দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছিলেন ক্রিকেটার মোশাররফ হোসেন রুবেল। তবে আজ বিকেলে সব লড়াইয়ের ঊর্ধ্বে উঠে গেলেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার। মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় মারা গেছেন তিনি। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। রুবেলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক জাহিদুর রহমান চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন।

জাহিদুর রহমান জানান, আজ বাসাতেই ছিলেন মোশাররফ রুবেল। সেখানেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় তার। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪০ বছর।

মোশাররফ রুবেল শেষ কিছুদিন ভর্তি ছিলেন রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। মাঝে তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেই খবর ভুল প্রমাণ করে আগের চেয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গিয়েছিলেন রুবেল। কিন্তু এবার আর শেষ রক্ষা হলো না। না ফেরার দেশে চলেই গেলেন জাতীয় দলের সাবেক এই ক্রিকেটার।

গত বছরের অক্টোবরে শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় আইসিউইতে নেওয়া হয়েছিল ক্রিকেটার মোশাররফ হোসেন রুবেলকে। সেখান থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যান তিনি। সবশেষ গত ২০ ফেব্রুয়ারি ভারত থেকে ডাক্তার দেখিয়ে আসেন। তবে দেশে ফিরে আবার বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এজন্য কিছুদিন পর আবার হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয় রুবেলকে।

২০১৯ সালে মস্তিষ্কে টিউমার ধরা পড়লে মাঠ থেকে ছিটকে পড়েন রুবেল। চিকিৎসা নিয়ে প্রায় সেরে উঠলেও নতুন করে টিউমার ধরা পড়ে তার মস্তিষ্কে। নতুন করে টিউমার ধরা পড়ায় শঙ্কায় পড়ে যায় রুবেলের জীবন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা এই ক্রিকেটার সিঙ্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসা করান। 

ভালো না হওয়ায় গত বছরের নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারতের একটি হাসপাতালে আবারও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রুবেলের ব্রেন টিউমার অপসারণ করা হয়। তবে তাতেও খুব একটা উন্নতি হয়নি।

বয়সটা কেবল ৪১-এ পড়েছে। জাতীয় দলের পাঠ চুকালেও ঘরোয়া ক্রিকেটের ক্যারিয়ারটা আরও সমৃদ্ধ করার সুযোগ ছিল রুবেলের সামনে। অথবা জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন সতীর্থের মতো কোচিংয়েও থিতু হতে পারতেন তিনি। কিংবা বসতে পারতেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কোনো চেয়ারে। যেমনটি বসেছেন শাহরিয়ার নাফীস, আব্দুর রাজ্জাকরা। কিন্তু গত তিনটি বছর রুবেল কেবল ছুটেছেন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে। কোনোকিছুতে থিতু হওয়ার সুযোগই পেলেন না তিনি।

২০০৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলে অভিষেক হয় রুবেলের। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে সেই অভিষেকের পর অবশ্য লাল সবুজের জার্সি গায়ে ক্যারিয়ারটা খুব বড় হয়নি। সেই সিরিজে তিন ম্যাচ খেলার পর আর কেবল দুটো ম্যাচেই খেলতে পেরেছেন তিনি। পাঁচ ম্যাচের জাতীয় দলের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটা তিনি খেলেছেন ২০১৬ সালে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে। এর ঠিক আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে এক ম্যাচ খেলে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করেছিলেন তিনি। আফগানদের বিপক্ষে সে ম্যাচে ২৪ রান খরচায় তিনি তুলে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট।

দেশের হয়ে ৫টি ওয়ানডে ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়েছেন রুবেল। ২০০১ সালে অভিষেকের পর ১১২ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে তিনি শিকার করেছেন ৩৯২ উইকেট। ঘরোয়া ক্রিকেটে দক্ষতার সঙ্গে খেলেছেন অনেক বছর।

এনইউ/এটি