এমন দৃশ্য শিগগিরই বিলুপ্ত হতে চলেছে, শঙ্কা পিটারসেনের/ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে ফিসফাস আগে থেকেই হচ্ছিল বেশ। তবে গেল মাসে আইসিসির ভবিষ্যৎ সফর পরিকল্পনা প্রকাশের পর সেই ফিসফাসটা রীতিমতো শোরগোলেই পরিণত হয়েছে। ঠাসবুনটের সূচি, তাতে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের প্রাধান্য নিয়েই মূলত আলোচনা হচ্ছিল। এরপর বেন স্টোকসের ওয়ানডে থেকে অবসর নেওয়া, ওয়ানডে সুপার লিগে বাজে অবস্থানে থাকার পরও দক্ষিণ আফ্রিকার অস্ট্রেলিয়া সফর বাতিল করে নিজেদের টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বিষয়টা নিয়ে আলোচনা বেড়েছে আরও। 

সাবেক অনেক ক্রিকেটারই বলছেন, এভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ওপর থেকে গুরুত্ব সরে যাচ্ছে। কেউ কেউ আরেকটু আগে বেড়ে বলছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই পড়ে গেছে হুমকির মুখে! এবার কেভিন পিটারসেন যোগ দিলেন এই আলোচনায়। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে। তার মনে হচ্ছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কেবল বড় দলগুলোই খেলবে ক্রিকেটের দীর্ঘতর ফরম্যাটে, বাকিরা এই ফরম্যাট থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেবে। 

এর আগ পর্যন্ত সাবেক ইংলিশ ব্যাটসম্যান পিটারসেন আইপিএল, বিগব্যাশের মতো লিগগুলোয় খেলার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাবই ব্যক্ত করেছিলেন। তবে এখন মনে হচ্ছে, বিষয়টা বেশি বেশিই হয়ে যাচ্ছে। 

কেভিন পিটারসেন/ফাইল ছবি

সম্প্রতি বেটওয়েকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, ২০২৫ সালে কেবল বড় দলগুলোই টেস্ট খেলবে। আমি জানি তারা আমাকে ঘৃণা করবে এই কথার জন্য, কিন্তু যে কোনো টেস্ট সিরিজ, যেখানে নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবা অন্য কোনো দল যারা শীর্ষ দলগুলোর একটি নয়, সেই সিরিজটা কেবল ব্যর্থই হতে পারে। ২০২৫ সালে আমি একটা দৃশ্যই দেখতে পাচ্ছি, যেখানে দেখা যাবে, টেস্ট ক্রিকেট মানেই অ্যাশেজ, ইংল্যান্ড-ভারত, অস্ট্রেলিয়া-ভারত, ভারত-পাকিস্তান… এমন সব সিরিজই কেবল হবে। যদি না তারা টেস্ট ক্রিকেটারদের অবিশ্বাস্য টাকা দেওয়া শুরু করে। আমি আগেও লিখেছি, কীভাবে ইসিবি ইংল্যান্ড দলকে রক্ষা করতে পারে, কিন্তু সেটা অনেক দলের পক্ষেই সম্ভব হবে না।’

শুধু টেস্ট ক্রিকেটই নয়, দ্বিপাক্ষিক সাদা বলের ক্রিকেট সূচিও ভুগবে, অভিমত পিটারসেনের। যার ফলে প্রভাব পড়বে টেস্ট ক্রিকেটেও। তিনি বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক সাদা বলের সিরিজও বিপদে আছে। এমন মনে হচ্ছে, কেউ ভারত কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের সিরিজটাকে কেউ পাত্তাই দেয়নি। এরপর দেখুন, প্রোটিয়ারা পরের বছর অস্ট্রেলিয়া সফর বাতিল করে নিজেদের টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা আয়োজন করবে। এটা আমাকে দুঃখ দেয়, কারণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, বিশেষ করে টেস্ট, এখনো খেলাটার সবচেয়ে শুদ্ধ ফরম্যাট। কিন্তু এটা আমাদের মেনে নিতেই হবে যে, সময় যত গড়াবে, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট ততই মাথা ঘুরিয়ে দিতে থাকবে।’ 

খেলাটা তো বদলে যাচ্ছেই, পিটারসেন গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদাটাকেও। তার ছেলেকে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে সাবেক এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান জানালেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতর ফরম্যাটকেই পছন্দ করছে, কারণ এটা দ্রুতই ফল এনে দিতে পারে।

তিনি বললেন, ‘কেবল খেলোয়াড় বা নীতিনির্ধারকরাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যে ভিন্নভাবে কন্টেন্ট গ্রহণ করছে, এটাও আমরা অগ্রাহ্য করি। এখনকার দিনে, তারা হোয়াটস্যাপেও আর আগ্রহ খুঁজে পাচ্ছে না। আমার ছেলের প্রিয় প্রতিযোগিতা হচ্ছে দ্য হান্ড্রেড। সে এটা ভালোবাসে, সে একজন সাদার্ন ব্রেভ ভক্ত। তার প্রিয় খেলোয়াড় হচ্ছে ক্রিস জর্ডান। সে যখনই সুযোগ হয়, মাঠে বসে খেলা দেখার চেষ্টা করে। খেলাটা যখন দ্রুতগতিতে হতে থাকে, তখন তরুণরা আরও বেশি এতে আগ্রহী হয়। কারণ পরিবেশটা তখন আকর্ষণীয় হয়, আর ফলাফলটাও খুব দ্রুত বেরিয়ে আসে।’

এনইউ