ফাইনালের আগে ভারতের জন্য ‘কাঁদছে’ মেলবোর্ন
কেমন যেন ভাঙা হাটের মতো চারপাশ। কোথাও তেমন কোন উত্তেজনার দেখা নেই। অথচ যেদিন মেলবোর্নে এসে এমসিজিতে পা রেখেছিলাম- একটা উৎসব আমেজ চোখে পড়েছিল। অবশ্য তখনো অ্যাডিলেড ওভালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনাল ম্যাচটা খেলেনি ভারত। ভক্তরা ভেবেছিলেন, তেরঙ্গা উড়িয়ে ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে...’ গাইতে গাইতে তারা চলে আসবেন মেলবোর্নে। একটা ভারত-পাকিস্তানের ফাইনালের বাতাবরণ ছিল চারপাশে!
পাকিস্তান পারলেও পারেনি ভারত। ইংল্যান্ডের সামনে এক কথায় নাস্তানাবুদ হয়েছেন বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মারা। অ্যাডিলেডেই শেষ তাদের মিশন! সঙ্গে হৃদয় ভেঙেছে ভারতীয়দেরও। এটা তো অনেকেরই জানা গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে আছে শক্তিশালী ভারতীয় কমিউনিটি। তার ব্যাতিক্রম নয় অস্ট্রেলিয়াতেও।
বিজ্ঞাপন
যেখানেই ভারতের খেলা-সেখানেই উপচে উঠা দর্শক চোখে পড়েছে গ্যালারিতে। বিশ্বকাপ শুরুর অনেক আগেই ফুরিয়ে যায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাদের ম্যাচের টিকিট। অনেকেই আবার পরিবার নিয়ে মেলবোর্নে আসার পরিকল্পনাও করছিলেন। তার ওপর ফাইনালটা ছুটির দিনে! কিন্তু প্রত্যাশার সঙ্গে যে প্রাপ্তির দেখাটাও হলো না!
তাইতো আক্ষেপে পুড়ছিলেন হারভিন কৌর নামের এক তরুণ। তার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের পাশেই। হতাশা নিয়ে বলছিলেন, ‘বন্ধুরা মিলে অনেক পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম। কিন্তু দেখুন, কী হয়ে গেল। এখন আর ফাইনাল দেখার কোন প্রশ্নই আসে না।’ তিনি শুধু একা নন, প্রতিটি প্রবাসী ভারতীয় এখন এভাবেই ভাবছে। যারা ভেবেছিলেন যতো মূল্যেই হোক-টিকিট কেটে ফাইনাল দেখবেন-তারা এখন দিব্যি ছুটির দিনে মাঠের চারপাশেও আসতে চাইছেন না!
পাকিস্তান-ইংল্যান্ড ফাইনাল নিয়েও কেমন যেন একটা উৎসবের ভাটা। কারণ যেমনটা বলেছিলাম মেলবোর্নেও ভারতীয় কমিউনিটি বড্ড শক্তিশালী। আর ক্রিকেট উন্মাদনা মানেই তো উপমহাদেশ! আর সেখানে ভারতীয়দের দাপটটাও চোখে পড়ার মতো।
অথচ পাকিস্তান আছে ফাইনালে ভারত নেই। এটা যেন আরও বেশি গায়ে জ্বালা দিচ্ছে ভারতীয়দের। যারা ফাইনালের টিকিট কেটেছিলেন, তারা বিক্রি করে দিচ্ছেন। মজার ব্যাপার হলো তার উত্তাপ লেগেছে ফাইনালের টিকিট বিক্রিতেও। ১৩ নভেম্বরের ফাইনালের টিকিটের মূল্য মনে হচ্ছিল আকাশ ছোঁবে, সেটি এখন ৭৫ ডলার থেকে কমে ২৫ অস্ট্রেলিয়ান ডলারে! যারা আগে অনলাইন থেকে ফাইনালের টিকিট কেটে নিয়েছিলেন, তারা এখন পুড়ছেন হতাশায়!
অবশ্য এমনটা যে হবে আঁচ করাই যাচ্ছিল। ইংলিশদের কাছে ভারত ১০ উইকেটে হারের পর চুপসে যায় সম্প্রচারের দায়িত্বে থাকা টেলিভিশন চ্যানেলও। কারণ যেখানে সাড়ে তিনঘণ্টায় শত কোটি রুপি অর্জনের লক্ষ্য ছিল-সেখানে ভারতের দর্শক আগ্রহ নেই বললেই চলে! রোহিত শর্মা-বাবর আজম মুখোমুখি হলে বিজ্ঞাপনটাই হতো ভিন্ন!
এটা অনেকেরই জানা যে বিশ্ব ক্রিকেট বাণিজ্যের বড় অংশটাই আসে ভারত থেকে। এ কথায় ক্রিকেটটা আইসিসির মোড়কে তারাই চালায়। এমন কী বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থাটিতেও ভারতীয়দেরই সংখ্যা বেশি। সেই আধিপত্য নিয়ে থাকলেও ভারতের বিদায়ে কেমন যেন রঙ হারিয়ে ফেলেছে সব!
কিন্তু এটাই ক্রিকেট! এখানে মাঠের ক্রিকেটে যারাই ভাল খেলবেন এগিয়ে যাবেন তারাই। সেমি-ফাইনালে ওঠে এলেও এবার ভারতীয় দলটাকে তো সেভাবে চেনা যায়নি। নিশ্চয়ই ভুলে যাননি বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটা হারতে হারতে জিতেছে ভারত। যেখানে বিরাট কোহলির ফেইক ফিল্ডিং আর ভেজা মাঠে খেলা কলঙ্ক হয়ে আছে ভারতের জয়ে। কোহলি ফেইক ফিল্ডিংয়ে জরিমানা পেলে তো ম্যাচটা জিততো বাংলাদেশই। তখন সেমিতে হয়তো দেখা যেতো সাকিব আল হাসানদের!
এসবই অবশ্য এখন পুরোনো গল্প। আসল কথা হলো-ভারতও নেই, বাংলাদেশ দলও চলে গেছে দেশে। রোববার ইয়ারা নদীর পাশের মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে লড়বে পাকিস্তান-ইংল্যান্ড! আর মাঠের বাইরে থেকে হতাশায় পুড়বে ভারতীয়রা!
এটি/এনইউ