ইতিহাস গড়তে ১১৯ রান প্রয়োজন ছিল ইংল্যান্ডের। 'বাজ বলের' বারোটা বাজাতে ভারতের প্রয়োজন ছিল ৭ উইকেট। এজবাস্টন টেস্টের পঞ্চম দিনে মাত্র ঘণ্টা দেড়েক ব্যাটিং করেই সেই ১১৯ রান তুলে নিয়েছে স্বাগতিকরা। জো রুট আর জনি বেয়ারস্টোর বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে এদিন আর কোনো উইকেট না হারিয়েই জয়ের বন্দরে পৌঁছে গেছে ইংলিশরা। ৭ উইকেটের জয় পাঁচ ম্যাচ সিরিজ শেষ হয়েছে ২-২ সমতায়।

ম্যাচ জিততে ইংল্যান্ডের সামনে পাহাড়সম ৩৭৮ রানের লক্ষ্য ঝুলিয়ে দিয়েছিল ভারত। অন্য যেকোনো দলের জন্যই এই লক্ষ্য তাড়া করা অসম্ভব প্রতীয়মান হওয়াই স্বাভাবিক, তবে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম-বেন স্টোকসের ইংল্যান্ডের ধাতই এখন অন্যরকম। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে অসম্ভবকে নিত্য সম্ভব করে চলেছে দলটি।

এই তো কিছুদিন আগেই নিউজিল্যান্ডকে তিন টেস্ট সিরিজে ঘরের মাঠে ধবলধোলাই করেছে ইংল্যান্ড। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে নড়বড়ে ব্যাটিংয়ের পর কিছুটা শঙ্কার মেঘ উঁকি দিয়েছিল ইংল্যান্ডের ভাগ্যাকাশে, তবে সব অনিশ্চয়তা দূরে ঠেলে ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে নিজেদের জাত চিনিয়েছে নতুন ইংল্যান্ড।

আরও পড়ুন >> ভারতকে ধসিয়ে রেকর্ডগড়া জয়ের পথে ইংল্যান্ড

নিজেদের ১৫০ বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে এর আগে কখনোই ৩৫৯ রানের বেশি তাড়া করে টেস্ট জেতা হয়নি ইংল্যান্ডের। ভারতের বিপক্ষে এই রেকর্ডটিকে নতুন করে লিখল বেন স্টোকসের ইংল্যান্ড। টেস্ট ইতিহাসে টানা তিন ম্যাচে ২৫০+ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জেতার রেকর্ড গড়ে এই টেস্টে এসেছিল ইংলিশরা। তাই নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড করে ভারতকে উড়িয়ে দেওয়া মোটেও অসম্ভব ছিল না তাদের জন্য।

রুট-বেয়ারস্টোর আগের দিনের ১৫০ রানের অবিচ্ছিন জুটিকে শেষ দিনেও টলাতে পারেনি ভারত। উল্টো শেষদিনে ক্ষুরধার ব্যাটিং করেছেন এই দুই ব্যাটসম্যান। শেষ পর্যন্ত তাদের ৩১৬ বলে ২৬৯ রানের অবিস্মরণীয় জুটিতেই জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড। রুট ১৭৩ বলে ১৪২ এবং বেয়ারস্টো ১৪৫ বলে ১১৪ রানে অপরাজিত থেকে ইংল্যান্ডের বিজয় কেতন উড়িয়ে তবেই মাঠ ছেড়েছেন। এই টেস্টের দুই ইনিংসেই শতকের দেখা পেলেন ক্যারিয়ার সেরা ফর্মে থাকা বেয়ারস্টো, প্রথম ইনিংসে তার ১০৬ রানের লড়াকু ইনিংসে ভর করেই ফলো অনের শঙ্কা এড়িয়েছিল স্বাগতিকরা।

আরও পড়ুন >> ধোনির মতো করতে পারেন ‘কড়কনাথ’ মুরগির চাষ, আয় কোটি টাকা

এজবাস্টন টেস্টের শুরুটা দারুণ হয়েছিল ভারতের। ঋষভ পন্ত (১৪৬) এবং রবীন্দ্র জাদেজার (১০৪) শতকে ৪১৬ রান তুলেছিল সফরকারীরা। সেই রান টপকাতে নেমে ভারতের বোলিং তোপে খেই হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। বেয়ারস্টোর শতকে কোনমতে ফলো অন এড়ালেও ভারতের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে থেকে প্রথম ইনিংস শেষ হয় ইংল্যান্ডের। তবে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের মাত্র ২৪৫ রানে রুখে দিয়ে টেস্ট জয়ের সম্ভাবনা জাগায় স্বাগতিকরা। শেষ পর্যন্ত বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ভারতের দেওয়া ৩৭৮ রানের লক্ষ্যকে মামুলি বানিয়ে জয় ছিনিয়ে নিল ইংল্যান্ড।

গত বছর পাঁচ টেস্টের সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ড সফর করেছিল ভারত। তবে করোনার ধাক্কায় এক টেস্ট বাকি থাকতেই স্থগিত হয় সেই সিরিজ। সেই টেস্টটি এবারের সফরে খেলল দুই দেশ। সিরিজে ২-১ ব্যব ধানে এগিয়ে থেকে শেষ টেস্টে মাঠে নেমেছিল ভারত। তবে এজবাস্টন টেস্টে হেরে যাওয়ায় ২-২ সমতায় শেষ হলো সিরিজ। আর তাতেই ২০০৭ সালের পর প্রথমবার ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়ের অপেক্ষা বাড়ল ভারতের।

এইচএমএ/এটি