বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সবশেষ পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক বসেছিল গত ২ জুন। সেই বৈঠকের এজেন্ডায় ছিল ক্রিকেটের অবকাঠামো উন্নয়ন। প্রান্তিক বা তৃণমূল পর্যায়ের ক্রিকেট উন্নয়নে বেশ সরব বিসিবি। আগামী ১৯ জুলাই বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেছে বোর্ড। সেখানে আলোচনার সিংহভাগে থাকবে রিজিওনাল ক্রিকেট প্রসঙ্গ। বিসিবি যেখানে তৃণমূল ক্রিকেট উন্নয়নের তাগিদ দিচ্ছে, সেখানে যশোরে লিগ চলছে চরম অব্যবস্থাপনায়।

গত ২৮ মে যশোরে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগ। সেই লিগের একটি ম্যাচের ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন জাতীয় দলের সাবেক পেসার সৈয়দ রাসেল। নিজ জেলা যশোরের ক্রিকেটের অব্যবস্থাপনার কথা জানিয়ে শেয়ার দেওয়া সেই ভিডিওতে দেখা যায়, মাঠে খেলা চললেও সেখানে অবাধে বিচরণ গরু-ছাগলের। দেখে যেন মনে হচ্ছে, মানুষের সঙ্গে বুঝি গরুও ক্রিকেট খেলতে মাঠে নেমেছে! সেগুলোকে সরিয়ে দেওয়ার কোনো তাগিদও নেই!

ভিডিওর সঙ্গে একটি বার্তা জুড়ে দিয়ে রাসেল লিখেছেন, ‘লজ্জা লাগছে তবুও বলি, এটা হচ্ছে যশোর দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগ-এর কোন একটা ম্যাচ এর ভিডিও চিত্র। এই হল আমাদের যশোর এর ক্রিকেটের হাল। দেখার বা কৈফিয়ত নেওয়ার কেউ নেই।’

অভিযোগের সত্যতা জানতে যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব কবীরের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঢাকা পোস্ট। মুঠোফোনে আলোচনায় এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। সঙ্গে এসব মিথ্যাচার বলে দাবি করেন ইয়াকুব।

ইয়াকুব বলেন, ‘না, না এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। এগুলো প্রোপাগান্ডা। গরু-ছাগল ঢোকার কোনো কায়দা (উপায়) নেই। সেখানে তো ডাবল গেট করা আছে। অনেক সময় দেখা যায় খেলা না থাকলে অনেকে ঘাস কেটে নিয়ে যায় গরু-ছাগলের জন্য, খেলার সময় এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই।’

সৈয়দ রাসেলের করা ভিডিও চিত্রের কথা জানালে কিছুটা নমনীয় হন সাধারণ সম্পাদক। এবার তুলে ধরলেন নিজের অবস্থান আর অপারগতার কথা। সঙ্গে মাঠ স্বল্পতা আর বাজেট ঘাটতির কথা জানালেন।

ইয়াকুব বলছিলেন, ‘আমাদের সেকেন্ড ডিভিশন টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছে গত ২৮ তারিখ। এখানে দুইটা পার্ট আছে। একটা টায়ার-ওয়ান আর টায়ার-টু। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি টুর্নামেন্টে ১৬ টার বেশি দল রাখা যাবে না, যেহেতু আমাদের সেকেন্ড ডিভিশনে ২৮টি দল, সেজন্য আমরা ১৬টা টায়ার-ওয়ানে রেখে বাকি ১২টা দল টায়ার-টু করে দিয়েছি। মূল স্টেডিয়ামে টায়ার ওয়ান এর খেলাগুলো চলছে এবং উপশহর মাঠে টায়ার-টু এর ম্যাচগুলো হচ্ছে।’

সঙ্গে যোগ করেন ইয়াকুব, ‘আমাদের সেকেন্ড ডিভিশনে দুইটা টায়ার মিলিয়ে সর্বমোট ২৮ দল। যেখানে ৬০টি মতো ম্যাচ আয়োজন করতে হয়। এগুলো সোজা কথা নয়। এর সঙ্গে ক্রিকেটে যশোর প্রিমিয়ার লিগ, ফার্স্ট ডিভিশন, থার্ড ডিভিশনের মতো টুর্নামেন্ট তো আছেই।’

সৈয়দ রাসেলের সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসলো আরো অনিয়মের খবর। সাবেক এই পেসারের অভিযোগ, প্রিমিয়ার লিগে তার দলের ম্যাচ ছিল পঞ্চাশ ওভারের। ম্যাচের আগে খানিক বৃষ্টিতে সে ম্যাচ খেলতে হয় কুঁড়ি ওভারে। রাসেলের দাবি, সামান্য পিচ কাভার দিয়ে উইকেট ঢাকা গেলে পুরো ম্যাচটিই খেলা যেত। যশোর ক্রীড়া সংস্থার পিচ ঢাকার ব্যবস্থা নেই জানিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

একই সঙ্গে অভিযোগ আছে, উপশহরের যে মাঠে ম্যাচ চলাকালীন গরু চরতে দেখা গেছে, সেই মাঠে খেলা চলাকালীনই হয় বিআরটিএ-এর বিভিন্ন ড্রাইভিং পরীক্ষা। এ বিষয়েও নীরব ভূমিকায় ক্রীড়া সংস্থা।

এমন অভিযোগে সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুবের ব্যাখ্যা, ‘এতগুলো খেলা চলছে একটু ভুলভ্রান্তি তো হতেই পারে। কিন্তু করোনার শুরুর সময় যখন সারা বাংলাদেশ খেলা বন্ধ, তখন যশোরে খেলা চলেছে এবং সবগুলোই আমরা শেষ করেছি। এখন যারা এগুলো নিয়ে কথা বলছে, তারা তো বলে না যে ওই অসময়ে কিভাবে আমরা টুর্নামেন্টগুলো আয়োজন করেছি? যশোরই একমাত্র জেলা যেখানে সবগুলো লিগ নিয়ম করে মাঠে গড়ায়। তারা কিন্তু এগুলো নিয়ে কথা বলে না।’

সবশেষ ইয়াকুব অবশ্য দুষেছেন বিসিবির নীতিকেও। যেখানে সারাবছর অন্যান্য খেলাধুলার থেকে ক্রিকেট নিয়ে কাজ করতে হলেও বোর্ডে নিজেদের ভালোমন্দ বা দাবির কথাগুলো তুলে ধরতে পারেন না তারা।

টিআইএস/এইচএমএ