ছবি: সংগৃহীত

হাবলের অধ্যায় পেরিয়ে গত বছরই আমরা প্রবেশ করেছি জেমস ওয়েবের যুগে। ইতোমধ্যে এই টেলিস্কোপ ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর আগের ছবি তুলে পাঠিয়েছে। এ পর্যন্ত এটাই মহাজগতের প্রাচীনতম অবস্থার সবচেয়ে বিস্তারিতভাবে তোলা চিত্র। বলা হচ্ছে, মানুষের কাল্পনিক 'টাইম মেশিনের' কিছুটা হলেও স্বাদ দিচ্ছে জেমস ওয়েব। এই টেলিস্কোপের সাহায্যে হাজার কোটি বছর আগের ছবি দেখতে পারলেও আমাদের পক্ষে সশরীরে অতীতে পাড়ি দেওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কজালিটি প্রিন্সিপলের নিয়ম ভেঙ্গে সেটা যদি সম্ভব হতো তাহলে নিশ্চয়ই বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেট ভক্ত আজ থেকে ঠিক ২৬ বছর আগে ফিরতে চাইতেন! 

সময়টা ১৯৯৭ সালের ১৩ এপ্রিল। কুয়ালালামপুরের কিলাত কিলাব মাঠে কেনিয়ার মুখোমুখি বাংলাদেশ। জয়ের জন্য টাইগারদের শেষ ১ বলে করতে হবে ১ রান, এমন সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে হাসিবুল হাসান শান্ত। তাকে আটকে দেওয়ার দায়িত্বটা ছিল মার্টিন সুজির কাঁধে। ডানহাতি এই মিডিয়াম পেসার সেদিন চেষ্টার কোনো কমতি রাখেননি। তবে ভাগ্যটা বোধহয় তার সঙ্গে ছিল না! 

সুজির করা ইনিংসের শেষ বলটা শান্তর পায়ে লেগে বল শর্ট ফাইন লেগে চলে যায়, ব্যাটে বল ছোঁয়াতে না পারলেও দুই ব্যাটার প্রান্ত বদল করতে ভুল করেননি। আর তাতেই স্বপ্নপূরণ! আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ।

পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা এই ম্যাচে স্নায়ুচাপে ছিলেন দুই দলের ক্রিকেটাররাই। ব্যতিক্রম কিছু হয়নি শান্তর বেলায়ও। বরং শেষ বলে স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা এই ব্যাটারের চাপের পারদটা একধাপ ওপরে ছিল। সেই সময়ের অনুভূতি ঢাকা পোস্টের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে গিয়ে শান্ত বলেন, 'অবশ্যই মনের ভেতর সংকল্প ছিল যেভাবেই হোক ১ রান নেবোই। জিতব তো ইনশাআল্লাহ। শেষ না হওয়া পর্যন্ত একটু চিন্তা ছিলই তবে আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। হবে না, এটা কখনও মনে আসেনি।'

আচ্ছা এমন সুখস্মৃতি কি কখনও পুরোনো হয়? শান্তর কাছে সেই স্মৃতিটা আজও ফ্রেমে বাঁধানো ছবির মতো। ২৬ বছর পর এসেও সেই দিনের কথা ভেবে তার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসিই বলে দেয় সেই স্মৃতি এখনও কতটা টাটকা।

'মুহূর্তটা মনে পড়লে অনেক ভালো লাগে আসলে (হাসি)। সেই দিনের কারণে বাংলাদেশ ক্রিকেট আজ এখানে। (দেশের ক্রিকেট) দিন দিন উন্নতি করছে, বাংলাদেশকে সবাই চিনছে। এটা আসলে খুবই ভালো লাগে।'

সেই আসরে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আকরাম খান। বাংলাদেশ অধিনায়কের বিশ্বাস ছিল তার দলের ওপর তারা পারবেন, শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছিল।

ফাইনাল ম্যাচের স্মৃতি মনে করতে গিয়ে ঢাকা পোস্টকে আকরাম বলেন, 'চিন্তা তো ছিলই, তখন এক ওভারে ৬/৭ রান অনেক বেশি ছিল। এখন হয়তো কোনো ব্যাপার না। কিন্তু তখন ৬ রান হলেই কিন্তু ম্যাচ জেতা কঠিন হয়ে যেত। কিন্তু ব্যাটিংয়ে আমরা খুবই পজিটিভ ছিলাম। সবাই দলের জন্যই খেলেছে। শেষে ১ বলে ১ রান লাগতো, চিন্তা হচ্ছিলো তবে বিশ্বাস ছিল যে আমরা জিতবো।' 

নাটকীয়তায় ভরা সেই ফাইনাল ম্যাচের শেষটা হয়েছিল ছবির মতো। আপনি চাইলে ভ্যানগখের সেই বিখ্যাত 'স্টারি নাইট ওভার দ্য রোন' চিত্রকর্মের সঙ্গে এই জয়টাকে তুলনা করতে পারেন। সেই ছবিতে যেমন আকশের বুকজুড়ে ব্যাথার আঁকি-বুকি, তেমনি বাংলাদেশের এই জয়ের পেছনেও হাজারটা ব্যর্থতার গল্প ছিল। অথচ পরের সময়টাতে এই ২ উইকেটের জয় যে কত শত তরুণের সফল গল্পের কারণ হয়েছে, তার হিসেব মেলানো ভার!

এই একটা জয় আলাদিনের চেরাগের মতো বদলে দিয়েছিল এদেশের ক্রিকেটকে। আইসিসি ট্রফি জেতায় ওয়ানডে স্ট্যাটাস পায় বাংলাদেশ। এরপর ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর পরের বছরই টেস্ট স্ট্যাটাসও পেয়ে যায় লাল-সবুজের দল। এরপরের গল্পটা সবারই জানা।

ওয়ানডেতে এখন বিশ্বক্রিকেটেই পরাশক্তি বাংলাদেশ। বাকি দুই ফরম্যাটেও বেশ উন্নতি করেছে টাইগাররা। এমন উন্নতির পেছনে কেনিয়ার বিপক্ষের সেই জয়টা বিগ ব্যাঙের মতোই কাজ করছে। যেই মহাবিস্ফোরণ থেকে নির্গত শক্তিতে এখনও এগিয়ে যাচ্ছেন সাকিব-তামিম কিংবা শান্তর মতো তরুণরা!

এইচজেএস