‘টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল ম্যাচটা হবে তো?’

এই একটা প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে মেলবোর্নে। শীত শেষে বসন্তের এই সময়ে আকাশ যে কখন কেঁদে উঠবে কে জানে! তবে রোববার যে বৃষ্টি নেমে আসবে সেটা প্রায় নিশ্চিত। আবহাওয়াবিদরা স্পষ্ট করেই বলছেন বারিধারায় সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে ফাইনালের! বল মাঠে গড়ানোর ঠিক আগে মেলবোর্নের আনপ্রেডিক্টেবল আবহাওয়া নিয়েই কথা হচ্ছে বেশি! 

বৃষ্টির কাছে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে ফাইনালের প্রিভিউ। তারপরও এই বার্তাটা ক্রিকেটপ্রেমী মাত্রই জেনে গেছেন-রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বিশ্বকাপের ফাইনালে লড়বে পাকিস্তান-ইংল্যান্ড। বিখ্যাত মাঠে ফিরে এসেছে সেই ১৯৯২ সালের আবহ। সেটা গল্পটা করার আগে আকাশের কান্নায় তো কপালে ভাঁজ দুই অধিনায়ক বাবর আজম আর জস বাটলারের!

সেটা হবে না কে-অস্ট্রেলিয়ান আবহাওয়াবিদরা তো জানিয়েই দিয়েছেন রোববার ফাইনালের দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা ১০০ ভাগ। পূর্বাভাস জানাচ্ছে ১০ থেকে ২০ মিলি মিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা তো আছেই। সঙ্গে বজ্রঝড়ের সঙ্গে আছে ভারী বর্ষণও। এই যখন অবস্থা তখন ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা হয় কী করে বলুন। তবে স্বস্তির খবর হলো ফাইনালের একটা রিজার্ভ ডে আছে। সেখানেও কথা থেকে যায়-পরের দিনেও যে আছে বৃষ্টির সম্ভাবনা!

ফাইনালের আগে আবহটা এখন এমনই। তারপরও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল বলে কথা। কোথায় যেন দুই দলেরই ভাগ্য মনে হয় একই এক সুতোয় গাঁথা! দুটো দলই শুরুতে নিজেদের ঠিকঠাক চেনাতেই পারছিল না। পাকিস্তান তো হেরেই বসেছিল ভারতের কাছে। ইংল্যান্ড অবশ্য আফগানিস্তানকে হারিয়ে শুরু করে। এরপরই আয়ারল্যান্ডের কাছে হারে চুপসে যায়। তবে সেই ধাক্কাটাই জাগিয়ে দেয় জস বাটলারদের। তারপর তো সব অনিশ্চয়তা পেছনে ফেলে দল ফাইনালে। সবচেয়ে বড় কথা ভারতের স্বপ্ন মাড়িয়ে ইংলিশরা উঠে এসেছে শিরোপা লড়াইয়ে।

একইসঙ্গে ৩০ বছরের পুরোনো স্মৃতিটাই জেগে উঠেছে। তিন দশক আগে এই মেলবোর্নেই ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছিল পাকিস্তান। ফের যেখন একই মাঠে একই প্রতিপক্ষ তখন তো বাড়তি একটা আবেগ কাজ করবেই পাকিস্তানিদের। 

এই যেমন মিল এখানেই শেষ নয়। ১৯৯২’র ওয়ানডে বিশ্বকাপ আর ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ-আইসিসির বৈশ্বিক দুটি আসরে পাকিস্তানের ফাইনালে ওঠার গল্পটাতে দারুণ মিল। সেবার ১০ উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হার দিয়ে শুরু, দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে আত্মসমর্পন, বৃষ্টিভাগ্যে ইংল্যান্ডের কাছ থেকে এক পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালে উঠা যখন যদি-কিন্তুর সমীকরণে, সেখান থেকে প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে সেই পাকিস্তানই জিতে নেয় বিশ্বকাপ শিরোপা। ইমরান খান ছিলেন সেই জয়ের অগ্রভাগে!

