ভারতের ইতিহাসে খুব বেশি পেসার বোলার আসেননি যারা ১৫০ কিলোমিটার গতিতে টানা বোলিং করতে পারেন। তাই তো আইপিএলের গত আসরে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে যখন এক ওভারে টানা ৫ বলে  ১৫০ কিলোমিটার বা তার বেশি গতি তুললেন সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের এক তরুণ ভারতীয় পেসার, তখন দর্শক থেকে বোদ্ধা সবাই যেন এক মুহূর্ত থেমে তাকে পরখ করলেন।

তরুণ ওই পেসারের নাম উমরান মালিক। কাশ্মীরে জন্ম নেওয়া উমরানের আইপিএল অভিষেক হয়েছিল ২০২১ সালে, মাত্র ৩ ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন সেবার, উইকেট ঝুলিতে এসেছিল ২ টি। গত আসরে মূলত তার উইকেট নেওয়ার সক্ষমতার চেয়ে গতির জন্যই নজর কেড়েছিলেন এই পেসার।

তবে ওই ৩ ম্যাচই যে যথেষ্ট ছিল তার প্রতিভার ঠাহর পাওয়ার জন্য!  মাত্র ৩ ম্যাচ খেলা ২১ বছর বয়সী উমরানকে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ টিম ম্যানেজমেন্ট মেগা অকশনে যেতে দেয়নি, এই রত্নকে সযত্নে রেখে দিয়েছিল নিজেদের কাছে। হায়দ্রাবাদের এই আস্থার প্রতিদান এবারের আসরে দিচ্ছেন দলটির তুরুপের তাস হয়ে।

এবারের আসরে এখন পর্যন্ত ৮ ম্যাচ খেলে উইকেট তুলে নিয়েছেন ১৫টি। গতিময় বাউন্সার, নিখুঁত ইয়র্কারে ব্যাটারদের বুকে কাঁপন ধরাচ্ছেন উমরান মালিক। তাকে ঠিক কিভাবে খেলা উচিত, সেটাই এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না আইপিএলের অভিজ্ঞ ব্যাটাররাও, তাই তো কখনো তার বাউন্সারে ‘ডাক’ করছেন তো কখনো তার বিদ্যুৎ গতির ইয়র্কারে ধরাশায়ী হচ্ছেন।

গত বুধবার গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে আইপিএলে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট পেলেন। মাত্র ২৫ রান দিয়ে এর আগে জাতীয় দলের হয়ে কোন অনভিষিক্ত ভারতীয় বোলারের এতি দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগার। গুজরাটের বিপক্ষে তার নেওয়া ৫ উইকেটের চারটি উইকেটই পেয়েছেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের স্টাম্প উড়িয়ে দিয়ে। এর থেকে পরিষ্কারভাবে বুঝা যায়, আপাতত তার গতির ঝড় মোকাবিলা করার কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না ব্যাটাররা।

গত বছর আইপিএলে অভিষিক্ত হওয়া ২২ বছর বয়সী উমরানের ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিষেকেও হয়েছে ২০২১ সালে। এখন পর্যন্ত মাত্র ১টি লিস্ট এ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। অথচ এরই মধ্যে তাকে ভারতের জাতীয় দলে দেখতে চাইছেন অনেকে। ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটার সুনীল গাভাস্কার তো এই বছরে ভারতের ইংল্যান্ড সফরের দলে দেখতে চান উমরানকে। ধারাভাষ্যকক্ষে গাভাস্কারের পাশে ইংলিশ ক্রিকেটার কেভিন পিটারসেনও তাতে সায় দিয়েছেন।

ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে গুজরাটের বিপক্ষে ৫ উইকেট নেওয়ার পর গ্যালারি ভর্তি দর্শক শুধু তার নামই জপ করছিলেন। ‘উমরান, উমরান’, ‘মালিক, মালিক’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠছিল পুরো স্টেডিয়াম। উমরানকে নিয়ে দর্শকদের এই উন্মাদনা দেখে একটা বিষয় নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, জাতীয় দলের হয়ে তার অভিষেকের অপেক্ষায় শুধু গাভাস্কার-পিটারসেনই নয়, পুরো ভারতই এখন তাকে জাতীয় দলের জার্সিতে দেখার জন্য মুখিয়ে আছে।

এইচএমএ/এটি