ভারতকে ধসিয়ে সিরিজে ফিরল ইংল্যান্ড
১৪ জুলাই, ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসের সোনার হরফে লেখা এক দিন। এই দিন যে বিশ্বকাপের ৪৪ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার বিশ্বজয়ের স্বাদ পেয়েছিল ইংলিশরা। এর ঠিক আগের দিনটা ভারতের জন্যও ঐতিহাসিক এক দিন ছিল, ২০ বছর আগে ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে নতুন দিনের সূচনা করেছিল সৌরভ গাঙ্গুলির ভারত। সেই দুই ইতিহাসের সাক্ষী যে ভেন্যু, সেই লর্ডসেই গতকাল মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড আর ভারত। দুই দলের এই লড়াইয়ে এবার শেষ হাসি ইংলিশদের। ভারতকে ১০০ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজে ১-১ সমতা ফিরিয়েছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
২০ বছর আগে লর্ডসে ইতিহাস গড়ে ব্যালকনিতে জার্সি খোলা এক উদযাপন করেছিলেন তৎকালীন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। সেই তিনি হাজির ছিলেন এই ম্যাচে। ছিলেন কিংবদন্তি শচিন টেন্ডুলকার, আর ভারতের ইতিহাসের সেরা অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিও। তবে তাদেরকে রোহিত শর্মারা অবশ্য ভালো কিছু উপহার দিতে পারেনি। ইংলিশদের কাছে যে পাত্তাই পায়নি ভারত!
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন>> সুস্মিতা সেনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন আইপিএল প্রতিষ্ঠাতা!
লর্ডসের যে উইকেটে খেলা হয়েছে কাল, তার আবার দুর্নাম আছে ‘টু পেসড’ উইকেট বলে। মানে, একটা বল তার স্বাভাবিক গতিতে আসে তো আরেকটা বল আসে স্বাভাবিকের চেয়ে ধীরগতিতে, সেটা আবার বোলারের কোনো কারিকুরি ছাড়াই। এমন উইকেটে রান হবে না তেমন, সেটাই ধারণা করা হচ্ছিল, সেটাই সত্যি হয়েছে শেষমেশ। বিশ্বের অন্যতম সেরা দুই ব্যাটিং লাইনআপ রীতিমতো সংগ্রামই করেছে রানের জন্য।
টু পেসড উইকেট বলেই হয়তো, ভারত অধিনায়ক রোহিত টস জিতে ইংল্যান্ডকে পাঠিয়েছিলেন ব্যাট করতে। আগের ম্যাচেই ওভালে শুরুতেই ইংল্যান্ডকে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন যশপ্রীত বুমরাহ। তবে গতকাল তার দেখা মিলল না। সাবধানী সূচনায় তার সঙ্গে মোহাম্মদ শামিকেও সামলে নিয়েছিলেন দুই ওপেনার জেসন রয় আর জনি বেয়ারস্টো।
আরও পড়ুন>> দল থেকে বাদ পড়লেন কোহলি
তবে বোলিংয়ে পরিবর্তন আসতেই ঘটল বিপদ। হার্দিক পান্ডিয়া তুলে নিলেন জেসন রয়কে। ৪১ রানে প্রথম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। এরপর জো রুটকে সঙ্গে নিয়ে বেয়ারস্টো এগিয়ে নিচ্ছিলেন ইংলিশদের। তবে ৩১ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি তারা। দু’জনকেই ফিরিয়ে দেন যুজবেন্দ্র চাহাল। এরপর অধিনায়ক বাটলারও বেশি দূর এগোতে পারেননি। শামির শিকার হয়ে ফেরেন তিনি। স্টোকসও একটু পর শিকার বনে যান চাহালের। ১০২ রানে পাঁচ উইকেট বিপদেই পড়ে গিয়েছিল স্বাগতিকরা।
সেখান থেকে লিয়াম লিভিংস্টোন আর মইন আলির জুটিতে হালে খানিকটা পানি পায় দলটি। ৩৩ বলে ৩৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন লিভিংস্টোন। ৪৭ রান করেন মইন। এরপর ডেভিড উইলির ৪১ রানে ভর করে ইংল্যান্ড পায় ২৪৬ রানের পুঁজি।
আরও পড়ুন>> উইন্ডিজকে উড়িয়ে টানা ৫ ওয়ানডে সিরিজ জয়
আগের ম্যাচে মামুলি লক্ষ্য বিনা উইকেটে তাড়া করে ফেলেছিল ভারত। তবে ওভালের সেই কীর্তি লর্ডসে ফেরেনি। ১০ বল খেলে ০ রানে ফেরেন ভারত অধিনায়ক রোহিত, তার ওপেনিং-সঙ্গী শিখর ধাওয়ানও ফেরেন দুই অঙ্কে যাওয়ার আগেই। এরপর চারে নামা ঋষভ পান্ত ফেরেন রানের খাতা খোলার আগে।
২৯ রানে ৩ উইকেট খুইয়ে ভারত যখন ধুঁকছে, বিরাট কোহলির কাছে বড় কিছুর চাওয়া ছিল দলের। একটা অন ড্রাইভ, একটা অফ আর একটা দারুণ স্ট্রেট ড্রাইভে তিনিও আশা দেখাচ্ছিলেন বটে। কিন্তু সে আশা অঙ্কুরেই শেষ হয়ে যায় তিনি ডেভিড উইলির অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরলে। ৪১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে সেই যে খাদের কিনারে গেল ভারত, সেখান থেকে আর ফিরতেই পারল না।
আরও পড়ুন>> র্যাঙ্কিংয়ে মিরাজের ছক্কা, না খেলেও উন্নতি মুশফিকের
শুরুতে দুই ওপেনার রোহিত আর শিখরের উইকেট নেওয়া রিস টপলি এরপর ছড়ি ঘোরালেন ইনিংসের বাকি অংশে। ২৪ রানে ৬ উইকেট তুলে নিয়ে ওয়ানডেতে ইংলিশ বোলারদের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গড়েন তিনি। তা সামলানোর চেষ্টা ছিল সূর্যকুমার যাদব, রবীন্দ্র জাদেজা, হার্দিক পান্ডিয়া আর মোহাম্মদ শামির। তবে তাদের কেউই ৩০ এর ঘরেও যেতে পারেননি। ফলে ভারত মুখ থুবড়ে পড়ে ১৪৬ রান তুলেই। আর ১০০ রানের জয় নিয়ে ইংল্যান্ড সিরিজে ফেরায় ১-১ সমতা।
ইংল্যান্ডের এই জয়ের ফলে সিরিজের শেষ ম্যাচটা অঘোষিত ফাইনালে পরিণত হয়েছে। আগামী রোববার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে সিরিজের শেষ ম্যাচে মাঠে নামবে দুই দল।
এনইউ