোই আর কি। এরপর ফ্রেশ হয়ে নতুন জামা পরে বড়দের থেকে সালামি নেওয়া। আমার কাছে মনে হয় আগের ঈদই ভালো ছিল।'
বেশ আফসোসের সুরে জ্যোতি আরও বলেন, 'ঈদ তো আসলে আগের ঈদের কথা মনে পড়লে মনে হয় তখনকার ঈদই সেরা ছিল। কারণ একটা ভিন্নতা ছিল, সবাই অন্যভাবে উদযাপন করত। এখন তো মানুষ গ্রামের বাড়িতে যায় না বা কোথাও যাতায়াত করে ঈদ করছে না যে যার বাসাতেই ঈদ করছে নিজের মতো করে। ঈদটা আগের মতো আর নেই। যেটা জাকঝমকপূর্ণ একটা বিষয় থাকত, একটা উত্তেজনা থাকত সবার মধ্যে না যে অনেক আত্মীয় আসবে সবাই একসঙ্গে থাকব, কাজিনরা একসঙ্গে থাকব মজা করব, ঘুরব। সেই বিষয়টা এখন আর হয় না। সুতরাং এটা অনেক বেশি মিস করি।'
পরিবার ছাড়া ঈদ করার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে জ্যোতি বলেন, 'দেশের বাইরে করেনি তবে বাড়ির বাইরে করেছি দেখা যাচ্ছে ঈদের পরদিন কোনো ম্যাচ বা অন্য ইভেন্ট রয়েছে সে জন্য ঢাকায় ঈদ করতে হয়েছে। যার কারণে পরিবারকে তখন অনেক মিস করেছি। মা-বাবার সঙ্গে থেকে ভাই বোনদের নিয়ে একসঙ্গে ঈদ করা আর বাইরে ঈদ করার মধ্যে অনেক তফাৎ। অবশ্যই ঈদের দিনে সবাই চাই পরিবারের সঙ্গে থাকতে, একসঙ্গে সময় কাটাতে। যখন করতে না পারি তখন মনকে অন্যভাবে স্বান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করি। আমি দেশের হয়ে এত বড় স্যাক্রিফাইস করছি। এটাই তো আমার বড় দায়িত্ব।'
ঈদের দিনে প্রিয় খাবার কি, নিজে কিছু রান্না করেন কি না, 'আসলে অন্য সময় তো এভাবে রান্না করাই হয় না। তবে ঈদের দিনে আমরা আম্মুর হাতের রান্নাই খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করি। বাড়ির বাইরে যেহেতু থাকি, সে কারণে ঈদের দিনে স্পেশাল কিছু তো থাকে। আমরা ভাই বোনরা আম্মুর হাতের রান্নার জন্যই পাগল। সবকিছু মিলিয়ে আসলে আম্মুকে টুকটাক সাহায্য করি। কেটে দেই কখনো আম্মু। আমি রান্নাটা করি। আলাদা করে স্পেশালি খাবার পছন্দ না সবই ভালো লাগে। তবে আম্মুর হাতে ঈদের দিনে বাড়ির সবাই চটপটি পছন্দ করি। আম্মু অসাধারণ চটপটি বানায়, যে কারণে ওটা আমাদের পছন্দ।'
এসএইচ/এফআই