এক ইনিংসে ৬ ‘ডাক’, লজ্জার ইতিহাস বাংলাদেশের
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের শুরুটা বুঝি এর চেয়ে খারাপ হতেই পারত না বাংলাদেশের! অ্যান্টিগায় স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্টে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ১০৩ রানেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ছয় ব্যাটসম্যান ফিরে গেছেন রানের খাতা খোলার আগেই। তাতে একটা লজ্জার রেকর্ডও গড়ে ফেলেছে সফরকারীরা।
ডিউক বলের বোলিং নিয়ে অ্যালান ডোনাল্ডকে বাড়তি কাজ করতে দেখা গিয়েছিল মুস্তাফিজুর রহমানদের নিয়ে। বলে থাকে বাড়তি সেলাই। যে কারণে নতুন বলের সুইং থাকে বাড়তি সময় ধরে। তবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের অবশ্য সে সুইংয়ে সর্বনাশ হয়নি। সর্বনেশে শট সিলেকশনই প্রথম দিন শেষে খাদে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশকে।
বিজ্ঞাপন
টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে যার শুরুটা করেন মাহমুদুল হাসান জয়। কেমার রোচের করা অফস্টাম্পের বাইরে লেন্থ বলে খোঁচা দিয়ে তিনি ফেরেন দ্বিতীয় বলে। এক ওভার পর সেই রোচেরই শিকার নাজমুল হোসেন শান্ত, তার ব্যাট-প্যাডের মাঝের বিশাল ফাঁক গলে রোচের ফুলার লেন্থের বল গিয়ে আঘাত হানে স্টাম্পে।
শুরুতে দুই উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ বিপদের গন্ধ পেয়ে গিয়েছিল। মুমিনুল হকের অবিমৃষ্যকারী এক শটে ষষ্ঠ ওভারে বিপদটা আরও বাড়ে বাংলাদেশের। জেইডেন সিলসের অফস্টাম্পের বাইরে গুড লেন্থে করা বল তাড়া করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন সদ্য সাবেক বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক। উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত তিন জনই বিদায় নিয়েছেন শূন্য হাতে।
টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানই খুলতে ব্যর্থ রানের খাতা, লোয়ার মিডল অর্ডারে নুরুল হাসান সোহান আর দুই টেইল এন্ডার মুস্তাফিজুর রহমান আর খালেদ আহমেদও ধরেছেন তাদের দেখানো পথই। এদের মধ্যে নুরুল বিদায় নিয়েছেন আবার টপ অর্ডারের মতো নিজের বাজে শট বাছাইয়ের দোষেই। কাইল মেয়ার্সের প্রায় স্টাম্পে থাকা বলে তিনি শট অফারই করেননি, ফলে বল গিয়ে আঘাত হানে তার প্যাডে, এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন তিনি।
১১ ব্যাটসম্যানের ছয় জনই খুলতে পারেননি রানের খাতা। টেস্ট ইতিহাসে এমন ঘটনা দেখা গিয়েছে গতকালসহ ৭ বার। এই তালিকায় দল আছে ৫ টি। ১৯৮০ সালে এই ‘কীর্তির’ প্রথম শিকার হয় পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এরপর ১৯৯৬ সালে ভারতের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার ছয় ব্যাটসম্যান ফেরেন শূন্য হাতে। চলতি শতাব্দিতে প্রথমবার এই ‘কীর্তি’ গড়ে বাংলাদেশ। ২০০২ সালে ঢাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই ছয় ব্যাটসম্যান রানের খাতা খোলার সুযোগ পাননি বাংলাদেশের, সেই ইনিংসে ৮৭ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
এরপর ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারত, আর ২০১৮ সালে দুবাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ড এই ঘটনার জন্ম দেয়। চলতি বছর এই কীর্তি বাংলাদেশই গড়েছে দুই বার। গেল মাসে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশের ছয় ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন ‘গোল্লা’ নিয়ে। রেকর্ডটা গড়া হয়ে গিয়েছিল তখনই। পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত কিংবা নিউজিল্যান্ড, কারোই যে একাধিকবার ৬ জনের শূন্য রানে আউট হওয়ার ঘটনা নেই!
এরপর গতকাল আবারও বাংলাদেশ ঘটাল এই ঘটনা। তাতে নিজেদের লজ্জার রেকর্ডটার পরিধিই আরেকটু বাড়াল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। চলতি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বিতীয় বার বাংলাদেশ শিকার হলো এই ‘কীর্তির’, বাংলাদেশ টেস্ট দলের জন্য যা দুশ্চিন্তার বিষয়ই বটে!
এনইউ