৪০০তম ওয়ানডে খেলতে নামছে বাংলাদেশ
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশাল একটি জায়গা দখলে করে নিয়েছে ‘হাওয়া’ সিনেমাটি। মেজবাউর রহমান সুমনের পরিচালমায় চঞ্চল চৌধুরী, নাজিফা তুষি, শরিফুল রাজদের অভিনয়ে দর্শকপ্রিয়তার চূড়ায় উঠেছে হাওয়া। এই হাওয়া সিনেমার শিবু কুমার শীলের একটি গান বেশ ‘ভাইরাল’ হয়েছে, ‘এ হাওয়া, আমায় নেবে কত দূরে?’
গানের এই লাইনটি বর্তমান সময়ের ওয়ানডে ফরম্যাটের সঙ্গে মেলাতে পারেন। প্রশ্ন উঠেছে, পঞ্চাশ ওভারের এই ফরম্যাটটা, যাবে কত দূরে? ক্রিকেট বোদ্ধা থেকে শুরু করে সাবেক, বর্তমান অনেক খেলোয়াড় ওয়ানডে ফরম্যাটের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের তোপের মুখে ওয়ানডে সংস্করণ হারিয়ে যেতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।
বিজ্ঞাপন
এমন ডামাডোলের মধ্যেই একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ দল। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে ৪০০তম ওয়ানডে খেলতে নামবে টাইগাররা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে আজ বুধবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১.১৫টায়, হারারে স্পোর্টস গ্রাউন্ডে।
পঞ্চাশ ওভারের ফরম্যাটের শুরুটা হয়েছিল ৫১ বছর আগে, ১৯৭১ সালে ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে। বাংলাদেশের তখনো ক্রিকেটে সঙ্গে সেভাবে সখ্যতা গড়ে ওঠেনি। ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ ওয়ানডে ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হয় টাইগারদের নাম। এশিয়া শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে লাল-সবুজের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর দল ওয়ানডে অভিষেকের ম্যাচটি হেরেছিল ৭ উইকেটে।
সেই যে যাত্রা শুরু, বয়ে চলেছে তরী। একের পর এক সিঁড়ি পাড়ি দিয়ে ওয়ানডে ফরম্যাটে দাপট দেখিয়ে আজ বিশ্ব ক্রিকেটে সুসংহত বাংলাদেশ, নিজেদের অবস্থান নিয়ে গেছে ওপরের কাতারে। দেখতে দেখতে ৪০০তম ওয়ানডে ম্যাচের সামনে দাঁড়িয়ে টাইগাররা। ক্রিকেট বিশ্বের দশম দল হিসেবে এই মাইলফলকের ছোঁয়ার অপেক্ষা বাংলাদেশ।
প্রথম ম্যাচ পাকিস্তানের বিপক্ষে হারে শুরু। এরপর ৫০তম ম্যাচ খেলতে লেগে যায় দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর। ২০০২ সালে প্রতিপক্ষ আবার পাকিস্তান। ঢাকায় সে ম্যাচে খালেদ মাসুদের দল হেরেছিল ৮ উইকেটে। তবে ৫০ থেকে ১০০ ম্যাচ খেলতে বাংলাদেশের সময় বেশি লাগেনি। ২০০৪ সালে ভারতের বিপক্ষে ঢাকায় ১৫ রানে জয় পায় স্বাগতিকরা। সেটিই ভারতের সঙ্গে প্রথম জয় বাংলাদেশের।
এরপর ২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারত এবং ২০০৯ সালে উইন্ডিজকে তাদের মাটিতে হারিয়ে ১৫০ ও ২০০তম ম্যাচ জেতে হাবিবুল বাশার সুমন ও সাকিব আল হাসানের দল। তবে ২৫০ এবং ৩০০তম ম্যাচ দুটিতে লেখা হয় পরাজয়। ২০১১ সালে জিম্বাবুয়ের হারারেতে আড়াইশতম ম্যাচটি হারে বাংলাদেশ, ২০১৫ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল হার ছিল তিনশতম ম্যাচ। ৩৫০তম ম্যাচে আবার জয় পায় বাংলাদেশ। ঢাকায় তারা হারায় জিম্বাবুয়েকে।
এবার অপেক্ষায় ৪০০তম ম্যাচ। তবে এ ম্যাচটি খেলতে নামার আগে দলীয় অবস্থান একেবারে সুখকর নয়। প্রতিপক্ষ আবার জিম্বাবুয়ে হলেও তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জেরে সিরিজ খোয়ানো বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাস ঠেকেছে তলানিতে। তবে সব ছাপিয়ে ধবলধোলাই এড়ানোর পাশাপাশি মাইলফলকের ম্যাচটি জয়ে রাঙাতে চাইবে অধিনায়ক তামিম ইকবালের দল।
এ যাবত খেলা ৩৯৯ ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশ দল জয় পেয়েছে ১৪৩ ম্যাচে, সেখানে পরাজয় ২৪৯টি, ফল হয়নি ৭ ম্যাচে। এই ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত ৮১টি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলে জয় ৩১টি আর ভাগাভাগি হয়েছে ৪টি সিরিজের ফল।
এ পর্যন্ত খেলা ৩৯৯ ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশিবার মুখোমুখি হয়েছে জিম্বাবুয়ের। ৮০ ম্যাচে ৫০টি জয় তাদের বিপক্ষে, যেখানে হার ৩০টি। এছাড়া শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫১, উইন্ডিজের বিপক্ষে ৪৪, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৮, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৭ এবং ভারতের বিপক্ষে ৩৬ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ দল।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি ২০১৯ বিশ্বকাপে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৩৩ রানের। সর্বনিম্ন ৫৮ রানে দুইবার গুটিয়ে যাওয়ার রেকর্ড আছে নিজেদের ‘পয়া’ ভেন্যু মিরপুরে। রানের হিসাবে সবচেয়ে বড় জয় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, ২০২০ সালে সিলেটে ১৬৯ রানে জিতেছিল টাইগাররা।
ব্যক্তিগত অর্জনে ব্যাট হাতে এগিয়ে তামিম ইকবাল। ২২৮ ইনিংসে ৮০৫৫ রানে মালিক এই বাঁহাতি ওপেনার। সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৪টি শতকের মালিকও তিনি। যেখানে সাকুল্য সেঞ্চুরি আছে ৬১টি। সবথেকে বেশি অর্ধশতক তামিমের, ৬৯টি। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ লিটন দাসের ১৭৬, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
বল হাতে আধিপত্য সাকিব আল হাসানের। ২১৮ ইনিংসে ২৮৫ উইকেট নিয়ে শীর্ষে তিনি। দেশের জার্সিতে সব থেকে বেশি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন মুশফিকুর রহিম, ২৩৫টি। এ পর্যন্ত ১৫ জন অধিনায়ক পেয়েছে বাংলাদেশ দল, যেখানে সব থেকে বেশি অর্থাৎ ৮৮ ম্যাচ নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।
টিআইএস/এনইউ