ক্রীড়াঙ্গনের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার। অন্য সবার চেয়ে আজকের (বুধবার) দিনটি একটু আলাদাই ছিল মোজাফফর হোসেন পল্টু ও এনায়েত হোসেন সিরাজের জন্য। দুই ভাই একই দিন এই পুরস্কার গ্রহণ করলেন। দুই ভাই-ই সংগঠক হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন। পল্টু ২০১৩ সালে ও সিরাজ ২০১৪ সালের জন্য পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়েছেন।

বাংলাদেশের বর্ষীয়ান ক্রীড়া সংগঠকদের মধ্যে অন্যতম মোজাফফর হোসেন পল্টু। স্বাধীনাত্তোর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রতিষ্ঠাতাকালীন সাধারণ সম্পাদক তিনি। ক্লাব ও জাতীয় পর্যায়ে অসামান্য অবদান থাকলেও এর স্বীকৃতি পেলেন ৫০ বছর পর। বেশ বিলম্বিত হলেও দুই ভাই এক দিনে পুরস্কার পাওয়ায় ভিন্ন রকম অনুভূতি পল্টুর, ‘এই বয়সে এসে পুরস্কার পেয়ে ভালোই লাগছে। হয়তো আগেও পেতে পারতাম। দুই ভাই একই দিন পুরস্কার পেলাম এটার অনুভূতি অন্য সবার চেয়ে আলাদা। হয়তো বিধাতা এটিই লিখে রেখেছিলেন।’ 

ছোট ভাই সিরাজ সংগঠক হিসেবে পুরস্কার পেলেও খেলোয়াড় হিসেবেও এগিয়ে রাখলেন জ্যেষ্ঠ ভাই, ‘আমি মূলত সংগঠকই। সিরাজ কিন্তু দারুণ খেলোয়াড়ও ছিল। পাকিস্তান আমলেই সে প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটার ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় ব্লু পেয়েছে স্বাধীনতার আগে।’

ছোট ভাই সিরাজ দেশের বাইরে যাবেন তাই একটু দ্রুতই পুরস্কার প্রদান স্থল ত্যাগ করেছেন। তার এই ক্রীড়ঙ্গনে আসার পেছনে বড় ভাই পল্টুর অবদানকেই বেশি দিলেন, ‘পল্টু ভাই পঞ্চাশের দশকে শান্তিনগর ক্লাব করেছেন। সেই শান্তিনগর ক্লাব না করলে আমার মতো আরো অনেক তরুণরাই হয়তো ক্রিকেট ও ক্রীড়াঙ্গনে আসা হতো না। দুই ভাই একই দিনে ক্রীড়াঙ্গনে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি পেলাম এর অনুভূতি অন্য সব কিছুর চেয়ে আলাদা।’

তরুণ প্রজন্মের কাছে এনায়েত হোসেন সিরাজের পরিচয় ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক হিসেবে। ক্রিকেটার হিসেবেও তার ছিল বর্ণিল ক্যারিয়ার। ঘরোয়া ক্রিকেটে ৯ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব রয়েছে তার। ঢাকা লিগে দলকে চ্যাম্পিয়নও করিয়েছেন কয়েকবার। ১৯৯১ সাল থেকে ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক ছিলেন, পুরুষ ও মহিলা উভয় ক্রিকেট নিয়ে কাজ করেছেন। 

পল্টু প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক হলেও পরবর্তীতে রাজনীতিতে বেশি ব্যস্ত হওয়ায় ক্রিকেটে আর সেভাবে সময় দিতে পারেননি। তবে ছোট ভাই সিরাজ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত তিন দশকের বেশি সময়। ক্রিকেটেই তার জীবন বলে উল্লেখ করেন, ‘নিজে ক্রিকেটার ছিলাম, প্রধান নির্বাচকও ছিলাম। বিভিন্ন কমিটির চেয়ারম্যান ছিলাম। ক্রিকেটের প্রায় সব জায়গায় কাজ করা হয়েছে। বাকি সময়টুকু ক্রিকেটের সঙ্গেই থাকতে চাই।’

দুই ভাই শুধু ক্রিকেট বোর্ড নয় ক্লাব সংগঠকও। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ক্লাব ওয়ারী ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন পল্টু। এখন দীর্ঘদিন উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য। দেশের আরেক প্রাচীন ক্লাব আজাদ স্পোর্টিংয়ের দীর্ঘদিন সভাপতির দায়িত্বে সিরাজ। দুই ভাই নীতির ক্ষেত্রে অবিচল। ফলে অন্য ক্লাবগুলোর তুলনায় এই দুই ক্লাব এখনো স্বাতন্ত্র্যতা বজায় রেখে চলছে।

 

দুই ভাইয়ের জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পাওয়ার খাতায় আজ নাম লিখিয়েছেন ইমতিয়াজ সুলতান জনি ও কাজী মাহাতাব উদ্দিন। জনির বড় ভাই এহতেশাম সুলতান হকির জন্য পুরস্কার পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে আর মাহাতাব উদ্দিনের ছোট ভাই কাজী রাজিবউদ্দিন আহমেদ চপল ২০১৬ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার গ্রহণ করেন। সাবেক ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও তার বড় ভাই ভারত্তোলক আবুল কালাম আজাদও জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। জনিদের মতো তারাও ভিন্ন ভিন্ন অনুষ্ঠানে। সেই হিসেবে পল্টু ও সিরাজ বিলম্ব পুরস্কার পেলেও একই দিন দুই ভাই পুরস্কার গ্রহণ করায় ভিন্ন এক মাত্রা যোগ করলেন। 

এজেড/এটি