অতোগুলো ট্রফি কিভাবে নিয়ে যাবেন?

-এমন প্রশ্নের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না সাইখ ইমতিয়াজ শিহাব। রংপুর শিশু নিকেতন স্কুলের অধিনায়ক মুখে লাজুক হাসি নিয়ে জানান, ব্যাগে করে বাড়িতে নেবেন নিজের অর্জিত ট্রফিগুলো। তবে ঢাকা থেকে ফিরতে চান ট্রেনে। কিন্তু তিনি একা নন, পুরো চ্যাম্পিয়ন দল ট্রফি নিয়ে উদযাপন করে ফিরতে চান নিজেদের প্রিয় স্কুলে।

এটা তো সম্ভব নয়, চাইলেই পুরো দলের ওতোগুলো টিকিট পাওয়া দুষ্কর। সে সব যেন বুঝতে নারাজ শিহাব, দলীয় কোচ আকাশের কাছে দাবি, দাঁড়িয়ে হলেও ট্রেনেই যাবেন।

বয়সটা সবে ১৪ ছুঁয়েছে। শিহাবকে শুধু বয়সের মানদণ্ডে আটকে রাখা যাবে না। স্কুল ক্রিকেটে নিজের দল রংপুর শিশু নিকেতনকে চ্যাম্পিয়ন করতে যা যা প্রয়োজন, তার পুরোটাই করেছেন এই লেগ স্পিনার। কব্জির জাদুতে বাজিমাত করে নিজের দলকে চ্যাম্পিয়ন করেই ক্ষান্তি যাননি, ফাইনাল সেরার পুরস্কারের সঙ্গে জিতেছেন টুর্নামেন্ট সেরা আর সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকের ট্রফি।

এবার আরো দূরে চোখ শিহাবের। বাংলাদেশ দলে আক্ষেপে পরিণত হওয়া লেগ স্পিনারের জায়গায় নিজেকে বসাতে চান স্কুল ক্রিকেটের এবারের আসতে ৩৩ উইকেট নেওয়া এই ক্ষুদে ক্রিকেটার। 

সোমবার নারায়ণগঞ্জের শামসুরজোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে দাঁড়িয়ে শিহাব বলছিলেন, ‘মূলত চেষ্টা জাতীয় দলে খেলা। যেহেতু বাংলাদেশ দলে লেগ স্পিনার নাই আমি নিজেকে ওই ভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। যেটা আমার এখন আছে আমি ওই গতিতে এগিয়ে যেতে চাই। আমি আরো ভালো করতে চাই। আসলে ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা আমি একজন বড় মানের লেগ স্পিনার হব।’

এই ১৪ বছর বয়সেই বোলিংয়ের চারটি মৌলিক বিষয় আয়ত্ত করে ফেলেছেন। লেগ স্পিন, গুগলি, টপ স্পিন সঙ্গে স্লাইডারেও বেশ দক্ষ শিহাব। ফাইনালসহ চার ম্যাচে নিয়েছেন ৫টি করে উইকেট। কব্জির ভেলকিতে এক ম্যাচে বাগিয়েছেন ৮ উইকেট।

এই লক্ষ্য নাকি আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ অবশ্যই ভালো। শুরু থেকেই লক্ষ্য ছিল আমি হাইয়েস্ট উইকেট টেকার হব। মিশন ছিল প্রত্যেকটা ম্যাচ ভালো খেলব, প্রত্যেকটা ম্যাচে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হব, প্রত্যেকটা ম্যাচে নিজের সেরাটা দেব। ইনশাআল্লাহ্‌ আমি পেরেছি।’

ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি বাদ দিলেও ব্যক্তিগত ৩টি ট্রফি নিজের করে নিয়েছেন শিহাব। সাকুল্য এবারের টুর্নামেন্টে একাই বাগিয়েছেন ৭টি ট্রফি। তবে ক্রিকেটে পারদর্শী শিহাব পড়াশুনোতে একটু ডানপিঠে। স্কুল রোল নাম্বার ৩৭ তার। এর কারণ ব্যাখ্যায় জানালেন, বই-খাতার থেকে বাইশ গজেই মনোযোগ বেশি দেন। এর সমর্থন অবশ্য পরিবার থেকেই পান তিনি।

আফগানিস্তানের লেগ স্পিনার রশিদ খানকে আইডল মানা শিহাব বলেন, ‘ফ্যামিলি থেকে বাবা, মা, আত্নীয়স্বজন সবাই বলেছিল, তুমি পারবা শিহাব, তুমি সবসময় চেষ্টা করবা, ভালো করে খেলবা, তুমি বড় পর্যায়ে যাবা৷ তুমি টিমের জন্য খেলে নিজের জন্য খেল।’

মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়কে ১০৩ রানের লক্ষ্য দিয়ে ৪৩ রানে গুটিয়ে দেয় শিশু নিকেতন। এ ম্যাচেও পাঁচ উইকেট নেন শিহাব। তার অনবদ্য পারফরম্যান্স নজর কেড়েছে জাতীয় দলের নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমনের। আলাদা করে ডেকে শিহাবের সঙ্গে কথাও বলেছেন সুমন। 

স্কুল ক্রিকেটে অংশ নেওয়া প্রায় ৭ হাজার ক্রিকেটারদের মধ্য থেকে ১৫ জনের বিশেষ একটি টিম করা হবে, সে দলের শুরুর দিকেই শিহাবের নাম আছে বলা জানালেন, নির্বাচকের দায়িত্বে থাকা এক সদস্য। 

এভাবেই হয়তো এগিয়ে চলবে শিহাবের পথচলা। তার হাত ধরেই কি ঘুচবে জাতীয় দলের লেগ স্পিনের আকাল? সে প্রশ্ন তোলা থাকল আগামীর জন্য!

টিআইএস/এটি