চলতি বিশ্বকাপেও একইভাবে পথ হারাতে হারাতে কখন যে বাবর আজমরা উঠে গেছে ফাইনালে। প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে হার। দ্বিতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পথহারা। তৃতীয় ম্যাচ থেকে পঞ্চম ম্যাচে জেতে বাবর আজমের দল। এরপর নেদারল্যান্ডসের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকার হারে পাকিস্তান পেয়ে যায় বড় সুযোগ। যেখানে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় পেলেই সেমিতে। অবশ্য একই সুযোগ ছিল সাকিব আল হাসানদেরও। কিন্তু টাইগাররা না পারলেও পেরেছে পাকিস্তান। তারপর আর পিছু ফিরে তাকায়নি। সেমিতে শক্তিশালী নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে অনায়াসে!

ইতিহাস, ভেন্যু আর প্রতিপক্ষ সব যখন এমন মিল-তখন বাবর কেন হতে চাইবেন না ইমরান খান? 

শনিবার মেলবোর্নের ইয়ারা পার্কে বসে হাসিমুখে পাকিস্তান ক্যাপ্টেন বলছিলেন, ‘হ্যাঁ, মিল (১৯৯২ বিশ্বকাপের সঙ্গে) তো আছেই। আমরা ট্রফিটা জেতার চেষ্টা করব। এই দলটার অধিনায়কত্ব করাও গর্বের। বিশেষ করে এমন একটা মাঠে। ইনশাআল্লাহ রোববারের ফাইনালে আমরা নিজেদের শতভাগ উজাড় করে দিব। আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি। ফাইনালেও তা ধরে রাখার চেষ্টা করব।’

অবশ্য ইংলিশরাও কম যায় না। তারা ভারতের মতো শক্ত প্রতিপক্ষকে রীতিমতো নাস্তানাবুদ করে উঠে এসেছে ফাইনালে। সেমি-ফাইনালে ১০ উইকেটের জয়ের পর তো মাটিতে পা পড়ার কথা না। তারপরও বাটলার ভুলে যাননি নিকট অতীত, ‘আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচতে হার ব্যাপক হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। সেই ম্যাচে হার থেকে আমরা বেশ কিছু শিক্ষা লাভ করেছি। সেটিই আমাদের এগিয়ে নিয়ে গেছে। সেই হার আমাদের ধাক্কা দিয়েছিল। আমি মনে করি, এখন পর্যন্ত যে ক্রিকেট আমরা খেলেছি, তাকে সেই ম্যাচের প্রতিক্রিয়ায় হিসেবে দেখতে পারি।’

সঙ্গে একটা প্রতিশোধের নেশাও পেয়ে বসেছে বাটলারকে। অগ্রজদের হারের জবাবটা এবার দিতে চান সেই একই ভেন্যুতে। ১৯৯২ সালের ফাইনাল প্রসঙ্গ উঠতেই বাটলার বলছিলেন, ‘দেখুন আমি কঠিন চ্যালেঞ্জের প্রত্যাশা করছি, যেমনটা আমি আগেও বলেছিলাম। তারা এমন একটি দল, যাদের বিপক্ষে সম্প্রতি আমরা অনেক খেলেছি।আমি নিশ্চিত, রোববার এ ব্যতিক্রম হবে না।’

ফাইনালে এসে বলা হচ্ছে লড়াইটা হবে পাকিস্তানি পেসারদের সঙ্গে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের। অবশ্য পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে এগিয়ে রাখতে হবে ইংলিশদেরই। যেখানে আগের সাক্ষাতের মধ্যে ১৮বার জিতেছে তারা। ৯বার পাকিস্তান। কিন্তু এবার খেলাটা ঠিকঠাক হবে তো? শনিবার গোটা রাতভরই ঝরেছে বৃষ্টি! একেবারে বাংলাদেশের কাদুনে বর্ষার মতো! টিপ টিপ বৃষ্টি রাত শেষে কি আশ্চর্য, সকালে দেখা মিললো রোদের!

এমন রোদ-বৃষ্টির খেলায় না জানি আবার ফাইনালটাতে হেসে উঠে দুই দলই। বিশ্বকাপ এমন দৃশ্য এর আগে যে কখনোই দেখেনি!

এটি/এনইউ